জামাতে সালাতের ২৭গুন সওয়াব নারীরা কিভাবে পাবে
জামাতে সালাতের ২৭গুন সওয়াব নারীরা অর্জন করবেন যেভাবে
শায়খ আহমাদুল্লাহ – Islami Lecture
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন জামাতের সাথে সালাত আদায় করলে সেটি একাকী সালাত আদায় চাইতে ২৭ গুণ অধিক ফজিলতপূর্ণ।
এ হাদীসের ভিত্তিতে অনেক মা-বোন প্রায় প্রশ্ন রাখেন যে, একজন পুরুষ, তিনি মসজিদে গিয়ে জামাতে সালাত আদায় করলে ২৭ গুণ সওয়াব এর অধিকারী হচ্ছেন। একাকী সালাত আদায় কারী ব্যক্তির চাইতে।
একজন নারী তিনি শুধুমাত্র নারী হিসেবে সৃষ্টি হওয়ার কারনে, বাসায় একাকী সালাত আদায় করতে হয় তিনি জামাতে শামিল হতে পারেন না। সে ক্ষেত্রে তিনি ২৭ গুণ ফজিলত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এক্ষেত্রে তার করণীয় কি?
একই প্রশ্ন অন্য অনেক আমলের ক্ষেত্রে দেখা দেয়, যেমন জুমার দিন আগে আগে মসজিদে হাজির হওয়ার জন্য যে বিপুল পরিমাণ সাওয়াব এর কথা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। একজন নারী সে ফজিলত থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত থাকেন এক্ষেত্রে তাদের করণীয় কি?
এ বিষয়ে সর্বপ্রথম আমরা যে কথাটি বলতে চাই তা হল রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন হাদিসে তিনি বলেছেন, মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২৭০৯০
মেয়েদের জন্য সবচেয়ে উত্তম সালাত হলো বাসায় সালাত আদায় করা। একজন নারী মদিনার অধিবাসী ছিলেন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর কাছে বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমি আপনার পিছনে নববীতে উপস্থিত হয়ে জামাতের সাথে সালাত আদায় করতে চাই, এটা আমার ভালো লাগে।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাকে বলেছিলেন যে আমার পিছনে সালাত আদায় করার চাইতে তোমার বাসায় সালাত আদায় করা উত্তম এবং বাসার যত অভ্যন্তরের বা ভিতরে গিয়ে তুমি যত সালাত আদায় করবে তোমার জন্য আরও বেশি উত্তম হবে।
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড মুফতি এবং বিশ্ব বিখ্যাত ইসলামিক স্কলার শেখ আব্দুল্লাহ ইবনে আজিজ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এসমস্ত হাদিসে ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেছেন যে, যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আফজালুর শব্দ ব্যবহার হয়েছে অর্থাৎ আমার পিছনে মসজিদে জামাতে একজন নারী শামিল হয়ে সালাত আদায় করার চাইতে, তোমার বাসায় সালাত আদায় করলে আরও বেশি উত্তম হবে। এখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বেশি উত্তম হবে বলেছেন এর মানে হলো সওয়াবের দিক থেকে ২৭ গুণের সমপরিমাণ কিংবা তার চেয়েও বেশি উত্তম হবে এ কারণে যে তুমি আল্লাহ এবং তার রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিদ্ধান্ত মেনেছে এবং তুমি তোমার বাসায় সালাত আদায় করেছো।
অতএব নারীরা যদি বাসায় সালাত আদায় করে এবং তাদের মধ্যে যদি আগ্রহ থাকে যে যদি পুরুষ হয়ে জন্ম হতাম অবশ্যই জামাতের সাথে সালাত আদায় করতাম। আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাদেরকে বাসায় বসে একাকী সালাত আদায় করলেও ২৭ গুণ যে সওয়াব পুরস্কার লাভ করেছেন সেটি তাদেরকে দান করবেন।
দ্বিতীয় কথা হল যে সেই মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে প্রথম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের পথ মানুষকে দেখাবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো কাজ সম্পাদন কারীর অনুরূপ সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাকেও দান করবেন।
অতএব মা বোনরা তাদের বাসায় যে সমস্ত পুরুষরা থাকেন। যেমনঃ- স্বামী, বাবা, ছেলে বা ভাই তাদেরকে যদি মসজিদে জামাতে উপস্থিত হওয়ার জন্য, শামিল হওয়ার জন্য সহযোগিতা করেন। ডেকে তুললেন স্মরণ করিয়ে দেন তাগিদ দেন তাহলে ইনশাল্লাহ ভালো কাজের পথ দেখানোর মাধ্যমে তারাও একই পরিমাণ কাজের সওয়াব অর্থাৎ ২৭ গুণ সওয়ার তারা লাভ করতে পারেন।
সেই সাথে আরেকটি কথা না বললেই নয় তা হল, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কিছু কিছু আমল পুরুষদের জন্য প্রযোজ্য রেখেছেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হলেও কিছু আমল এর ফজিলত নারীদের জন্য ফজিলত পুরুষরা চাইলেও পারবে না। যেমনঃ- কোন নারী যদি সন্তান প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তার জন্য শাহাদাতের মর্যাদা কথা বলা হয়েছে। কোন নারী যদি হজ্ব করেন, নারীদের হজ্ব জিহাদের সমতুল্য বলা হয়েছে।
সে সেটা কিন্তু পুরুষদের জন্য বলা হয়নি। এজন্য কিছু কিছু ফজিলত আছে যেগুলো পুরুষদের জন্য আবার কিছু কিছু ফজিলত আছে যেগুলো মেয়েদের জন্য। অতএব এ সমস্ত ফজিলতগুলো আমরা অর্জন না করতে পারার যে কষ্ট লাগাটা অস্বাভাবিক নয় কিন্তু এর জন্য খুব বেশি ব্যাকুল হওয়া আমাদের জন্য উচিত নয়।
সলাতের বিষয়টি আরো বেশি স্বতন্ত্র। কারণ একজন নারী যদি আল্লাহ এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর সিদ্ধান্ত মেনে বাসায় সালাত আদায় করেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর সালাত কি পুরুষের মসজিদের সালাতের চেয়ে উত্তম বলেছেন। তার মানে বেশি সওয়াব দান করবেন তাকে এ বিষয়ে তার মন খারাপ করার কোন কারন নেই।
আর মেয়েদের মসজিদে উপস্থিত প্রসঙ্গত চলে আসে। সাধারণ অবস্থা মেয়েরা মসজিদ না এসে বাসায় সালাত আদায় করা উত্তম। এ বিষয়টি নিয়ে কোন স্কলার এর কোন দ্বিমত নেই। তবে মসজিদে কোন দ্বীনি কোন প্রোগ্রামে উপস্থিত হওয়া এবং তারা যখন বাজারে যাবেন বা ডাক্তার দেখাতে যাবেন বা বাইরে থাকবেন। তখন তারা মসজিদে হাজির হয়ে সালাত আদায় করতে পারবেন, এটা তাদের জন্য জায়েজ বা করা উচিত, এ বিষয়ে কোনো স্কলার কোন প্রকার দ্বিমত নেই।
অতএব পাবলিক প্লেসে রাস্তার আশেপাশে যে সমস্ত মসজিদ গুলো রয়েছে সেগুলোতে নারীদের জন্য ছোট পরিসরে হলেও সলাতের আয়োজন অবশ্যই থাকা উচিত সেটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সকলকে নেক কাজে একে অন্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতা অবতীর্ণ হওয়ার জন্য তৌফিক দান করুন।