আব্বাসী খিলাফতের সবচেয়ে বড়ো বিচারক যিনি ছিলেন
একজন মা তার সন্তানকে ধোপার কাছে নিয়ে যেতেন। মায়ের ইচ্ছে ছেলেটি কাপড় ধোয়া শিখবে। নিজেই লন্ড্রি দিতে পারবে। কিন্তু, তার ছেলে ধোপার কাছে না গিয়ে একজন আলেমের মজলিসে বসা শুরু করে।
মা শুনতে পেলেন তার ছেলে ঠিকমতো কাজ না করে শুধু শুধু একজন বয়স্ক লোকের মজলিসে বসে অলস সময় কাটায়।
একদিন ছেলেকে নিয়ে মা সেই আলেমের কাছে গিয়ে বললেন, “আপনি আমার ছেলেকে পথভ্রষ্ট করছেন কেনো? তার কোনো সম্পদ নেই। আমি তাকে পাঠালাম ধোপার কাজ শিখতে আর আপনি তাকে বসিয়ে বসিয়ে জ্ঞান দিচ্ছেন।”
মায়ের কথা হলো, তার ছেলের ‘ক্যারিয়ার’ নষ্ট হচ্ছে। সে যে বয়সে উপার্জন করতে পারতো, সেই বয়সে একজন বয়স্ক লোকের কাছে বসে সময় নষ্ট করছে।
সেই আলেম ঐ ছেলের মাকে বললেন, “তুমি অপেক্ষা করো, একদিন এই ছেলে জেড পাথরের ট্রেতে ফালুদা খাবে।”
জেড পাথরের ট্রেতে ফালুদা যে কেউ খেতে পারে না। এগুলো রাজা-বাদশাহর খাবার পাত্র।
যে মায়ের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, তাকে বলা হচ্ছে তার ছেলে জেড পাথরের ট্রেতে ফালুদা খাবে। এ কোন পরিহাস!
কয়েক বছর পরের কথা। সেই ছোট্ট ছেলেকে আব্বাসী খিলাফতের চিফ জাস্টিস হিশেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তাঁকে ডাকা হতো ‘কাযীউল কুযাত‘, ‘কাযীউ কুযাতিদ দুনিয়া‘ বা দুনিয়ার বিচারকদের বিচারক। আব্বাসী খিলাফতের সবচেয়ে বড়ো বিচারক তিনি।
একদিন আব্বাসী খলিফা হারুন-অর-রশীদ তাকে ডেকে জেড পাথরের ট্রেতে ফালুদা খেতে দেন। খলিফার দেয়া এমন আপ্যায়ন দেখে তার ছোটোবেলার কথা মনে পড়ে।
তিনি ধোপার কাছে না গিয়ে একজন আলেমের কাছে যান। সেই আলেমের কাছে জ্ঞানার্জন করে আব্বাসী খিলাফতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন অলংকৃত করেন। অথচ তার মা চেয়েছিলেন তিনি ধোপা হন, সেই আলেম চেয়েছিলেন তিনি আলেম হন।
ফালুদা খেতে খেতে তিনি তাঁর উস্তাদের জন্য দু’আ করেন। উস্তাদের দূরদর্শিতা দেখে উস্তাদের প্রতি তার মুগ্ধতা বেড়ে যায়।
সেই কাযী ছিলেন ইমাম আবু ইউসুফ রাহিমাহুল্লাহ আর তাঁর শিক্ষক ছিলেন ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহ।
[মুসলিম সভ্যতায় জ্ঞানার্জনের ইতিহাস নিয়ে লেখা ‘উত্তরসূরি’ উপন্যাস থেকে]