Writing

সফলতার মানদন্ড: কুরআন-ই সমাধান

সফলতার মানদন্ড কি!?

রাস্তার দ্বারে চটপটি বিক্রেতার মাসিক আয় লক্ষাধিক। এরকম সহস্র উদাহরণ উপস্থাপন করা যাবে৷ আবার অনেক আছে ক্লাস নাইন-টেন এ থাকতেই প্রবাসে চলে গেছে। মাস শেষে তাদের উপার্জন সত্তর- আশি হাজার৷ অথচ, তাদের শিক্ষা নাই, কোন সম্মান নাই,খুব বেশি ফেইম নাই । এখন— এককথায় তাদেরকে কি সফল বলা যাবে?

উত্তর ‘না’ হওয়াটাই অধিক যৌক্তিক তারমানে দাঁড়ায়— মাস শেষে কোটি টাকা উপার্জন করলেও একজন মানুষ সাফল্য নামক ছাদে উড্ডীন হতে পারেনা।

অত্যাধিক সম্মানকে অনেকেই সাফল্যের সেরা মানদন্ড মনে করেন। কিন্তু খটকা এখানেও আছে। ধরুন, সমাজের উচ্চপদস্থ সম্মানিত কোন ব্যক্তির যদি পারিবারিক শান্তি না থাকে, সহজে বলা যায় যে— স্ত্রী-সন্তানরা যদি অবাধ্য হয়, তাঁর কোন কথা না শুনে তাহলে কি এই ব্যক্তিকে সফল বলা যাবে?

উত্তর পূর্বের মতোই।

ফেসবুকে লাখো ফলোয়ার্স কিংবা ইউটিউবের মিলিয়ন ভিউ যে সাফল্যের ধারক নয় তা মীরাক্কেলের মুখপাত্র মীর এর একাধিকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ডেল কার্নেগীর রহস্যজনক মৃত্যু, সালমান শাহ এর অমিমাংসিত মৃত্যু রহস্য কিংবা সর্বশেষ বলিউড এক্টর সুশান্ত পাল এর আত্মহত্যা বারবার প্রমাণ করে সেলিব্রিটিজম মরিচীকা বৈ কিছু নয়।

তাহলে সাফল্য কোথায়! বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসরের এক বক্তব্যে বিষয়টি খুব সুন্দর করে ফুঁটে উঠে৷ তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকে মেটাফর হিসেবে উল্লেখ করেন৷ তিনি বুঝাতে চাইলেন যে— তিনি ও তাঁর বাকি ভাই বোন সবাই উচ্চশিক্ষিত। খুব ভালো পজিশনে আছেন৷ এখন তাঁর ‘মা’ সফল মা কি না! অথচ তাঁর মায়ের শিক্ষার দূর ক্লাস পাঁচ অথবা ছয়। মূলত, মানুষ হিসেবে তাঁর মা সফল কিনা এই প্রশ্নের উর্ধ্বে এটি বেশি গ্লোরিফাইড যে ‘মা’ হিসেবে তিনি নিঃসন্দেহে সফল৷

সহজিকরণ আমার কথা হচ্ছে— অনেক টাকা, সম্মান, পরিচিতি সফলতার মানদন্ড নয়৷ তাহলে সফলতার মানদন্ড কি!?

এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য বিশ্ব জাহানের আলোকবর্তিকা হিসেবে প্রেরিত মহাগ্রন্থ আল কুরআনের দিকে একটু দৃষ্টি দিতে হবে৷ আল্লাহ তায়ালা কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সাফল্য কি অথবা কারা সফল তা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে— আমার কাছে সাফল্যের মানদন্ড আলোচিত হয়েছে এরকম শ্রেষ্ট আয়াত বলে মনে হয় সুরা ‘আ’লার’ ১৪-১৬ নং আয়াতগুলো৷ কিছু ক্যারেক্টারিস্টিক্স এর কথা এখানে বর্ণিত হয়েছে। যেগুলো কেউ ওউন করলে দিনশেষে সে সফল। যদিও— অর্থকড়ির ঘাটতি, অসামান্য সম্মান কিংবা চোখজুড়ানো পরিচিতি নাও থাকে।

قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ
নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে শুদ্ধ হয়
وَذَكَرَ اسْمَ رَبِّهِ فَصَلَّىٰ
এবং তার পালনকর্তার নাম স্মরণ করে, অতঃপর নামায আদায় করে।
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
[৮৭ঃ১৪-১৬]

আল্লাহ বলেন — ❝সফল হয়েছে তারা, যারা নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে।❞ পরিশুদ্ধ করা মানে— যে নিজেকে শিরক, কুফর থেকে পরিচ্ছন্ন রেখেছে। সৎকাজ করছে, অসৎ কাজের বিরোধিতায় মত্ত। দিনশেষে সফল। পার্থিব সফলতা অর্জিত না হলেও সে মূল সাফল্যের চূড়ায় অবস্থান করছে। আবার, পার্থিব সাফল্য অর্জনের বিশাল সুযোগও রয়েছে। যে ভালো কাজ করে, ভালো কথা বলে, ভালো দিকে মানুষকে আহবান করে তার জন্য অমোঘ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জনসাধারণের মাঝে আল্লাহ ঢেলে দেন৷ অসংখ্য মানুষের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার থেকে আর বড় সফলতা কি হতে পারে!

পরের আয়াত তথা সুরা আ’লা এর ১৫ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ❝এবং আল্লাহর নাম স্বরণ করেছে, তারপর নামাজ আদায় করেছে।❞ সফল মানুষের দ্বিতীয় কোয়ালিটি এটি৷ সে আল্লাহকে স্বরণ করবে এবং নামাজ আদায় করবে। এই কাজের মাধ্যমে আখেরাতের অনিন্দ্য সাফল্য অর্জিত তো হবেই— পাশাপাশি দুনিয়াবী জীবনে থাকছে বিস্তৃত কল্যাণ। কি সেই কল্যাণ! কুরআনের আরেকটা আয়াতে চোখ বুলাক। আল্লাহ বলেন—
❝যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয়। জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই শুধু চিত্ত প্রশান্ত হয়।❞ [সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮]

الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।
[১৩ঃ২৮]

অর্থাৎ, আল্লাহর জিকির তথা তাঁকে স্বরণ রেখে জীবন কাটানোতে অন্তর প্রশান্ত হয়। একবার ট্রাই করেই দেখুন না! আল্লাহর জিকিরে সময় ব্যয় করুন, তাঁর দ্বীনের কাজে সময় ব্যয় করুন। আপনার অন্তর অনুভব করবে জান্নাতি অনুভূতি। আচ্ছা! প্রশান্ত অন্তর থেকে ভালো সফলতা কিছু আছে!? নেই। কারণ, সম্পদ, সম্মান বাহ্যিকভাবে অনেক কিছু দিলেও অন্তরের প্রশান্তি দিতে পারেনা।

بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا
বস্তুতঃ তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও,
وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।
[৮৭ঃ১৬-১৭]

১৬ ও ১৭ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা একটু সতর্ক করলেন। তিনি বলেন,
❝কিন্তু! তোমরা দুনিয়ার জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাকো। অথচ, আখেরাত উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী। ❞
দুনিয়ায় সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ভরপুর জীবন কাটাতে অনেকেই আখেরাত ভুলে যান। অথচ, এই স্বাচ্ছন্দ্য নিরর্থক ব্যাতিরেকে কিছু নয়। আসল প্রশান্তি তো আখেরাতে। নহরওয়ালা এবং সাহস্র নেয়ামতে ভরপুর জান্নাতে৷ এই জান্নাত অর্জনের জন্য যে জীবন কাটায় সে সফল। অবশ্যই, দুনিয়া ও আখেরাতে সফল। দুনিয়ার তার জন্য থাকছে আত্মিক প্রশান্তি, হয়তো থাকছে উচ্ছ পর্যায়ের সম্মান, সম্পত্তি। আবার আখেরাতে থাকছে— কোন অন্তর চিন্তা করতে না পারা নেয়ামতে ভরপুর জান্নাত৷ সফলতার সর্বোত্তম মানদন্ড তো এখানেই লুকায়িত। বাকিগুলো মোটিভেশনাল স্পিকারের মোটিভেশনেই সীমাবদ্ধ।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture