আসমাউল হুসনা – আল-ক্বাওয়ি
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে নিজেকে আল-ক্বাওয়ি – সর্বশক্তিমান, ক্ষমতাবান – বলেছেন নয়টি উপলক্ষে। একমাত্র আল-ক্বাওয়ির শক্তি সীমাহীন এবং অক্ষয়। তাঁকে দুর্বলতা পেয়ে বসে না এবং তাঁর শক্তিরও কোন ক্ষয় হয় না। তিনি সবকিছুকে প্রভাবিত করেন কিন্তু কিছুই তাঁকে প্রভাবিত করতে পারে না!
ক্বাওয়ি এর মূল এসেছে ق-و-ي থেকে থেকে, যা তিনটি প্রধান অর্থ নির্দেশ করে। প্রথম অর্থ শক্তিশালী হওয়া বা পর্যাপ্ত ক্ষমতা থাকা, দ্বিতীয় অর্থ হল দৃঢ়, শক্ত বা বলিষ্ঠ হওয়া এবং তৃতীয় অর্থ হল বিজয়ী হওয়া।
এই মূলটি কুরআনে ৪২ বার তিনটি উদ্ভূত রূপে এসেছে। এই রূপগুলির উদাহরণ হল بِقُوَّةٍ – বি কুওয়াতিন (“শক্তি/শ্রম সহ”) এবং لِّلۡمُقۡوِينَ -লিল-মুকউইন (“মরুভূচারীদের জন্য”)।
ভাষাগতভাবে, ক্বাওয়ি শব্দটি কুওয়া থেকে এসেছে, যা শক্তির বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করে। আল-ক্বাওয়ি হলেন পরম শক্তি; তাঁর শক্তির গুণাবলী কখনই হ্রাস পায় না এবং কখনই তাঁর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। আল-ক্বাওয়ির নিখুঁত শক্তি অপ্রতিরোধ্য, এবং আকাশ ও পৃথিবীতে কেউই তাঁর বশ্যতা স্বীকার না করে থাকতে পারেনা।
আল-ক্বাওয়ি নিজেই বলেছেন –
....وَكَفَى ٱللَّهُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ ٱلۡقِتَالَۚ وَكَانَ ٱللَّهُ قَوِيًّا عَزِيزًا
....যুদ্ধে মুমিনদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ প্রবল শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
[৩৩:২৫]
....كَفَرُواْ بِئَايَٰتِ ٱللَّهِ فَأَخَذَهُمُ ٱللَّهُ بِذُنُوبِهِمۡۗ إِنَّ ٱللَّهَ قَوِىٌّ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ
... তারা আল্লাহর আয়াতসমূহ অস্বীকার করেছে, ফলে তাদের পাপের কারণে আল্লাহ তাদেরকে পাকড়াও করেছেন। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী, কঠিন আযাবদাতা।
[৮:৫২]
আল-ক্বাওয়ি এবং আল্লাহর অন্যান্য নাম:
আল-জাব্বার, আল-ক্বাহার, আল-আজিজ এবং আল-ক্বাওয়ি সবই শক্তি, ক্ষমতা এবং আধিপত্যের নাম। আল্লাহর নাম আল-ক্বাওয়ি প্রায়শই তাঁর সুন্দর নাম আল-আজীজ (সর্বশক্তিমান) এর সাথে যুক্ত হয়। যারা সম্মানিত তাদের ছাড়া অন্য কারো জন্য এই শক্তি উপযোগী নয়। আল-ক্বাওয়ি তাঁর নিখুঁত শক্তি সম্মানজনক উপায়ে ব্যবহার করেন। এই সংমিশ্রণটি আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়াজল’-এর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় যখন তিনি তাঁর শক্তি এবং ক্ষমতা ব্যবহার করে অত্যাচারী ও অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসীদের সমর্থন করেন, এবং অত্যাচারীদের শাস্তি প্রদান করেন।
আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?
দৃঢ় বিশ্বাসী হন। আল্লাহ যেমন সর্বজ্ঞানী, তিনি আপনাকেও জ্ঞানী দেখতে পছন্দ করেন এবং তিনি যেমন ন্যায়পরায়ণ, তিনি আপনাকেও ন্যায়পরায়ণ দেখতে পছন্দ করেন, তেমনি আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়াজল একজন মুমিন হিসেবে আপনার মধ্যে কুওয়ার (قُوٌَ) গুণ দেখতে পছন্দ করেন।
রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
‘শক্তিশালী মুমিন আল্লাহর নিকট দুর্বল মুমিনের চেয়ে বেশি প্রিয় ও বেশি ভালো, যদিও সকল মুমিনের মধ্যেই ভালো রয়েছে। তোমার জন্য কল্যাণকর বিষয় অর্জনের জন্য তুমি ঐকান্তিক আগ্রহ ও সুদৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে চেষ্টা করবে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে। কখনোই দুর্বল হবে না বা হতাশ হবে না। যদি তুমি কোনো সমস্যায় নিপতিত হও (তুমি ব্যর্থ হও বা তোমার প্রচেষ্টার আশানুরূপ ফল না পাও) তাহলে কখনই বলবে না যে, যদি আমি ঐ কাজটি করতাম! যদি আমি অমুক তমুক কাজ করতাম। বরং বলবে: আল্লাহই নির্ধারণ করেছেন এবং আল্লাহ যা ইচ্ছা করেছেন তাই করেছেন; কারণ, অতীতের আফসোস মূলক (যদি করতাম) ধরনের বাক্যগুলি শয়তানের কর্মের পথ খুলে দেয়।” [মুসলিম]
আপনার বিশ্বাসে, ভালো কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করার দৃঢ় সংকল্পে, শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে, আপনার চরিত্রে, জ্ঞান অন্বেষণে এবং আপনার ইচ্ছাশক্তিতে কুওয়া অর্জনের চেষ্টা করুন!
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করুন। আল-ক্বাওয়ি ঘৃণা করেন সেই শক্তিকে যা অত্যাচার ও অবিচারের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত।
রাসুল (ﷺ) বলেছেন:
‘কোন জাতিই ধন্য হয় না যতক্ষণ না তার দুর্বলতম সদস্যরা বিনা দ্বিধায় তাদের অধিকার দাবি করতে পারে।’
[সুনানে ইবনে মাজাহ]
আপনার সম্প্রদায়ের এমন একজন ব্যক্তি হয়ে উঠুন যিনি এমনকি ক্ষুদ্রতম বিষয়ে ন্যায়পরায়ণ হওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন এবং অন্যদেরকে ন্যায়পরায়ণ হতে এবং দুর্বলদের অধিকারের পক্ষে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করেন। যারা তাঁর পথকে সমর্থন করে তাদের প্রতি আল-ক্বাওয়ি এর প্রতিশ্রুতিতে নিশ্চিন্ত থাকুন।
وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ
আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন, যে তাকে সাহায্য করে। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিমান, পরাক্রমশালী।
[২২:৪০]
আল-ক্বাওয়িকে ভয় করুন। আল-ক্বাওয়ি একজন ফেরেশতাকে একটি পুরো জনপদ (শহর) উল্টে ফেলার বা একটি পাহাড়কে উপড়ে ফেলার শক্তি দিয়েছিলেন। এই ফেরেশতা সহ অন্য সব ফেরেশতারা, তাদের বিপুল শক্তি থাকা সত্ত্বেও, তাঁর মহানুভবতার বিস্ময়ে এবং সশ্রদ্ধ ভয়ে কাঁপতে থাকে। তাহলে আমাদের অবস্থাটা একবার চিন্তা করে দেখুন —আমাদের কোন ক্ষমতা আছে?
আল-ক্বাওয়িকে ভয় করুন এবং আপনি যখন কিছু ভুল করতে চলেছেন তখন নিজেকে অনুপ্রাণিত করার জন্য তাঁর শক্তিকে স্মরণ করুন।
আল-ক্বাওয়ির সৃষ্টি অবলোকন করুন এবং এগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করুন। সূর্যের তাপের প্রচন্ড শক্তি নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন কি কখনো?
মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে তা বিশাল বরফের পৃষ্ঠগুকে গলিয়ে দিতে পারে যা মানব নির্মিত শক্তিশালী মেশিন দ্বারাও সম্ভব নয়। বাতাসের শক্তি সম্পর্কে একবার ভেবে দেখুন, যা পুরো গ্রামগুলিকে পাখির পালকের মত বাতাসে উড়িয়ে দিতে পারে। সমুদ্রের শক্তির কথা চিন্তা করেছেন, যা সম্পূর্ণ দেশগুলিকে গিলে ফেলতে পারে।
সৃষ্টির দিকে অবলোকন করুন, তবেই স্রষ্টার মহত্ব এবং তাঁর অসীম শক্তি উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। আল-ক্বাওয়ির নিদর্শনগুলো নিয়ে চিন্তা করুন এবং তাঁর আদেশ পালন করে এবং তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকার মাধ্যমে তাঁর আনুগত্য করুন।
আল-ক্বাওয়ির কাছ থেকে স্বস্তি লাভ করুন। তাঁর বিপুল শক্তি ও ক্ষমতা সত্ত্বেও, আল্লাহ ‘আজ্জা ওয়াজল তাঁর বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত কোমল ও দয়ালু।
ٱللَّهُ لَطِيفٌۢ بِعِبَادِهِۦ يَرۡزُقُ مَن يَشَآءُۖ وَهُوَ ٱلۡقَوِىُّ ٱلۡعَزِيزُ
আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু। তিনি যাকে ইচ্ছা রিয্ক দান করেন। আর তিনি মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী। [৪২:১৯]
তিনিই আপনার একমাত্র অভিভাবক, আপনার সবচেয়ে কাছের, যখন আপনি দুর্বল বোধ করেন এবং দুশ্চিন্তায় জর্জরিত হন, তখন তাঁর কাছে সান্ত্বনা লাভ করুন।
হে আল্লাহ, আল-ক্বাওয়ি, আমরা জানি যে আপনার শক্তি নিখুঁত এবং সম্পূর্ণ। আমাদের ঈমানকে জোরদার করুন এবং আমাদের শক্তিকে ন্যায়বিচারের পক্ষে ব্যবহার করতে সাহায্য করুন। অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনার প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করতে এবং আপনার শক্তির সঠিক জ্ঞানে সান্ত্বনা পেতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার সৃষ্টির প্রতি চিন্তাভাবনা করতে আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করুন এবং আপনার মহত্ত্ব এবং অপ্রতিরোধ্য শক্তির জন্য আমাদের হৃদয়কে ভয়-ভীতি এবং বিস্ময় দিয়ে পূর্ণ করুন, আল্লাহুম্মা আমীন!
আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
আল-ক্বাওয়ি