মসিবত থেকে পরিত্রাণ
Table of Contents
[১]
ভাবুন তো, আপনি একটি সাগরের পার দিয়ে একা একা হাঁটছেন। সাগরের বিশাল বিশাল ঢেউ আপনার মনকে আন্দোলিত করছে। আপনি উপভোগ করছেন সেখানকার প্রতিটি ক্ষণ। সাগরের অপরূপ সৌন্দর্য আপনাকে যেন এক ভাবনায় ফেলে দিয়েছে। এমন সময় সাগরের বুকে ঘাপটি মেরে থাকা এক বৃহদাকার তিমি মাছ হঠাৎ পানি থেকে তার মাথা বের করে হাঁ করে মুহুর্তেই আপনাকে গিলে ফেলল।তারপর এক ডুব দিয়ে আপনাকে নিয়ে সাগরের অতল গহ্বরে চলে গেলো।
এখন এমন এক জায়গায় আপনার অবস্থান যেখানে শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার। এই যে মহা বিপদে আপনি পড়লেন এই বিপদ থেকে কি পরিত্রাণের কোনো উপায় আছে আপনার- কী মনে হয়?
আপাতদৃষ্টিতে, কোনো উপায় নেই। একটি জলজ্যান্ত বিশালাকার মাছ আপনাকে গিলে ফেলেছে যেখান থেকে বেড়োনোর আর কোনো রাস্তা নেই। এই মুহূর্তে আপনার চেয়ে বড়ো অসহায় কি আর কেউ আছে, ভাবুন তো!
সস্তির বিষয় হচ্ছে, এটা কেবলই এক ভাবনা, বাস্তবতা নয়। আল্লাহ আপনাকে এরকম বিপদের সম্মুখীন করেন নি। এই এতোক্ষণ যে বিষয় বললাম সেটি মূলত ইউনূস (আঃ) এর জীবনে ঘটেছিলো। আমাদের জীবনেও অনেক বিপদ আপদ এসে থাকে। কিন্তু যতো বড়ো বিপদ আপদই আসুক না কেন আমাদের সামনে আল্লাহ তা’য়ালা ইউনুস (আঃ) এর মতো এমন এক বিপদগ্রস্তের দৃষ্টান্ত রেখেছেন যার চেয়ে বড়ো বিপদগ্রস্ত আর কেউ আসলে হতে পারে না। আল্লাহ কাউকে সাধারণত এর চেয়ে বেশি বিপদগ্রস্ত করেন না।
এখন যে আল্লাহ এতো বড়ো বিপদগ্রস্ত ইউনুস (আঃ) কে একেবারে সুনিশ্চিত মৃত্যু থেকে একদম অক্ষত অবস্থায় বাঁচিয়ে এনেছিলেন সেই একই আল্লাহ কিন্তু আপনাকে আমাকেও চরম বিপদ থেকে অনায়েসে উদ্ধার করতে পারেন, এমনভাবে বাঁচাতে পারেন যা আমাদের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে। আমাদের কেবল প্রয়োজন ভরসা, ইউনুস (আঃ) এর মতো স্ট্রং ভরসা।
আমাদের বেশীরভাগ মানুষের বিপদ আপদ বলতে বড়ো কোনো রোগ-বালাই হয়ে যাওয়া, ঋণগ্রস্ত হয়ে যাওয়া, সম্পত্তির দ্বন্দ্ব, ব্যবসায় লস হওয়া, চাকরি চলে যাওয়া,সন্তান বিপথে চলে যাওয়া ইত্যাদি এগুলোই। চিন্তা করে দেখুন,এগুলো বিপদ হলেও ইউনুস (আঃ) এর মতো বড়ো কোনো বিপদ নয়। উনি (আঃ) তো রীতিমতো নিশ্চিত জীবননাশের দ্বারপ্রান্তে ছিলেন। এতটাই বড়ো বিপদ ছিল যে, আজকের বিজ্ঞান তার চরম উৎকর্ষতার যুগেও মাছের পেট থেকে সুস্থভাবে ফিরে আসার ক্যালকুলেশন করতে ব্যর্থ। এটা কেবলই সম্ভব আল্লাহর ক্যালকুলেশনে।
এজন্য ইউনুস (আঃ) কে যদি আল্লাহ এতো বড়ো বিপদ থেকে অনায়েসে উদ্ধার করতে পারেন তাহলে আপনি আপনার জীবনে যেগুলোকে বিপদ মনে করছেন সেগুলো থেকে আপনাকে উদ্ধার করা আল্লাহর জন্য কোনো ব্যাপারই না। এগুলো ঐ বিপদের তুলনায় কোনো বিপদই না। যে আল্লাহ মহা বিপদ থেকে বাঁচাতে পারেন সেই আল্লাহর জন্য তার চেয়ে বহুগুণ ছোট বিপদ থেকে আপনাকে বাঁচানো কি খুবই সাধারণ বিষয় নয়?
অবশ্যই অতি সাধারণ বিষয়। ফলে আমাদের হতাশ হলে চলবে না। চরম বিপদে পড়েও ইউনুস (আঃ) কিন্তু হতাশ হন নি। আর হতাশা আশার আলোকে নিভিয়ে দেয়।
এবার নিজেকে প্রশ্ন করুন তো, যেখানে ইউনুস (আঃ) এতো বড়ো বিপদে পড়েও আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে ভুলেন নি সেখানে আমরা এর চেয়েও বহুগুণ ছোট বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকছি তো?
মাছের পেটের মতো এতো ঘুটঘুটে অন্ধকারে থেকেও এমনকি একেবারে নিশ্চিত মৃত্যুর আশঙ্কায় থেকেও তিনি যেখানে এক মুহুর্তের জন্য আশাহত হননি, ভরসা হারান নি সেখানে আমরা সামান্যতেই হতাশ হয়ে যাচ্ছি না তো? জীবন থেকে কিছু একটা হারিয়ে গেলেই সকল আশা ছেড়ে দিয়ে আত্মহত্যার মতো পাগলামো চিন্তা করছি না তো?
[২]
মূলত, ইউনুস আলাইহিস সালাম তার সম্প্রদায়ের ওপর ক্রোধ হয়ে আল্লাহর নির্দেশ ছাড়াই তাদের ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিলেন। তার এই কার্যক্রম আল্লাহ তা’আলা অপছন্দ করেন। ফলে তিনি আল্লাহর অসন্তুষ্টের কারণ হন এবং আল্লাহর শাস্তি হিসেবে ঘটনাক্রমে একটা পর্যায়ে সমুদ্রের বিশাল একটি মাছ তাকে গিলে ফেলে। মাছের পেটে চলে যাওয়ার মাধ্যমে তিনি ভয়ঙ্কর এক বিপদের সম্মুখীন হন।
এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে এমন কোনো কাজ বিপদের কারণ হতে পারে। আমরা তো অনেকেই মা-বাবার ওপর রাগ অভিমান করে অনেক সময় ঘর-বাড়ি ছেড়ে চলে যাই, আল্লাহর হুকুমের অবাধ্য হই। আর এসব কাজ আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ। আল্লাহর এই অসন্তুষ্টিই আপনার বড়ো বিপদ ডেকে আনতে পারে। এজন্য আমাদের উচিত সবসময় আল্লাহর সন্তুষ্টি বজায় রেখে চলা এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে এমন কাজ বর্জন করে চলা। আল্লাহ তা’য়ালাই বলেছেন, তোমাদের যে বিপদ-আপদই আসে না কেন তা তো তোমাদের হাতের কামাই এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি এমনিতেই ক্ষমা করে দেন। (সূরা আশ শোয়ারা : ৩০)
যাইহোক, ইউনুস (আঃ) জীবন-মরণ সন্ধিক্ষণে থেকে আল্লাহকে যে ভাষায় ডেকেছিলেন সেই ভাষা আল্লাহর নিকট এতোটাই পছন্দ হয়েছিল যে, আল্লাহ সেটিকে সমস্ত মানবকূলের জন্য মোটিভেশন হিসেবে, আমল হিসেবে কোরআনে জীবন্ত করে রেখেছেন। সুবহান’আল্লাহ। জানেন, সেই ওজনদার দোয়াটি কী?
সেই পরম দামি দোয়াটি হচ্ছে,
لَّاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ ٭ۖ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ
অর্থঃ আপনি ছাড়া কোনো মা‘বূদ নেই; আপনি পবিত্র, মহান; নিশ্চয়ই আমি বড়ো যালিম।
(সূরা আল আম্বিয়া: ৮৭)
ইউনুস (আঃ) এর এই দোয়ায় তিনটি অংশ রয়েছে। প্রতিটি অংশই গুরুত্বপূর্ণ মিনিং বহন করে। প্রথম অংশে তাওহীদের কথা অর্থাৎ আল্লাহর একত্ববাদ। দ্বিতীয় অংশে আল্লাহর প্রশংসা। তৃতীয় অংশে নিজেকে দোষীর কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। চিন্তা করছেন, দোয়া যতো ছোটো দেখা যাচ্ছে আসলে ততো ছোটো নয়। এই দোয়া অনেক ওজনপূর্ণ এক দোয়া।
এবার লক্ষ্য করুন, ইউনুস (আঃ) বলেছেন আল্লাহ এক, আল্লাহ অদ্বিতীয় অর্থাৎ আল্লাহ শরীক মুক্ত এটার ইমফেটিক স্বীকৃতি দিচ্ছেন। আল্লাহ পবিত্র, মহান বলে আল্লাহর প্রশংসা করেছেন। আর নিজেকে যালিম বলার মাধ্যমে তিনি মূলত এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, আমি অন্যায়কারী, সকল দোষ আমার। তিনি চাইলে কিন্তু বলতে পারতেন যে, হে আমার রব! আমি তো তোমার একজন নবী। জীবনে অনেক ভালো কাজ করেছি আমি। এগুলোর খাতিরে আমাকে আজ উদ্ধার করো। কিন্তু না, তিনি ওভাবে বলেন নি। আর ওভাবে না বলাই তার বিনম্রতা ফুটে তুলেছে। আর বিনম্রতা দোয়ার বড়ো আদব।
আমরা হলে কী করতাম, জানেন? আমরা অনেকেই বলতাম, হে আল্লাহ! কতো ভালো ভালো কাজ করি আমি, মানুষের উপকার করি আর আজ আমার কি-না এ করুণ অবস্থা, কোন যে পাপ করেছি আমি ইত্যাদি বলে নিজের আত্নস্তুতিতেই মেতে উঠতাম। এমনকি why always me বলে আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতাম যা অনেক বড়ো গোনাহ। আর এখানেই নবীগণের সাথে আমাদের দোয়ার আসল পার্থক্য।
কোনো কিছু চাওয়ার অন্যতম একটি আদব হচ্ছে নিজেকে ছোটো করে তুলে ধরা। কোনো মানুষের কাছে কিছু চাইতে গেলে যদি আপনি নিজের সাফাই গেয়ে আপনার চাওয়া পেশ করেন তবে দেখবেন সে মানুষটির কাছে আপনি তেমন একটা এটেনশন পাচ্ছেন না, সে মানুষটির কাছে আপনার চাওয়ার বিষয়ের ঐরকম গ্রহণযোগ্যতাও থাকছে না। কারণ আপনি নিজের গুণাগুণ তুলে ধরার মাধ্যমে চাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ আদবই খেলাপ করেছেন। তদ্রুপভাবে, আল্লাহর কাছেও কিছু চাইতে গেলে নিজেকে বড়ো করে উপস্থাপন করলে তখন আর সে চাওয়ার গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। সবচেয়ে বড়ো কথা, এতে বিনয় ভাব অনুপস্থিত থাকে যার উপস্থিতি আবশ্যক।
ইউনুস (আঃ) এতো বড়ো বিপদে পড়ে যাওয়ার পরও কিন্তু সরাসরি বলেন নি, হে আমার রব! তুমি আমাকে উদ্ধার করো, তুমি আমাকে বাঁচাও। তিনি বরং শুরুতেই আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা দিতে দিতে আল্লাহর প্রশংসা করা শুরু করলেন। অতঃপর নিজেকে ভৎসনা করলেন, অকপটে নিজের দোষ স্বীকার করলেন। আর এভাবেই তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করে নিলেন। এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরাও যেন আল্লাহর নিকট কোনো কিছু চাওয়ার সময় একই কাজ করি, একই অ্যাপ্রোচ অনুসরণ করি।
এবার আসুন, আমরা বিপদে পড়লে কী বলতাম? অনেকে তো আল্লাহকে ডাকেই না। আর যারাই ডাকে তারা বড়োজোর এভাবে বলে যে, হে আল্লাহ! আমি তো ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি, আমার ঋণ পরিশোধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দাও।
এই দোয়াটা শুনতে ভালো মনে হলেও এই দোয়াটি ইনসাইটফুল বা অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন নয়। আল্লাহ আপনার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিলেই কী আপনি মুক্তি পেয়ে যাবেন?
আল্লাহ আপনাকে ঋণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করে দিলেন ঠিকই কিন্তু যে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় আপনি ঋণগ্রস্ত হয়েছেন সেই ব্যয়টা আর কমলো না। তখন আপনার ঋণ পরিশোধ করেও লাভ কী। সেই আবার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়বেন। এজন্য আমাদের দোয়ায় ফাঁক থেকে যায়। আমরা চাওয়ার মতো চাইতে পারি না। কিন্তু নবীদের দোয়ায় কোনো ফাঁক থাকে না।
আপনি যদি আল্লাহকে এভাবে বলতেন যে, হে আমার রব! আমার আয়ের মধ্যে এমন বরকত দিয়ে দিন যে বরকতের কারণে আমার ব্যয় যেন কখনোই আয়কে অতিক্রম না করে। তখন আর ঐ ফাঁক থাকলো না। কিন্তু আমরা এভাবে সবসময় পেরে উঠি না। কোনো না কোনো ফাঁক থেকেই যায়।
[৩]
ইউনুস (আঃ) এর দোয়া আল্লাহ তা’য়ালা সাথে সাথেই কবুল করে নিয়ে বললেন,
فَاسۡتَجَبۡنَا لَهٗ ۙ
(সূরা আল আম্বিয়া: ৮৮)
অর্থঃ অতঃপর আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম।
অতএব, বুঝতেই তো পারছেন, এটি আল্লাহর কাছে একটি গ্রান্টেড তথা কবুল হওয়া দোয়া। আর একটি কবুল হওয়া দোয়া আমাদের কাছে কতোটুকু গুরুত্ব পাওয়ার দাবি রাখে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
এর সাথে সাথেই আল্লাহ বলেছেন,
وَ نَجَّیۡنٰهُ مِنَ الۡغَمِّ ؕ وَ کَذٰلِکَ نُــۨۡجِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ অর্থঃ আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি। (সূরা আল আম্বিয়া: ৮৮)
এই পার্টটা হচ্ছে আরও বেশি ইন্টরেস্টিং, ইন্সপায়ারিং তো বটেই। খেয়াল করুন, আল্লাহর শব্দ চয়ন কতো চমৎকার। আল্লাহ বলেছেন, এভাবেই মুমিনদের উদ্ধার করে থাকেন। এর মানে কী, জানেন?
এর মানে হচ্ছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস করে, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে অর্থাৎ যার মধ্যে মু’মিনের কোয়ালিটিস আছে সে যখন মসিবতে পড়ে আল্লাহকে ডাকবে, আল্লাহকে তার একমাত্র সাহায্যকারী মনে করবে তার ওপর ইউনুস (আঃ) এর মতো যতো কঠিন বিপদই আসুক না কেন আল্লাহ তাকে উদ্ধার করবেনই। এই আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ জানিয়ে রাখলেন শুধু নবীই নন যেকোনো সাধারণ মুমিন তার বিপদের সময় আল্লাহকে সাহায্যকারী হিসেবে পাবে। চিন্তা করছেন, বিপদগ্রস্ত মানুষের জন্য এর মধ্যে কতো বড়ো মোটিভেশন রয়েছে, রয়েছে হতাশা থেকে মুক্তির মেডিসিন।
এছাড়া, ইউনুস (আঃ) এর দোয়ার এতোটাই প্রভাব রয়েছে যে, তার দোয়া প্রত্যেকের জন্যে, প্রতি যুগের এবং প্রতি মকসুদের জন্যে মকবুল। রাসূল (সাঃ) বলেছেন “মাছের পেটে পাঠকৃত ইউনুস আলাইহিস সালাম এর এই দোয়াটি যদি কোনো মুসলিম কোনো উদ্দেশ্য হাসিলের জন্যে পাঠ করে, তবে আল্লাহ তা’আলা তা কবুল করেন।”
[ তিরমিযী, হাদীস নং : ৩৫০৫; হাদীসের মান : সহীহ ]
এর মানে কী, বুঝতে পেরেছেন? এই ধরুন, আপনার হালাল উপার্জনের ব্যবস্থা হচ্ছে না, বিয়ে হচ্ছে না, সন্তান হচ্ছে না, সন্তান কথা শুনছে না, ঋণগ্রস্থ, অভাবগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন, ইত্যাদি এরকম বিভিন্ন সমস্যায় আপনি জর্জরিত আছেন। মোটকথা, দিনকাল ভালো যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আপনি ইউনুস (আঃ) এর ঐ দোয়া পাঠ করে এগুলো থেকে মুক্তির দোয়া করবেন। আর এভাবে দোয়া করলে ঐ হাদীস অনুসারে আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করার ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। সুবহান’আল্লাহ। এবার বুঝুন, ইউনুস (আঃ) এর দোয়াটি কতোটা বেশি ইমপ্যাক্টফুল, কতোটা বেশি পাওয়ারফুল।
[৪]
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আমরা অনেকেই উল্লেখিত দোয়া নিজে পাঠ না করে অন্যকে এনে খতম করানো শুরু করে দিই। আল্লাহ এই দোয়া অন্যকে দিয়ে পড়ানোর জন্য নাযিল করেন নি। নিজের বিপদের সময় নিজেই এই দোয়ার আমল না করে অন্যকে এক প্রকার ভাড়া করে আমল করানো মূর্খতা ছাড়া কিছুই নয়। কারণ বিপদে পড়েছি আমি। তাই আমল তো আমারই করার কথা -তাই না!
আপনি নিজেই একটু ভাবুন তো, রোগ হয়েছে আপনার। এবার আপনার ঔষধ অন্যকে দিয়ে সেবন করালে কি আপনি সেই ফায়দা পাবেন যে ফায়দার জন্য আপনি ঔষধ খাওয়াচ্ছেন?
অন্তত কমনসেন্স বলে, নিশ্চয়ই না! ঠিক একইভাবে, বিপদে পড়েছেন আপনি। আল্লাহর কাছে আপনি নিজে সরাসরি না চেয়ে অন্যকে দিয়ে চাওয়াবেন- এটা কেমন কথা? আপনি বিপদে পড়েছেন তাই আপনার নিজেরই আল্লাহর কাছে দোয়া করার কথা। কিন্তু আপনি নিজে তা না করে ভাড়া করে কিছু মানুষ এনে মনগড়া পদ্ধতিতে দোয়া পাঠ করাচ্ছেন। এখানে কি আপনি আপনার কমনসেন্সটুকুও ব্যবহার করতে পারলেন?
ইউনুস (আঃ) বিপদে পড়ে নিজে আমল করেছিলেন নাকি অন্যকে দিয়ে করিয়েছিলেন?
আল্লাহ তো বলেছেন, তিনি নিজে আমল করেছেন। তাহলে আমরা কেন মনগড়া অন্যকে দিয়ে করাতে যাবো? কোরআন হাদীস কি আমাদের এমনটা করার নির্দেশ দিয়েছে নাকি বাপদাদা করেছেন বলে আমরাও তাদের মতো একই কাজ করে যাচ্ছি? তবে কোরআন হাদীস বাদ দিয়ে জাহেলি যুগের মূর্খদের মতো বাপদাদাদের বিশুদ্ধতার মানদণ্ড ধরছি না তো? তাদের অনুসরণ করতে গিয়ে সঠিকটা প্রত্যাখান করে অহংকারীর দলে নাম লিখাচ্ছি না তো?
প্রশ্ন হতে পারে, আমরা না হয় না জেনে না বুঝে হুজুরদেরকে দিয়ে খতম করাচ্ছি। কিন্তু তারা কেন আমাদেরকে বারণ না করে নিজেরাও করছেন?
দেখুন, অন্যের সংশোধনে না গিয়ে আমাদের বরং আগে নিজেদের সংশোধন করা উচিত। নিজে সংশোধন না হয়ে শুধু শুধু অন্যের দোষ খোঁজা অন্তত কোনো মুমিনের গুণ হতে পারে না। নিজেকে সংশোধন করে নিলে অন্যেরা এমনিতেই দেখে দেখে শিখে নিবে। তবে এটা ঠিক যে, কোরআন হাদীসে এরকম নির্দেশনা না থাকা সত্ত্বেও তারা কেন নিজেরা এসব খতম পড়ানোতে যুক্ত হচ্ছেন কিংবা বিদয়াত করছেন এই জবাব তাদেরকে একদিন আল্লাহর কাছে অবশ্যই দিতে হবে।