Q/AAbdullahil Hadi

বিপদ-সঙ্কট ও বিপর্যয় কি আমাদের কর্মফল না কি ভাগ্যের লিখন

আপাত দৃষ্টিতে আমাদের ভুলের কারণে বা আমাদের পাপের কারণে সৃষ্ট সমস্যা ও পেরেশানিকে আমরা আমাদের কর্মফল ভাববো নাকি আল্লাহর সিদ্ধান্ত (ভাগ্যের লিখন) ভেবে সে অবস্থার উপর সবর করব?

পৃথিবীতে যত বিপর্যয়, বালা-মুসিবত, পেরেশানী ও ক্ষয়-ক্ষতি সংঘটিত হয় তা অবশ্যই মানুষের কৃতকর্মের ফল। কারণ যখন মানুষ অন্যায়-অবিচার-পাপাচার করতে করতে সঠিক পথ থেকে অনেক দূরে সরে যায় তখন তার জীবনে নেমে আসে বিভিন্ন বিপদাপদ। সে পতিত হয় নানা সমস্যা ও সংকটের আবর্তে। এটা এ জন্য করা হয় যে, এতে করে যেন তার সুবুদ্ধির উদয় ঘটে এবং তওবা করে সঠিক রাস্তায় ফিরে আসে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ
“স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (সূরা রূম: ৪১)

আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, পৃথিবীতে যা কিছু ঘটেছে বা ঘটছে বা ঘটবে সবই মহান আল্লাহ তাঁর সীমাহীন ইলমে গায়ব বা পূর্বাপর জ্ঞানের আলোকে লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ রেখেছেন। পৃথিবীতে ভালো-মন্দ এমন কিছুই ঘটে না যা লওহে মাহফুযে লেখা নাই। এ বিশ্বাসকেই তকদীর (ভাগ্য লিপি) বলা হয়।

বিপদাপদ ও ক্ষতির সম্মুখীন হলে, আমাদের করণীয়:

আমাদের জীবনে ক্ষয়-ক্ষতি, অসুখ-বিসুখ, বালা-মসিবত ইত্যাদি যে কোন সমস্যা ও বিপর্যয় নেমে এলে আমাদের করণীয় হবে, আল্লাহ নিকট নিজেদের কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাওয়া, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা, তকদিরের প্রতি অবিচল বিশ্বাস পোষণ করা, আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা এবং ধৈর্যের পরিচয় দেয়া এবং আখিরাতে এর উত্তম বিনিময় আশা করা।

হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, মুমিন বান্দার জীবনে কোন ক্ষয়-ক্ষতি সাধিত হলে-এমন কি সে একটি কাটা বিদ্ধ হলেও-আল্লাহ তাআলা তার গুনাহ মোচন করেন এবং আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। এই পুরষ্কার কেবল ঈমানদারের জন্য নির্ধারিত; অন্য কারও জন্য নয়।

যেমন,

আবু ইয়াহিয়া সুহাইব ইবনে সিনান রা. থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

عَجَباً لأََمْرِ المُؤمنِ إنَّ أمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خيرٌ ولَيسَ ذلِكَ لأَحَدٍ إلاَّ للمُؤْمِن : إنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكانَ خَيراً لَهُ، وإنْ أصَابَتْهُ ضرَاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَهُ
“মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তারা আনন্দ দায়ক কিছু ঘটলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকর হয় আর কষ্টদায়ক কোন কিছু ঘটলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’’ [মুসলিম ২৯৯৯, আহমদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমি ২৭৭৭]

আবু সাঈদ রা. ও আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ
“মুসলিমকে যে কোনও ক্লান্তি, অসুখ, দু:চিন্তা, শোক এমন কি (তার শরীরে) একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করে দেন।” (সহীহুল বুখারী ৫৬৪২, মুসলিম ২৫৭৩)

তাছাড়া মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের জন্য মহা পুরস্কারের সুসংবাদ দিয়েছেন। (দেখুন, সূরা বাকারাহ ১৫৫ নং আয়াত)

সুতরাং আমাদের জীবনে ভালো কিছু ঘটলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং খারাপ কিছু ঘটলে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং হাসিমুখে আল্লাহর ফয়সালা প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না বা আল্লাহর প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ বা কু ধারণা পোষণ করা যাবে না। এটাই তকদিরের প্রতি বিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়।

আল্লাহু আলাম

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button