Writing

আসমাউল হুসনা – আল-জালিল

আল-জালিল (ٱلْجَلِيلُ)
অর্থ: গৌরবান্বিত, মহিমান্বিত
আল্লাহ سُبْحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ হলেন আল-জলীল: তিনিই গৌরবান্বিত, এবং মর্যাদার দিক থেকে সবার উপরে; তিনি মহিমান্বিত এবং মহত্ত্বের সমস্ত গুণের উৎস। সমস্ত সম্মান এবং আন্তরিক ভক্তি তাঁরই জন্য।

আল্লাহর ৯৯টি নামের মধ্যে ৮১টি নাম সুস্পষ্টভাবে কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাকি ১৮টি নামের ব্যাপারে আলেমরা একমত হতে পারেননি। আল-জালিল সেই নামগুলির মধ্যে একটি যা নির্দিষ্ট কিছু আলেমদের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই তালিকায় রয়েছেন ইবনে হাজার এবং ইবনুল উসাইমিন। যাইহোক, ইবনে আরাবী, ইমাম আল-বায়হাকী এবং ইমাম আল-গাজ্জালী, আসমা উল-হুসনার ব্যাখ্যার বইতে আল্লাহর এই নামটি অন্তর্ভুক্ত করেছেন। কুরআনের অনেক আয়াত আল্লাহর এই গুণটিকে বর্ণনা করে।

وَيَبۡقَىٰ وَجۡهُ رَبِّكَ ذُو ٱلۡجَلَٰلِ وَٱلۡإِكۡرَامِ
আর থেকে যাবে শুধু মহামহিম ও মহানুভব তোমার রবের চেহারা।1

মহিমান্বিত অর্থ কী?

এটি এমন একটি গুণ যা শুধুমাত্র আল্লাহ سُبْحَٰنَهُۥ وَتَعَٰلَىٰ অর্জন করতে পারেন। এর মানে তিনি সম্পূর্ণ জ্ঞান, শক্তি, সার্বভৌমত্ব, সম্পদ, ক্ষমতা এবং আধিপত্যের অধিকারী। তাঁর মহিমা অনন্য এবং অপরিমেয়। আল্লাহর এমন অনেক নাম রয়েছে যা তাঁর মহিমাকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, আল-জালিল – তিনি তাঁর সমস্ত গুণাবলীর পরিপূর্ণতার কারণে মহিমান্বিত।

আল-কবীর (মহান) – তিনি তাঁর অস্তিত্ব এবং সত্ত্বায় নিখুঁত; আল-আজীম -তিনি তাঁর গুণাবলীতে সর্বশ্রেষ্ঠ। যে সমস্ত গুণাবলী আল্লাহর মহিমা, বা অতীন্দ্রিয় প্রকৃতির উল্লেখ করে সেগুলোকে জালালের গুণাবলী বলা হয়। অন্যান্য গুণাবলী (যেমন, করুণা, দয়া, যত্ন, রিযিক, ভরণপোষণ) হল সৌন্দর্যের গুণাবলী – জামাল। আলেমদের মতে তাঁর সমস্ত নামই হয় জালাল বা জামালের গুণাবলী। এগুলোও পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। আল্লাহর মহিমা তাঁর সৌন্দর্য, এবং তাঁর সৌন্দর্যই তাঁর মহিমা।

যখন আল্লাহ মুসার (আ.) কাছে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন:

وَلَمَّا جَآءَ مُوسَىٰ لِمِيقَٰتِنَا وَكَلَّمَهُۥ رَبُّهُۥ قَالَ رَبِّ أَرِنِىٓ أَنظُرۡ إِلَيۡكَۚ قَالَ لَن تَرَىٰنِى وَلَٰكِنِ ٱنظُرۡ إِلَى ٱلۡجَبَلِ فَإِنِ ٱسۡتَقَرَّ مَكَانَهُۥ فَسَوۡفَ تَرَىٰنِىۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُۥ لِلۡجَبَلِ جَعَلَهُۥ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًاۚ فَلَمَّآ أَفَاقَ قَالَ سُبۡحَٰنَكَ تُبۡتُ إِلَيۡكَ وَأَنَا۠ أَوَّلُ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ
আর যখন আমার নির্ধারিত সময়ে মূসা এসে গেল এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন। সে বলল, ‘হে আমার রব, আপনি আমাকে দেখা দিন, আমি আপনাকে দেখব।’ তিনি বললেন, তুমি আমাকে কখনো দেখবে না। বরং তুমি পাহাড়ের দিকে তাকাও, অতঃপর তা যদি নিজ স্থানে স্থির থাকে তবে তুমি অচিরেই আমাকে দেখবে। অতঃপর যখন তার রব পাহাড়ের উপর নূর প্রকাশ করলেন তখন তা তাকে চূর্ণ করে দিল এবং মূসা বেহুঁশ হয়ে পড়ে গেল। অতঃপর যখন তার হুঁশ আসল তখন সে বলল, ‘আপনি পবিত্র মহান, আমি আপনার নিকট তাওবা করলাম এবং আমি মুমিনদের মধ্যে প্রথম।2

এ ঘটনাটি থেকে আমরা বুঝতে পারি, আল্লাহর সৌন্দর্য ও মহিমা বাহ্যিক দৃষ্টি দ্বারা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। আল্লাহর মহত্বের গুণাবলী অধ্যায়নের মাধ্যমে আমরা তাঁকে বুঝতে চেষ্টা করি। ইমাম আল-গাজ্জালী আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে লিখেছেন, “এবং তা হল সুন্দর গুণাবলী বা সুন্দর স্বভাব যা বাহ্যিক দৃষ্টি দ্বারা নয় বরং অন্তর্দৃষ্টি দ্বারা অনুভূত।” যে ব্যক্তি বুঝতে পারে, কিভাবে অভ্যন্তরীণটি নিখুঁতভাবে এবং সঠিক অনুপাতে সৃষ্টি করা হয়েছে, সৌন্দর্যের প্রতি তার বোধগম্যতা এবং সন্তুষ্টি তাদের চেয়ে বেশি যারা সৌন্দর্যকে বিচার করে বাহ্যিক দৃষ্টি দিয়ে।

আল্লাহর এই নামটিকে নিজের জীবনে কিভাবে প্রয়োগ করবেন?

ক্রমাগত আল-জলিলের প্রশংসা করুন। আপনার প্রতি তাঁর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞ হন এবং তাঁর পরিপূর্ণতার জন্য তাঁর প্রশংসা করুন। আবু হামজাহ আলবাগদাদি বলেছেন: ‘আপনার পক্ষে এটা অসম্ভব যে আপনি দাবি করেন আপনি আল্লাহকে ভালোবাসেন এবং ক্রমাগত তাঁর প্রশংসা করেন না, এবং এটা অসম্ভব যে আপনি ক্রমাগত আল্লাহর প্রশংসা করেন এবং এই জীবনে এর মাধুর্য অনুভব করেন না; এবং এটা অসম্ভব যে আপনি আল্লাহর প্রশংসার মাধুর্য অনুভব করেন এবং তারপর তাঁকে ব্যতীত অন্য কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।’

আল্লাহর সৌন্দর্য, বড়ত্ব, মহত্ব, এবং পরিপূর্ণতার ঘোষণা দিতে হারিয়ে যাওয়া এই জিকিরটি আমরা করতে পারি-

اللَّهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ وَمِنْكَ السَّلاَمُ تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالإِكْرَامِ
“আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম, ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়াযাল জালালি ওয়াল ইকরাম।”
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি শান্তি দাতা। শান্তি অবতীর্ণ হয় আপনার পক্ষ থেকেই। আপনি মহত্ব ও মর্যাদার অধিকারী।

আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) নামাজের সালাম ফেরানোর পর এই দু’আ করতেন।3

মানুষের সাথে সম্মানজনক আচরণ করুন। আপনার অন্তরকে প্রশস্ত করুন, অন্যদের প্রতি ক্ষমাশীল, এবং ধৈর্যশীল হন। মানুষের সাথে সদয়ভাবে কথা বলুন, হাসুন এবং অন্যদের পুনর্মিলনে সহায়তা করুন। আপনার সম্পদের আশীর্বাদ থেকে অসহায় লোকদের সাহায্য করুন এবং তাদের প্রতি বিনয়ী এবং সদয় হন।

মু’আয ইবনু জাবাল (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমার মর্যাদা ও পরাক্রমের টানে যারা পরস্পরকে ভালোবাসে তাদের জন্য জন্য রয়েছে আলোর মিম্বার (মঞ্চ)। নবী ও শাহীদগণ পর্যন্ত তাদের সাথে (মর্যাদা দর্শনে) ঈর্ষা করবে।4

আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কিয়ামতের দিন আল্লাহ বলবেন, আমার মহত্ত্বের কারণে একে অপরের প্রতি ভালবাসা স্থাপনকারীরা কোথায়?
আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া প্রদান করব। আজ এমন দিন, যেদিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।5

মূল উৎস থেকে পরিপূর্ণতার সন্ধান করুন। অন্যদের মাঝে পরিপূর্ণতা খুঁজে হতাশ হতে যাবেন না। যাদের সম্পদ এবং মর্যাদা আছে, কিন্তু ঈমান নেই – এমন লোকের প্রশংসা করে সময় নষ্ট করবেন না। আপনার প্রভুর প্রশংসা করুন, এবং তাঁর উপর নির্ভর করুন। তিনি কখনোই আপনাকে হতাশ করবেন না, বরং ছোট কাজের বিনিময়ে বিশাল পুরস্কার দিয়ে তিনি আপনাকে বিস্মিত করবেন।

আল-জালিলের কাছে আনন্দ এবং সুখ খুঁজে নিন। স্বভাবগতভাবেই মানুষ ভালোবাসা এবং পরিপূর্ণতা অন্বেষণ করে। আল্লাহ আল-জালিল সমস্ত গৌরব এবং পরিপূর্ণতার উৎস। প্রকৃতপক্ষে, আপনি যত বেশি তাঁর সম্পর্কে, তাঁর নামগুলি এবং তাঁর গুণাবলী সম্পর্কে জানতে পারবেন, তত বেশি আপনি সত্যিকারের ভালবাসা এবং ভক্তির সাথে তাঁর দিকে ফিরে আসবেন এবং তাঁর সান্নিধ্যে নিরাপদ এবং প্রশান্তি বোধ করবেন।

হে আল্লাহ, আল-জালিল, আমরা জানি যে আপনি মহিমান্বিত এবং গৌরবান্বিত। আপনি আমাদেরকে আপনার মহিমান্বিত কিতাব তিলাওয়াত করার, বোঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন এবং আমাদেরকে জিকিরকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন – যারা আপনাকে সুন্দর মহিমা ও প্রশংসার সাথে অবিরত স্মরণ করে।

অন্যদের সম্মান করতে এবং অন্যের দৃষ্টিতে সম্মানিত হতে আমাদের সাহায্য করুন। আপনার নিদর্শনগুলি নিয়ে যেন আমরা চিন্তা ভাবনা করতে পারি সেজন্য আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করুন। আমাদেরকে ইসলামের মাধ্যমে সম্মানিত করুন এবং জান্নাতে আপনার দীদার অবলোকনের সৌভাগ্য দিন, আল্লাহুম্মা আমীন!

আর আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

আল-জালিল

আসমাউল হুসনা

লিখেছেন

Picture of ফাহমিনা হাসানাত

ফাহমিনা হাসানাত

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

কিছুটা লেখালেখি করি, ইসলামিক লাইনে কিছুটা পড়াশোনা করি। তাজউইদ, গ্রামার এবং কুরআন মেমোরাইজেশন এর ক্লাস করছি আলহামদুলিল্লাহ।
নিজে শিখছি, অন্যকেও শিখাচ্ছি। লেখালেখিটাও ঠিক এরকম। নিজে জানার জন্য মনের আনন্দে লিখি, শেয়ার করি।

  1. সূরা আর-রহমান-৫৫: আয়াত-২৭ ↩︎
  2. সূরা আল-আরাফ-৭: আয়াত- ১৪৩ ↩︎
  3. আবু দাউদ, হাদিস : ১৫১২ ↩︎
  4. তিরমিজি: ২৩৯০ ↩︎
  5. সহীহ মুসলিম:২৫৬৬ ↩︎
Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button