রামাযানে অসুস্থ, মুসাফির ও অতিবৃদ্ধ রোযার ক্ষেত্রে করণীয়
কোনও ব্যক্তি যদি রমজান মাসে রোজা রাখতে সক্ষম না হয় তাহলে তার ফিদিয়া হিসেবে ৫০০ টাকা গরিব-মিসকিনকে দান করলেই আদায় হয়ে যাবে- একথাটা কতটুকু সঠিক?
রোজা কেউ রাখতে সক্ষম না হলে ইসলামের দৃষ্টিতে তার করণীয় কি?
সাময়িক রোগী ও মুসাফির ব্যক্তি রোযা রাখতে না পারলে করণীয়:
কোনো ব্যক্তি যদি রমযানুল মোবারকে অসুস্থ হয়ে যায় অথবা সফরে থাকে তাহলে তার জন্যে কী করণীয় আর কেউ যদি রমজানে রোযা রাখতে মোটেও সক্ষম না হয় সে ব্যাপারে ইসলাম কী বলেছে এর উত্তর আমরা সুরা বাকারার ১৮৪ নাম্বার আয়াতে পাই। আল্লাহ তা’আলা বলেছেন,
ٍ فَمَن كَانَ مِنكُم مَّرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۚ
“কোনো ব্যক্তি যদি অসুস্থ থাকে অথবা সফরে থাকে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে।
অর্থাৎ যে কয়দিন অসুস্থ থাকবে, অসুস্থ থাকার কারণে রোজা রাখতে সক্ষম হয়নি অথবা সফরে থাকার কারণে রোজা ভেঙে ফেলেছে তার জন্যে করণীয় হল, রমজানের পরে আগামী রমজান আসার আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় সেই রোযাগুলো কাযা করে নেয়া।
অতিবৃদ্ধ, জটিল রোগে আক্রান্ত বা মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তি যদি রোযা রাখতে সক্ষম না হয় তাহলে করণীয়:
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলছেন:
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
“আর এটি (রোযা রাখা) যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে।”
এই আয়াতের তাফসীর হল, কোনো ব্যক্তি যদি অতিরিক্ত বয়স হওয়ার কারণে কারণে অথবা শয্যাশায়ী রোগে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার কারণে রোজা রাখতে সক্ষম না হয় অর্থাৎ এমনভাবে অসুস্থ হয়েছে যে, এই রোগ থেকে আর মুক্তি পাওয়ার আর সম্ভাবনা দেখা যায় না বা প্রায় মৃত্যু পথযাত্রী। তাহলে এ ধরণের লোকের ক্ষেত্রে ফিদিয়া দিতে হবে। আর তা হল, একটা রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্যদ্রব্য প্রদান। কেননা অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন: فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
“একজন অসহায় মানুষকে খাবার ফিদিয়া দিবে।”
খাবার খাওয়ানো বা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা ফিদিয়া দেয়ার পরিমান ও পদ্ধতি:
এ মর্মে সম্মানিত মুফাসসির ও ফকীহগণ উল্লেখ করেছেন যে, প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন গরিব মানুষকে একবেলা পেটভরে খাবার খাওয়াতে হবে অথবা তাকে খাদ্যদ্রব্য দান করতে হবে। খাদ্যদ্রব্য প্রদানের নিয়ম হল, প্রত্যেক সমাজের প্রধান খাবার প্রায় অর্ধ সা’ তথা সোয়া/দেড় কিলোগ্রাম পরিমান প্রদান করা।
সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি একমাস রোযা রাখতে না পারে মৃত্যু পথযাত্রী হওয়ার কারণে অথবা অতিরিক্ত বয়স হয়ে যাওয়ার কারণে অথবা এমন রোগাক্রান্ত হওয়ার কারণে যে রোগ থেকে সুস্থ হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই তাহলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন গরিব-অসহায় মানুষকে একবেলা পেটপুরে তৃপ্তি সহকারে খাবার খাওয়াবে অথবা সোয়া/দেড় কিলো পরিমাণ চাল (যেটা আমাদের দেশের প্রধান খাদ্রদ্রব্য) দান করবে। তাহলেই যথেষ্ট হবে ইনশা আল্লাহ।
টাকা দিয়ে ফিদিয়া দেয়া:
যেমনটি আপনি যেমনটি প্রশ্ন করেছেন যে, ৫০০টাকা দিলে ফিদিয়া আদায় হবে কিনা?
আমরা বলব, যেহেতু কুরআনে কারীমে আল্লাহ সুবহানাহু তা’আলা طَعَام বলেছেন। طَعَام মানে খাবার বা খাদ্যদ্রব্য। সুতরাং খাবার খাওয়ানো বা খাদ্যদ্রব্য দান করা উচিৎ। এর পরিবর্ততে টাকা-পয়সা, পোশাক বা আসবাব-সামগ্রী কিনে দেয়া ঠিক হবে না।
সুতরাং যারা বলে যে ৫০০ টাকা দিলেই ফিদিয়া আদায় হয়ে যাবে তাদের কথা সঠিক নয়। সঠিক কথা হল, প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে একবেলার খাবার দিতে হবে। আর তা যদি আমরা সোয়া/দেড় কিলোগ্রাম চউল দেই (যেমনটি সম্মানিত ফকীহগণ উল্লেখ করেছেন)তাহলেও ইন শা আল্লাহ যথেষ্ট হবে।
অবশ্য যদি কেউ ফিদিয়া হিসেবে টাকা প্রাদান করে কিন্তু সেই টাকা দিয়ে গরীব-মিসকিনদেরকে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করে দেয়া হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ তাতেও অসুবিধা নেই।
আল্লাহু আলাম।