কমন মিস্টেকস ইন রামাদান – মিসওয়াক
রমজান মাসে মুসলমানদের সাধারণ ভুলগুলোর মধ্যে একটি হলো মিসওয়াক না করা। অনেকেই রোজা রেখে দাঁত ব্রাশ করেন না বা মিসওয়াক করেন না, কারণ হাদিসে কুদসিতে আছে, রাসূল (সা.) বলেন—
‘যার হাতে আমার প্রাণ, তার শপথ , রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ মেশকের তুলনায় আল্লাহ তাআলার নিকট অধিক প্রিয় ; সে আমার উদ্দেশে তার পানাহার ও প্রবৃত্তিকে পরিত্যাগ করে, রোজা আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান। পুণ্যকর্মের প্রতিদান দশগুণ।
[বুখারি, হাদিস ১৮৯৪]
তার মানে এই নয় যে শুষ্ক মুখ এবং খালি পেটের কারণে মুখে যে গন্ধ হয় তা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা পছন্দ করেন। না, বরং এই হাদিসের অর্থ হলো রোজা রাখার ফলে মুখে যে গন্ধ হয় তা যেন আপনাকে বিচলিত না করে, এবং আপনার রোজা না রাখার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যদিও মুখের এই গন্ধ আপনার কাছে পছন্দনীয় নয়, তারপরও আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা রোজাদার ব্যক্তির মুখের গন্ধকে সম্মান করেন, কারণ আপনি রোজা রেখেছেন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে।
উলামাদের মত অনুসারে আগেকার দিনে কিন্তু সিওয়াক করার অনুমতি ছিল। সিওয়াক আসলে কি?
আপনি এটাকে অর্গানিক টুথব্রাশ বলতে পারেন, যা আমাদের রাসূল (সা.) ব্যবহার করতেন। আরাক গাছের নরম শিকড় থেকে তৈরি যা মুখে সুন্দর গন্ধ আনে। আধুনিক গবেষণায় উঠে এসেছে এই সিওয়াক আমাদের জন্য কতটা উপকারী, এমনকি আজকাল এর থেকে টুথপেস্টও তৈরি করা হয়। মূল কথা হলো আপনাকে সিওয়াক করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সুনানে আবু দাউদে যায়েদ বিন খালেদ আলজুহানী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি-
لولا أن أشُقَّ على أُمَّتي لأمَرتُهُم بالسّواكِ عندَ كُلِّ صلاةٍ.
আমার উম্মতের জন্য কষ্টের আশঙ্কা না হলে তাদের উপর মিসওয়াককে প্রতি নামাযের জন্য ফরয করে দিতাম।
রাসূল (সা.) সবসময় মিসওয়াক করতেন, রমজান মাসে মিসওয়াক করা যাবে না এমন কোন হাদিস পাওয়া যায়নি। কোন কোন আলেম বলে থাকেন জোহরের নামাজের পর মিসওয়াক করা জায়েজ নয়, কিন্তু তার আগে জায়েজ। বস্তুত এসব কথার কোন ভিত্তি নাই এবং কোন যুক্তি প্রমাণের উপরও প্রতিষ্ঠিত নয়। কাজেই আপনি দাঁত ব্রাশ করতে পারবেন, মাউথ ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুতে পারবেন, এবং মিসওয়াক করতে পারবেন।
যা অনুমোদিত নয় তা হল চুইংগাম চিবানো, মুখের দুর্গন্ধ দূর করার জন্য কিছু খাওয়া বা স্প্রে করা। আপনি দাঁত ব্রাশ করতে পারবেন, তবে খেয়াল রাখবেন যেন টুথপেস্ট গিলে না ফেলেন। ওজু করার সময় আপনি কুলি করে গার্গল করতে পারবেন, নাকের ভিতর পানি দিয়ে তা ঝেড়ে ফেলতে পারবেন। অনেকে মনে করেন রোজার সময় এসব করা যাবে না এবং করলেও খুব অল্প পরিমাণ পানি ব্যবহার করতে হবে। বস্তুত যথাযথভাবে অজু করবার অনুমতি আপনাকে দেওয়া হয়েছে। যে ব্যাপারে রাসূল (সা.) আমাদের অনুমতির দেননি তা হল অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করা – উদাহরণস্বরূপ গার্গল করতে গিয়ে পানি গিলে ফেলা, নাকের ভিতর পানি চলে যাওয়া। এই বাড়াবাড়ি গুলো এড়িয়ে চললেই হবে।
কাজেই এই জাতীয় বাড়াবাড়ি আপনি এড়িয়ে চলতে চান, কিন্তু দুর্ঘটনাবশত এমন কিছু যদি হয়ে যায়, তাতে কোন অসুবিধা হবে না। রোজা রেখে কুলি করা, নাকে পানি দিয়ে ঝেড়ে ফেলা, ফ্রেস হওয়ার জন্য গোসল করা, মিসওয়াক করা, দাঁত ব্রাশ করা – এসব সবই ঠিক আছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি পানি গিলে ফেলছেন। আল্লাহ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা যেন আমাদের সবার কাছ থেকে কবুল করে নেন।
মিসওয়াক
পর্ব: ১৭
মূল: শাইখ ওয়ালীদ বাসাইউনি