২১তম রাতটি শবে কদরের সম্ভাবনাময় রাত

আজ রামাদানের ২১তম রাত। সম্ভাব্য কদরের রাত। নবিজির সময়ে রামাদানের ২১তম রাতে একবার কদর সংঘটিত হয়েছিলো।

আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাদানের প্রথম দশকে (১-১০ তারিখ) ইতিকাফ করলেন। এরপর মাঝের দশকেও (১১-২০) একটি তুকি তাঁবুর মধ্যে ইতিকাফ করলেনে এবং তাঁবুর দরজায় একটি চাটাই ঝুলানো ছিলো। তিনি নিজ হাতে চাটাই ধরে তা তাঁবুর কর্নারে রাখলেন। এরপর নিজের মাথা বাইরে এনে লোকদের সাথে কথা বললেন এবং তারাও তাঁর নিকট এগিয়ে এলো। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘এ রাত (কদরের রাত) অনুসন্ধানে আমি (রামাদানের) প্রথম দশকে ইতিকাফ করলাম। অতঃপর মাঝের দশকে ইতিকাফ করলাম। এরপর আমার নিকট একজন আগন্তুক এসে আমাকে বললো, ‘এটি শেষ দশকে নিহিত আছে।’ অতএব তোমাদের (সাহাবিগণের) মধ্যে যে ব্যক্তি ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন (শেষ দশকে) ইতিকাফ করে।’’ বর্ণনাকারী বলেন, লোকজন তাঁর সাথে (শেষ দশকে) ইতিকাফ করলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, ‘‘স্বপ্নে আমাকে এটি (কদর) কোনো এক বিজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং আমি যেন সে রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ভোরে সিজদা করছি।’’ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, তিনি (নবিজি) ২১তম রাতের ভোরে উপনীত হয়ে ফজরের নামাজে দাঁড়ালেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হলো। ফলে ছাদ থেকে মসজিদে পানি বর্ষিত হলো এবং আমি নিজ চোখে কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। তিনি ফজরের নামাজ শেষে যখন বের হয়ে এলেন, তখন তাঁর কপাল ও নাকের ডগা সিক্ত ও কাদামাখানো ছিলো। আর সেটি ছিলো রামাদানের শেষ দশকের ২১তম রাত।1

অর্থাৎ, নবিজি যা স্বপ্নে দেখেছেন, ২১তম রাতের দিন হুবহু তাই বাস্তব হয়েছিলো।

অনেক মুহাদ্দিস (হাদিসবিশারদ) এই হাদিস থেকে ব্যাখ্যা করেছেন যে, সে বছর কদর হয়েছিলো ২১তম রাতে। মুফতি আমিমুল ইহসান (রাহ.) সংকলিত ও ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহ.) অনূদিত ‘ফিকহুস সুনানি ওয়াল আসার’ গ্রন্থে (১/৪৮০) এই বিষয়টি টীকায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তাছাড়া পূর্বসূরি নেককার ব্যক্তিদের অনেকেই রামাদানের ২১তম রাতকে কদরের রাত মনে করতেন। ইমাম ইবনু হাজার আসকালানি (রাহ.) তাঁর বিশ্ববিখ্যাত সহিহ বুখারির ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল বারি’তে এটি উল্লেখ করেছেন। তবে, প্রতি বছর ২১তম রাতেই কদর হবে, এটি নিশ্চিত নয়। এই রাতটি পরিবর্তিত হতে পারে। এ ব্যাপারে একটি পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে, ইনশাআল্লাহ।

আজ রাতে আমরা বেশি বেশি নেক আমল (সলাত, তিলাওয়াত, দান-সাদাকাহ, যিকর, তাসবিহ, তাওবাহ, ইস্তিগফার) করবো, ইনশাআল্লাহ।

  1. ইমাম মুসলিম, আস-সহিহ: ২৬৬১ ↩︎

লিখেছেন

নুসুস টিম

কুরআন ও হাদিসের মূল পাঠকে নুসুস (text) বলা হয়। নুসুসের উপর ভিত্তি করেই আমরা লেখালেখি করি।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন
Exit mobile version