ব্যথিত হৃদয়
ফাতেহ্ মক্কা অর্থাৎ মক্কা বিজয়ের পরের ঘটনা। সেই সময় বহুবিবাহ ছিল বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের একটি মাধ্যম। এক গোত্রের সম্ভ্রান্ত একজন অন্য গোত্রের কাউকে বিয়ে করত দুটি গোত্রকে একত্রিত করার জন্য। বিশেষ করে যুদ্ধের পরে গোত্রগুলোর মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপনের জন্য এমন করা হতো। এক্ষেত্রে বানু মুস্তালাক, জুয়েরিয়ান, এবং অন্যান্য কিছু গোত্রের কথা আমরা সিরাতে জানতে পারি। এটাই ছিল তৎকালীন আরব সমাজের রীতি। এক গোত্রের সম্ভ্রান্ত পুরুষকে অন্য গোত্রের মহিলাকে বিয়ে করতে বলা হতো দুটো গোত্রকে একত্রিত করার জন্য এবং পারস্পরিক গোত্রীয় সম্প্রীতি দৃঢ় করার জন্য।
আবু জাহালের গোত্রের নাম বানু মাখযুম, আর রাসুলের (ﷺ) গোত্রের নাম বানু হাশেম। দুটি গোত্রই ছিল কাছাকাছি। ইসলামের পূর্বে তাদের সম্পর্কে উত্তপ্ততা বিরাজ করছিল। আবু জাহাল রাসুলকে (ﷺ) অত্যাচার করেছে, সে ছিল ঐ জাতির ফেরাউন। ফাতেহ মক্কার পরে দুই গোত্রের মুরুব্বীরা আলীকে (রা:) প্রস্তাব দিয়েছিল ফাতিমাহ বিনত আবি জাহালকে বিয়ে করার জন্য। আবু জাহালের মেয়ের নামও ছিল ফাতিমাহ। দুই গোত্রকে একত্রিত করাই ছিল এই প্রস্তাবের উদ্দেশ্য।
ফাতিমা (রা:) যখন এ প্রস্তাবের কথা জানতে পারেন, তিনি সহজাত ভাবে ব্যথিত হলেন। ফাতিমার (রা:) কানে এ প্রস্তাবের কথা গিয়েছে শুনে রাসুলও (ﷺ) ব্যথিত হলেন। মেয়ের কষ্ট দেখে রাসুলও (ﷺ) কষ্ট পেলেন। রাসুল (ﷺ) বললেন, “আল্লাহ যা হালাল করেছেন, আমি তা হারাম করবো না। কিন্তু, فاطمة بضعة مني، فمن أغضبها أغضبني – ফাতিমা আমার অংশ, তাঁকে যা কষ্ট দেয় তা আমাকেও কষ্ট দেয়।”
এটা ঠিক উপযুক্ত নয় যে একজন আল্লাহর নবীর কন্যাকে বিয়ে করবে এবং একই সাথে আল্লাহর শত্রুর কন্যাকেও বিয়ে করবে। উম্মতের ফেরাউন এবং আল্লাহর নবীর কন্যাকে একই সাথে?
কাজেই এই পরিস্থিতিতে রাসুল (ﷺ) হস্তক্ষেপ করলেন। তিনি এর পিছনে মানবিকতা ও আবেগকে তুলে ধরলেন।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলেমরা কিছু কথা উল্লেখ করেছেন। কল্পনা করুন, ফাতিমা (রা:) নিজ চোখে তাঁর বাবাকে আবু জাহল দ্বারা অত্যাচারিত হতে দেখেছেন। আবু জাহাল দ্বারা অত্যাচারিত হবার পরে, ফাতিমাই (রা:) তাঁর বাবার ক্ষত পরিষ্কার করে দিতেন। ইবনে হাজার রহিমুল্লাহ বলেন, মক্কা বিজয়ের পরে এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। একমাত্র ফাতিমা (রা:) ছাড়া রাসুলের (ﷺ) আর কোন কন্যা তখন বেঁচে ছিল না। ফাতিমা (রা:) তাঁর মাকে হারিয়েছেন, বোনদের হারিয়েছেন। কাজেই যা তাঁকে হতাশ করতে পারে, এমন কোন কিছুই কখনো উপেক্ষা করা হয়নি। তাঁর মা খাদিজার (রা:) মতো তাঁরও ছিল পরিপূর্ণ ঈমান।
এটা ঠিক যথাযথ ছিল না যে আলী (রা:) অন্য কাউকে বিয়ে করবেন। কাজেই রাসুল (ﷺ) হস্তক্ষেপ করলেন, তিনি তাঁর মর্মবেদনাও প্রকাশ করলেন। যদিও এই ব্যবস্থা ছিল তৎকালীন সমাজের রীতি, এর পিছনে মানবিক অনুভূতিও ছিল। ফাতিমা (রা:) যে ব্যথা অনুভব করেছিলেন, রাসুল (ﷺ) তা উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। কিন্তু তিনি ন্যায়ের বিরুদ্ধাচরণ করেনি। তিনি বলেননি এটা হারাম, তিনি বলেছিলেন, “সে আমার, আমি তাঁর, যা তাঁকে ব্যথিত করে তা আমাকেও ব্যথিত করে।” এটাই যথেষ্ট। আলী (রা:) এ ব্যাপারে আর অগ্রসর হলেন না, যখন তিনি ইঙ্গিত পেলেন ফাতিমা (রা:) কষ্ট পেয়েছেন।
আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) বৈবাহিক সম্পর্কের ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। এ ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই যে, আলী (রা:) এবং ফাতিমার (রা:) সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা নিয়ে কোন প্রশ্ন উঠতে পারে না। হে আল্লাহ আপনি তাদের দুজনের প্রতি সন্তুষ্ট হন।
আলী (রা:) ও ফাতিমার (রা:) সুখের সংসার
পর্ব: ৫
মূল: ড. ওমর সুলাইমান