ইসলামের দৃষ্টিতে স্ত্রীর জন্য কি শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা ফরজ
আর যৌথ পরিবারে বা জয়েন্ট ফ্যামিলিতে বসবাসের বিধান কি?
ইসলামী শরিয়তে স্ত্রীর জন্য তার স্বামী ছাড়া অন্য কারও আনুগত্য করাকে ফরজ করা হয় নি। আর স্বামীর সেবা করা ও তাকে খুশি রাখা একজন স্ত্রী জান্নাতে যাওয়ার কারণ। কিন্তু স্বামীর পিতা-মাতা, ভাই-বোন বা অন্য কারো নির্দেশ পালন করা ফরজ নয় এবং তাদের সেবা করার বিষয়টি ঐচ্ছিক বিষয়।
তবে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা যেমন স্বামীর প্রতি ইহসান ও ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ অন্যদিকে নেকীর কাজ তাতে কোন সন্দেহ নাই। কোন স্ত্রী যদি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর-শাশুড়ির খেদমত করে তবে আল্লাহ তাআলা তাকে আখিরাতে পুরষ্কার প্রদান করবেন ইনশাআল্লাহ।
আমাদের সমাজে শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করাকে একজন নারীর ভালোগুণ হিসেবে ধরা হয়। তাই সামাজিক এই সুন্দর কালচারটি বজায় রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
তাছাড়া এটাও মনে রাখা দরকার যে, তার জীবনেও কোনও একদিন এমন সময় আসতে পারে যখন তার পুত্রবধূর সেবা প্রয়োজন দেখা দিবে। তাই সে যদি এখন সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করে তবে সে যখন শাশুড়ি হবে তখন আশা করা যায়, তার পুত্রবধূরা তার সেবা করবে।
আর জয়েন্ট ফ্যামিলিতে যদি দেবর-ভাশুর বা নন মাহরাম কেউ থাকে তবে আলাদাভাবে ঘর করা উচিৎ। কেননা, এ ধরণের ফ্যামিলিতে অনিচ্ছাবশত: নানাভাবে পর্দার লঙ্ঘন ঘটে থাকে। والله المستعان
স্বামীর অনুপস্থিতে স্ত্রীর দায়িত্ব-কর্তব্য কি?
স্বামী তার ভাই-বোনদেরকে দেখা-শোনার দায়িত্ব দিলে তা কি পালন করা আবশ্যক?
স্বামীর অনুপস্থিতিতে একজন নারীর দায়িত্ব হল, নিজের ইজ্জত, তার স্বামী ধন-সম্পদ ও সন্তান-সস্তুতির রক্ষণাবেক্ষণ করা।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,
“তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল (রক্ষণাবেক্ষণকারী),…. আর নারী তার স্বামীর ঘর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। অপর এক বর্ণনায় আছে: ‘নারী তার স্বামীর ঘর ও তার সন্তানের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে দায়িত্বশীল, আর তাকে তাদের ব্যাপারে তার দায়িত্বপালন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’
(বুখারি ও মুসলিম)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “স্বামীর উপস্থিতিতে তার অনুমতি ব্যতীত স্ত্রীর জন্য সওম (নফল রোজা) পালন করা বৈধ নয়; আর স্বামীর অনুমতি ছাড়া অন্য কাউকে তার গৃহে প্রবেশ করতে দেবে না …।”
(ইমাম বুখারি ও মুসলিম রহ. হাদিস বর্ণনা করেন)।
ইসলাম একজন স্ত্রীকে তার স্বামী ছাড়া আর কারও আনুগত্য করাকে আবশ্যক করে নি। তবে স্বামী যদি বিদেশে যাওয়ার সময় তার ছোট ভাই-বোনদেরকে দেখা-শোনার দায়িত্ব দিয়ে যায় তাহলে স্ত্রীর এই দায়িত্ব পালন করা উচিৎ। এটি স্বামীর প্রতি সদাচরণ ও ইহসানের অন্তর্ভুক্ত।
স্বামীর ছোট-ভাই বোনদেরকে দেখা শোনার ব্যাপারে জাবের রা. এর একটি ঘটনা খুবই প্রণিধানযোগ্য:
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি কুমারী নারী বিয়ে না করে তালাকপ্রাপ্তা নারীকে বিয়ে করেছ কেন?’
তিনি উত্তর দিলেন: আমার বাবা মারা গেছেন। আমার ছোট ছোট কয়েকজন বোন রয়েছে। তাদের লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার জন্যই আমি বয়স্ক নারী বিয়ে করেছি।
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “আল্লাহ তোমাকে বরকত দান করুন।” ( সহিহ বুখারি ও মুসলিম)।
দেখুন: জাবির রা. ছোট ছোট বোনদের লালন-পালন ও শিক্ষা দীক্ষার প্রয়োজনে বয়স্ক নারীকে বিয়ের কথা বললে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জন্য দুআ করেছেন। তিনি তাক তার উদ্দেশ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেন নি।
এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, প্রয়োজনে একজন স্বামী তার ভাই-বোনদের দেখা-শোনার দায়িত্ব দিতে পারে আর একজন আদর্শ স্ত্রী আন্তরিকতা সহকারে যথাসম্ভব তার স্বামীর পরিবারে সাহায্য করবে। এটি সুন্দর দাম্পত্য গড়তে ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা যায়।
বি: দ্র: আমাদের সমাজে যৌথ ফ্যামিলিতে একজন মহিলার সাথে তার প্রাপ্ত বয়স্ক দেবর এবং ভাসুরের যে খোলামেলা সম্পর্ক ইসলাম তা মোটেও সমর্থন করে না। কারণ হাদিসে স্বামী ভাই ও নিকটাত্মীয় নন মাহরাম পুরুষদেরকে ‘মৃত্যু সমতুল্য‘ বলা হয়েছে।
সুতরাং দেবর-ভাসুর ও ভাবীদের এহেন খোলামেলা ও পর্দা হীন চলাফেরা, হাসি-কৌতুক, নির্জন ঘরে যাতায়াত ইত্যাদি সবই হারাম। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন।
আমিন।