Table of Contents
কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) কী?
الكبائر هي كل ذنب أطلق عليه في الكتاب أو السنة أو الإجماع أنه: كبيرة ، أو عظيم ، أو أخبر فيه بشدة العقاب ، أو علق عليه الحد ، أو لعن فاعله ، أو حرم من الجنة
“কবিরা গুনাহ হল সেই সব পাপ, যেগুলোকে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায় (সর্বসম্মতভাবে) বড় বা মহাপাপ বলে উল্লেখ করা হয়েছে অথবা যে পাপের ব্যাপারে কঠোর শাস্তির কথা বলা হয়েছে অথবা যে অপরাধের ব্যাপারে ফৌজদারি দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে অথবা যে পাপ করলে পাপীকে অভিসম্পাত করা হয়েছে অথবা জান্নাত থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।”
কবিরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার মর্যাদা:
১. মহান আল্লাহ বলেন,
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَنُدْخِلْكُم مُّدْخَلًا كَرِيمًا
"যে সব বিষয়ে সম্পর্কে তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে যদি তোমরা সেসব বড় গোনাহ গুলো থেকে বেঁচে থাকতে পার তবে আমি তোমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো ক্ষমা করে দেব এবং সম্মান জনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করার।"
[সূরা নিসা: ৩১]
তিনি আরও বলেন,
الَّذِينَ يَجْتَنِبُونَ كَبَائِرَ الْإِثْمِ وَالْفَوَاحِشَ إِلَّا اللَّمَمَ ۚ إِنَّ رَبَّكَ وَاسِعُ الْمَغْفِرَةِ
"যারা বড় বড় গুনাহ ও অশ্লীল কার্যাবলী থেকে বেঁচে থাকে ছোটখাটো অপরাধ করলেও নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার ক্ষমা সুদূর বিস্তৃত।"
[সূরা নাজম: ৩২]
২. রসুলুল্লাহ (সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
الصَّلَوَاتُ الْخَمْسُ وَالْجُمُعَةُ إِلَى الْجُمُعَةِ وَرَمَضَانُ إِلَى رَمَضَانَ مُكَفِّرَاتٌ مَا بَيْنَهُنَّ إِذَا اجْتَنَبَ الْكَبَائِرَ
“কবিরা গুনাহ (বড় পাপ) থেকে বিরত থাকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, এক জুমা থেকে আরেক জুমা, এক রমজান থেকে আরেক রমজানের মধ্যে সংঘটিত সমস্ত পাপ রাশী মোচন হয়ে যায়।”
[মুসলিম]
কুফরি পর্যায়ের বড় পাপ সমূহ ◈ সবচেয়ে বড় পাপ ◈ ধ্বংসাত্মক পাপ সমূহ
১. আল্লাহর সাথে শিরক (অংশী স্থাপন) করা:
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
أَلا أُنَبِّئُكُمْ بأَكْبَرِ الكَبائِرِ قُلْنا: بَلَى يا رَسولَ اللَّهِ، قالَ: الإشْراكُ باللَّهِ
“সব চেয়ে বড় পাপ কোনটি তা কি তোমাদেরকে জানাবো না? তা হল, আল্লাহর সাথে শিরক (অংশী স্থাপন) করা।”
[বুখারি- মুসলিম]
২. নামাজ পরিত্যাগ করা:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
ليسَ بينَ الكفرِ والإيمانِ إلَّا تركُ الصَّلاة
“মুসলিম এবং কাফের-মুশরিকের মাঝে নামাজ পরিত্যাগ ব্যতিরেকে অন্য কোন পার্থক্য নেই।” [সহিহ মুসলিম]
৩-৫. মানুষ হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া:
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম বলেন, সব চেয়ে বড় পাপ কোন টি তা কি তোমাদেরকে বলব না? তা হল:
الإشْرَاكُ باللَّهِ، وعُقُوقُ الوَالِدَيْنِ، وقَتْلُ النَّفْسِ، وشَهَادَةُ الزُّورِ
“আল্লাহর সাথে শিরক করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা ও মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।”
[সহিহ মুসলিম]
৬. পিতা-মাতাকে অভিসম্পাত করা:
রসুলুল্লাহ (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম) বলেন,
إنَّ مِن أكبَرِ الكَبائِرِ أنْ يَلعَنَ الرجُلُ والِدَيه قالوا يا رسولَ اللهِ وكيفَ يَلعَنُ الرجُلُ أبَوَيه ؟ قال: يَسُبُّ الرجُلُ الرجُلَ فيَسُبُّ أباه ويَسُبُّ الرجُلُ أُمَّه فيَسُبُّ أُمَّه
“অন্যতম বড় পাপ হল, পিতা মাতাকে অভিসম্পাত করা। জিজ্ঞেস করা হল, মানুষ আবার কিভাবে পিতা মাতাকে অভিসম্পাত করে? তিনি বললেন, “একজন মানুষ যখন অন্যের পিতা মাতাকে গালি দেয় তখন সেও প্রতিউত্তরে তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়।” [বুখারি ও মুসলিম]
৭-১১. সাতটি ধ্বংসাত্মক অপরাধ:
রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
اجْتَنِبُوا السَّبْعَ المُوبِقَاتِ قالوا: يا رَسُولَ اللَّهِ، وَما هُنَّ؟ قالَ: الشِّرْكُ باللَّهِ، وَالسِّحْرُ، وَقَتْلُ النَّفْسِ الَّتي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بالحَقِّ، وَأَكْلُ الرِّبَا، وَأَكْلُ مَالِ اليَتِيمِ، وَالتَّوَلِّي يَومَ الزَّحْفِ، وَقَذْفُ المُحْصَنَاتِ المُؤْمِنَاتِ الغَافِلَاتِ
“তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক অপরাধ থেকে দূরে থাক।
(১) আল্লাহর সাথে শিরক,
(২) জাদু-টোনা,
(৩) মানুষ হত্যা যা আল্লাহ নিষেধ করেছে ইসলামের হক ছাড়া (অর্থাৎ ইসলামি আইনগত হত্যার বিধান ভিন্ন)
(৪) সুদ খাওয়া
(৫) এতিমের সম্পদ ভক্ষণ
(৬) যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন এবং
(৭) সতী-সাধ্বী মুমিন নারীর প্রতি (জিনার) অপবাদ।”
[বুখারি ও মুসলিম]
যে সব গুনাহ জান্নাতে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে:
১২. ঈমান না আনা:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلا مُؤْمِنٌ
“ইমানদার ব্যতীত কেউ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
[বুখারি ও মুসলিম]
তিনি আরও বলেছেন,
لا تَدْخُلُوا نَ الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا
“তোমরা ঈমান না আনা পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন না।”
[সহিহ মুসলিম, হা/৫৪]
১৩. প্রতিবেশীকে কষ্ট দেওয়া:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لا يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ
“যার অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ থাকে না সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” [সহিহ মুসলিম, হা/৪৬]
১৪. অহংকার করা:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ كَانَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ كِبْرٍ
“যার অন্তরে অণু পরিমাণ অহংকার রয়েছে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
[মুসলিম, হা/৯১]
১৫. চোগলখোরি ও পরনিন্দা করা:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ نَمَّامٌ
“চুগলখোর বা পর নিন্দা কারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
[সহিহ মুসলিম, হা/১০৫]
تَجِدُ مِنْ شَرِّ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عِنْدَ اللَّهِ ذَا الْوَجْهَيْنِ الَّذِي يَأْتِي هَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ وَهَؤُلَاءِ بِوَجْهٍ
“কিয়ামতের দিন সবচেয়ে খারাপ লোকদের দলভুক্ত হিসেবে ঐ ব্যক্তিকে পাবে যে, যে ছিল দু মুখো- যে এক জনের কাছে এক চেহারা এবং আরেক জনের কাছে আরেক চেহারা নিয়ে হাজির হত।”
[সহিহ মুসলিম, হা/২৫২৬]
১৬. আত্মহত্যা করা:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
مَنْ تَرَدَّى مِنْ جَبَلٍ فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَهْوَ فِى نَارِ جَهَنَّمَ ، يَتَرَدَّى فِيهِ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ تَحَسَّى سَمًّا فَقَتَلَ نَفْسَهُ ، فَسَمُّهُ فِى يَدِهِ ، يَتَحَسَّاهُ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا ، وَمَنْ قَتَلَ نَفْسَهُ بِحَدِيدَةٍ ، فَحَدِيدَتُهُ فِى يَدِهِ ، يَجَأُ بِهَا فِى بَطْنِهِ فِى نَارِ جَهَنَّمَ خَالِدًا مُخَلَّدًا فِيهَا أَبَدًا
“যে ব্যক্তি পাহাড়ের ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করবে, সে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষিপ্ত হবে এবং সেখানে সর্বদা উপর থেকে নিচে নিক্ষিপ্ত হতেই থাকবে অনন্তকাল। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করবে সে জাহান্নামের আগুনে বিষ হাতে নিয়ে সদা-সর্বদা তা ঢকঢক করে পান করতেই থাকবে ধরে অনন্তকাল ধরে। যে ব্যক্তি ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে সে জাহান্নামের আগুনে ধারালো অস্ত্র হাতে নিয়ে নিজের পেট ওফাড়-ওফাড় করতে থাকবে অনন্তকাল ধরে।”
[সহিহ বুখারি, হা/৫৪৪২ ও সহিহ মুসলিম, হা/১০৯]
১৭. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা:
রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ قَاطِعُ رَحِمٍ
“আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।”
[সহিহ মুসলিম, হা/২৫৫৬]
১৮. হারাম খাওয়া:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ
“হারাম অর্থের মাধ্যমে (যে শরীরে) মাংস বৃদ্ধি পেয়েছে তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (অর্থাৎ যে ব্যক্তি হারাম অর্থ ও অবৈধ উপার্জন দ্বারা দেহ গঠন করেছে জাহান্নামের আগুনই তার প্রাপ্য।)”
[আহমদ, ইবনে হিব্বান। তাখরীজ। সহিহ-মিশকাতুল মাসাবিহ, আলবানি, হা/২৭০৩]
১৯-২৩. উপকার করে খোটা দানকারী, মাদকাসক্ত (নেশাগ্রস্থ), জাদুর বৈধতায় বিশ্বাসকারী, গণক ও তকদির (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকারকারী:
রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
لا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ خَمْسٌ ، مُدْمِنُ خَمْرٍ ، وَلا مُؤْمِنٌ بِسِحْرٍ ، وَلا قَاطِعُ رَحِمٍ ، وَلا مَنَّانٌ ، وَلا كَاهِنٌ
“পাঁচ শ্রেণির মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না: মাদকাসক্ত, জাদুর বৈধতায় বিশ্বাসী, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, উপকার করে খোটা দানকারী এবং গণক।” [মুসনাদে আহমদ, হাসান-আলবানি]
অন্য বর্ণনায় আছে,
لا يدخل الجنة : المنان ولا مدمن خمر ولا مؤمن بسحر و لا مكذب بقدر ولا كاهن
“তকদির (ভাগ্যের লিখন) অস্বীকারকারী।” [মুসনাদে আহমদ]
২৪. ঋণ পরিশোধ না করা:
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কোন ঋণগ্রস্ত মৃতের লাশ (জানাজার জন্য) নিয়ে আসা হলে জিজ্ঞেস করতেন, “সে ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করেছে কি না?”
যদি বলা হত করেছে, তবে জানাজা পড়তেন। অন্যথায় (সাহাবিদেরকে) বলতেন,
صَلُّوا عَلَى صَاحِبِكُمْ
“তোমরা তোমাদের সাথীর জানাজা পড়ে নাও।” (কিন্তু তিনি নিজে তাতে অংশ গ্রহণ করতেন না)।
[সহিহ মুসলিম, হা/১৬১৯]
অন্য হাদিসে রয়েছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
يُغْفَرُ لِلشَّهِيدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ
“শহিদের ঋণ ছাড়া সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
[সহিহ মুসলিম, হা/১৮৮৬]