ভুল নাম নির্বাচন কতটা বিপদজনক তা কি জানেন
সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে তার সুন্দর অর্থবহ একটি নাম রাখা। কেননা, নামের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। নামের প্রভাব প্রত্যেকটা মানুষের উপর-ই পরে। ভালো নাম রাখলে তার ওপর ভাল প্রভাব পড়বে, আর খারাপ নাম রাখলে তার ওপর খারাপ প্রভাব পড়বে। এজন্য আমাদের উচিত সুন্দর অর্থবহ নাম রাখা।
আর আমরা উত্তম নাম রাখার জন্য কুর’আনকে বেছে নিই। কেননা, কুর’আনে অনেক সুন্দর সুন্দর অর্থবহ নাম রয়েছে। কিন্তু কুর’আন থেকে ভালো অর্থবহ নাম উদঘাটন করতে আমরা অনেকেই ভুল করে থাকি। অনেকেই মনে করে, কুর’আনে আসছে তার মানে নামটা ভালো। কিন্তু এর প্রকৃত অর্থ কী—সেটা আর দেখে না।
যেমন— ‘মাহীন’ একটি নাম। এই ‘মাহীন’ শব্দটি কুর’আনের একাধিক জায়গায় এসেছে। এজন্য অনেকেই তাদের সন্তানের নাম রাখেন, ‘মাহীন’। কেননা, এটা যে কুরআনে এসেছে। অথচ, মাহীন অর্থ: হীন, তুচ্ছ, লাঞ্ছিত।
দেখুন তো, এর অর্থ ঠিক আছে কি-না?
আপনি বলুন তো, এটা কারও নাম হতে পারে?
কুর’আনে এসেছে, এর মানে তো এই নয়—কুর’আনে বর্ণিত সব শব্দই অর্থবহ! যে কোনো শব্দই কারও নামের জন্য নির্ধারণ করা যাবে।
সঠিক নাম নির্বাচনে এই ভুল-টা আমরা অনেকই করে থাকি। অনেকেই এমন সব নাম নির্বাচন করি, যার অর্থ দাঁড়ায়—দুঃখ, কষ্ট, তুচ্ছ, লাঞ্ছিত ইত্যাদি! তার কারণ একটাই—আমরা অর্থের দিকে খেয়াল রাখি না।
সুতরাং, সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর নাম নির্বাচনে সতর্ক থাকা উচিত। আর এই দায়িত্বটা প্রত্যেক মা-বাবার উপরই। মনে রাখবেন, আপনার এই একটি মাত্র ভুল, আপনার সন্তানের জন্য বড় ধরণের বিপদ ডেকে আনতে পারে। কেননা, নামের প্রভাব সন্তানের উপর পতিত হয়। আপনি যেমন নাম রাখবেন, তেমনই মনুষত্ব তার মধ্যে তৈরি হবে। কী, বিশ্বাস হচ্ছে না? আসুন তাহলে হাদিসের আলোকে জেনে নিই…
সা‘ঈদ ইবনু মুসাইয়্যাব রাযি. থেকে বর্ণিত—
একবার তাঁর দাদা রাসুল সা. -এর কাছে আসলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন—তোমার নাম কী?
তিনি উত্তর দিলেন—আমার নাম হায্ন। তিনি বললেন— না বরং তোমার নাম ‘সাহ্ল’। তিনি বললেন— আমার পিতা আমার যে নাম রেখে গিয়েছেন, তা আমি পাল্টাতে চাই না। ইবনু মুসাইয়্যাব বলেন, ফলে এরপর থেকে আমাদের বংশে দুঃখকষ্টই লেগে আছে।
অর্থাৎ, এক ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর নিকট আসলে তিনি তার নাম জিজ্ঞেস করলেন। সে উত্তর দিল, ‘আমার নাম হাযন।’ তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নাম পাল্টে বললেন, ‘তোমার নাম ‘সাহল’।’ তখন ওই ব্যক্তি বললো, ‘আমি নাম পাল্টাতে চাই না।’ আর সে তার নাম পাল্টায় নি। ফলে, নামের প্রভাব তার উপর বিস্তার করতে থাকে। দুঃখ-কষ্ট লেগেই থাকে।
এখন আপনার মনে হয়তো প্রশ্ন জাগতে পারে—নামের প্রভাব মানুষের উপর কীভাবে পড়ে?
হাদিসের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন, ওই ব্যক্তির নাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরিবর্তন করে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি তার নাম পরিবর্তন করে নি, ফলে তার বংশে দুঃখ কষ্ট লেগেই ছিলো। তার কারণ, হাযন অর্থই—দুঃখ-কষ্ট!
এবার বুঝতে পেরেছেন—মানুষের উপর নামের প্রভাব কীভাবে পড়ে? তাই, সঠিক নাম নির্বাচনে আমাদের সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। এখন কথা হচ্ছে, যাদের নাম ভালো না, যাদের নামের অর্থ ভালো না— তারা কী করবে? যাদের নাম ভালো না তাদের উচিত নাম পরিবর্তন করে নেয়া। ভুল নামের উপর অবিচল না থেকে, তা পরিবর্তন করে নেয়া। খারাপ নাম পরিবর্তন করে, সুন্দর অর্থবহ একটি নাম রাখা।
অন্যথায়, খারাপ নামের প্রভাব আপনার উপর বিস্তার করবে। এর ফলে কেবল ক্ষতিগ্রস্তই হবেন।