Writing

ডাক্তার জাকির নায়েকের বিয়ের গল্প

আমি একটা কথা বিশ্বাস করতাম যে, একজন ব্যক্তি ২৫ বছর বয়সে বিয়ে করা উচিত। কোনোভাবেই যেনো সেটা ২৭ না হয়। পঁচিশের মধ্যেই বিয়ে করতে হবে। আমি আমার পছন্দমতো পাত্রী খুঁজে পেলাম না। পাত্রী নির্বাচনে আমার শর্ত ছিলো মাত্র দুটো।

  • সে একজন দাঈ হবে
  • সে খুব ভালো ইংরেজি জানবে

পুরো মুম্বাই শহরে এই দুটো গুণসম্পন্না পাত্রী খুঁজে পেলাম না! আমাদের এক পারিবারিক বন্ধু বলল, পুনেতে একজন মেয়ে আছে। আমি যেরকম পাত্রী খুঁজছি, মেয়েটি সেরকম।

আমি, আমার মা ও আমার বোন মিলে মেয়েটিকে না জানিয়ে তাকে দেখতে গেলাম। তার পরিবারে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে কথা বললাম, আমার মা ও বোন তাকে দেখলেন, আমিও তাকে দেখলাম, তার সম্পর্কে জানলাম।

তখন আমি মনে করেছিলাম যে, আমি একটা পাপ করছি। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে মেয়ে দেখছি! পরে জানলাম, বিয়ের ক্ষেত্রে এমনটা পাপ না। সাহাবীরাও লুকিয়ে লুকিয়ে পাত্রী দেখেছেন। ইসলামে এটা অনুমোদিত।

[ডাক্তার জাকির নায়েক যে ঘটনাটির কথা এখানে উল্লেখ করেছেন, সেটা ছিলো সাহাবী মুহাম্মদ বিন সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনা।

মুহাম্মদ বিন সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:

“আমি এক মহিলাকে বিবাহের পয়গাম পাঠালাম। আমি তাকে দেখার জন্যে চুপিসারে তার বাগানে যাতায়াত করতাম এবং সেখানে তাকে দেখে ফেললাম। তাঁকে বলা হলো, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবী হয়ে তুমি এই কাজ করলে? তিনি বলেন, আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি:

“যখন আল্লাহ কারো অন্তরে কোন মহিলাকে বিবাহ করার প্রস্তাব দানের আগ্রহ পয়দা করেন, তখন তাকে দেখে নেয়াতে দোষের কিছু নেই।” (সুনানে ইবনে মাজাহ: ১৮৬৪)]

আমি তার সম্পর্কে জানার পর আকৃষ্ট হলাম। বলে রাখা ভালো যে, এর আগে আমি কোনো মেয়েকে ঐভাবে দেখিনি। সেই মেয়ে ছিলো আমার জীবনে দেখা প্রথম মেয়ে, যাকে আমি বিয়ের কথা ভেবেছি।

আমি এখনো মাঝেমধ্যে মজা করে আমার স্ত্রীকে বলি,

“তুমি আমাকে ভালোবাসার আগে আমি তোমাকে ভালোবেসেছি!”

সে আমল-আখলাক-জ্ঞানের দিক থেকে আমার চেয়ে অনেক এগিয়ে। কিন্তু, আগে ভালোবাসার দিক থেকে আমি ‘ক্রেডিট’ নিতে চাই।

আমার স্ত্রী ছিলো পুনের গার্লস ইসলামিক অর্গানাইজেশনের প্রেসিডেন্ট। সে বিয়ের আগেই একজন দাঈ ছিলো। পুনে শহরের মেয়েদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত দাঈ। সে উর্দুতে আলোচনা করতো, ইংরেজিতে আলোচনা করতো এবং কলেজের লেকচারার ছিলো।

আমি দেখলাম, আমি যেরকম পাত্রী খুঁজছি, সেরকম পেয়ে গেছি, আলহামদুলিল্লাহ্‌। তার নাম ফারহাত নায়েক। আমাদের বিয়ে হল।

বিয়ের পর আমাকে অনেকেই বলল, “বিয়ের আগে তো তুমি দাওয়াতের পেছনে অনেক সময় দিতে। এখন হয়তো সময় দেয়া কমে যাবে।”

বিয়ের আগে আমি দিনে নয় থেকে দশ ঘন্টা দাওয়াতের পেছনে ব্যয় করতাম। বিয়ের পর সেটা হয়ে গেল বারো থেকে তেরো ঘন্টা! আলহামদুলিল্লাহ্‌। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে মেয়েদের জন্য একটি দাওয়াহ সংগঠন গড়ে তুললাম। আমি সামলাতাম পুরুষদের সংগঠন, আমার স্ত্রী সামলাতো মেয়েদের সংগঠন।

১৬ অক্টোবর ১৯৯৩ সালে আমাদের বিয়ে হয়। খুবই সাদামাটা আয়োজন। আমাদের বিয়ে হয় মসজিদে। বাবার সামর্থ্য ছিলো বড় করে আয়োজন করার। কিন্তু, আমরা সিদ্ধান্ত নিই কম খরচে বিয়ে করবো।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“সর্বোত্তম বিয়ে হল সেগুলো, যেগুলো সহজতর।” [সহীহ আল-জামে: ৩২৭৯]

আমাদের বিয়েতে খাবার হিসেবে ছিলো শুধু খেজুর। শুকনো খেজুর। মজার ব্যাপার হল, এতো সহজভাবে বিয়ের আয়োজন করা সত্ত্বেও মসজিদে প্রায় দুই হাজার মানুষ উপস্থিত হয়! এটা আমার জন্য না, আমার বাবা জন্য। তার এতো এতো পরিচিত মানুষ ছিলেন, তারা বিয়েতে উপস্থিত হন।

আমরা ওয়ালিমার আয়োজন করি। ওয়ালিমায় আমন্ত্রণ জানানো হয় মাত্র ১৯ জন অতিথি। আমার পরিবারের কয়েকজন এবং পাত্রীর পরিবারের কয়েকজন। তাছাড়া আরো ৫০ জন ইয়াতিমকে আমরা দাওয়াত দিই। ইয়াতিমদেরকে আমাদের ওয়ালিমায় শরীক করি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

“নিকৃষ্টতম খাদ্য হল ওয়ালিমার খাদ্য যেখানে আগমনকারীদের (গরীব, ইয়াতিম) বাধা দেয়া হয়। আর অনিচ্ছুকদের দাওয়াত দেয়া হয়।” [সহীহ মুসলিম: ৩৪১৭]

যাদের খাবার সামর্থ্য আছে তাদেরকে দাওয়াত না দিয়ে আমরা তাদেরকে দাওয়াত দিলাম, যাদের খাবার সামর্থ্য নেই। ওয়ালিমাতে আমাদের ব্যয় হয় প্রায় ত্রিশ-পয়ত্রিশ হাজার টাকা। অতিথিরা আমাদের বাসার বিছানায় ঘুমায়, ফ্লোরে ঘুমায়। আমাদের সামর্থ্য ছিলো একটি ফাইভস্টার হোটেলে থাকার। কিন্তু, আমরা থাকি নি। যে টাকা ব্যয় করে ঝাকঝমক বিয়ের আয়োজন করতে পারতাম, সেই টাকা আমরা দাওয়াতের পেছনে ব্যয় করি। বিয়ে উপলক্ষ্যে যে খরচ বেঁচে গিয়েচিলো, সেগুলো দিয়ে আমরা দাওয়াতের একটি অফিস করি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture