দান সদকা করার সময় আমরা যেন খেয়াল রাখি
আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহ একবার হজ্জে যাবার সময় অনেকগুলো পাখি নিয়ে যান। যাত্রাপথে একটি পাখি মারা গেলো। মারা যাওয়া পাখিটি তো আর খাওয়া যাবে না, তার সঙ্গীরা পাখিটি একটি ডাস্টবিনে ফেলে দিলো।
তিনি ছিলেন কাফেলার পেছনে। তিনি লক্ষ্য করলেন এক মেয়ে ডাস্টবিন থেকে মরা পাখিটি নিয়ে যাচ্ছে।
আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক বেশ অবাক হলেন। মেয়েটির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী ব্যাপার, আপনি মরা পাখিটি ডাস্টবিন থেকে তুলে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
“বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।”
“বাড়িতে!? বাড়িতে নিয়ে কী করবেন।”
মেয়েটি বললো, “আমরা খাবো। আমাদের খাবার মতো কিছু নেই। কিছুদিন আগে আমাদের বাবা ইন্তেকাল করেছেন। তার সকল সম্পত্তি আত্মসাৎ করা হয়েছে। আমাদেরকে খাবার জন্য ডাস্টবিনের দিকে চেয়ে থাকতে হয়। মানুষ উচ্ছিষ্ট কিছু ফেলে গেলে সেগুলো তুলে আমি আর আমার ভাই খাই।”
ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক মেয়েটির কথা শুনে আবেগাপ্লুত হলেন। তিনি তার সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমাদের কাছে হজ্জে যাওয়া বাবদ কতো টাকা আছে?”
“১০০০ দিনার।”
“তাহলে সেখান থেকে ২০ দিনার রেখে বাকি টাকাগুলো মেয়েকে দিয়ে দাও। ২০ দিনার দিয়ে আমরা আমাদের শহরে ফিরে যাবো। এবার আর হজ্জে যাবো না।”
সেবার ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক তার হজ্জযাত্রা স্থগিত করেন। হজ্জে যাবার জন্য যে টাকা নিয়ে বের হয়েছিলেন, পুরোটা সেই মেয়েকে দিয়ে দেন।
শহরে ফেরার পর একদিন আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক স্বপ্নে দেখেন তাকে কেউ বলছেন, “ও আব্দুল্লাহ! সুসংবাদ গ্রহণ করো। আল্লাহ তোমার দান কবুল করেছেন। একজন ফেরেশতা তোমার হয়ে হজ্জ পালন করেছে।”
তিনি জীবনে অনেকবার হজ্জ করেন। ফরজ হজ্জ আদায় করেন। আর ঐ একবার একজন অভাবীর অভাব দূর করার জন্য হজ্জে যাবার উপলক্ষ্য বিসর্জন দেন।
মানুষের প্রতি দয়া দেখালে উপরওয়ালা তার প্রতি দয়া দেখান। বর্তমানে দেশের অসংখ্য মানুষ ঐ মেয়েটির মতো জীবনযাপন করছে। আপনি আপনার নিজের অবস্থান থেকে আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক রাহিমাহুল্লাহর মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন। ২০০-৫০০ টাকা করে দশজন গরীবকে না দিয়ে একসাথে একজনকে ২০০০/৩০০০ টাকা দিন৷ এতে করে সে এককালীন কিছু কিনতে পারবে।
দান করার সময় আমরা যেন এটা মাথায় রাখি, দানকৃত অর্থ দিয়ে সে কিছু করতে পারে কিনা।