Writing

হযরত যুল-কিফল আ.

নবী আল-ইয়াসা আলাইহিস সালাম যখন শেষ বয়সে পা রাখলেন তখন তিনি কেউ একজনকে তার স্থলাভিষিক্ত করার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তিনি বুঝতে পারছিলেন তার সময় শেষ হয়ে আসছে। তাই একদিন সভা ডেকে ঘোষণা দিলেন তার ইচ্ছার কথা। সাথে শর্ত জুরে দিলেন তিনটি। যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তাকে সর্বদা সিয়াম পালন কারী, ইবাদতে রাত্রি জাগরণকারী এবং কখনো রাগান্বিত হোন না এমন হতে হবে।

ঘোষণা শুনে সবাই বেশ চুপচাপ। খানিক পরে একটি হাত উপরে উঠতে দেখা গেলো। লোকটি দাঁড়িয়ে বললো সে এই দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করে। সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকালো। কিন্তু নবী আল ইয়াসা আ. ঐ লোকের উপর কেন জানি বিশ্বাস রাখতে পারছিলেন না। তিনি চুপ করে রইলেন। পরেরদিন আবারও একই ঘোষণা দিলেন তিনি।

সবাইকে অবাক করে দিয়ে আজও ঐ একই ব্যক্তি উঠে দাঁড়ালো। এবার মুখ খুললেন নবী আল- ইয়াসা আ.। মহান দায়িত্বের স্থলাভিষিক্ত করলেন ঐ লোকটিকে। জানতে ইচ্ছে হয় লোকটি কে ছিলো?
তিনি ছিলেন নবী হযরত যুল-কিফল আলাইহিস সালাম।

হযরত যুল-কিফল আ. একদম শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছেন। যে কারণে তার উপাধি ‘আল যুল-কিফল’ বা দায়িত্ব পূর্ণকারী। পরবর্তীতে তিনি নবুয়ত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। শয়তান অনেক চেষ্টা করেছিলো তাকে তার দায়িত্বে গাফলতি এনে দিতে কিন্তু প্রতিবারই ব্যর্থ হয়েছিলো। স্বয়ং ইবলিশও তাকে রাগান্বিত করার কূটকৌশল করে চরমভাবে ব্যর্থ হতে বাধ্য হয়েছিলো। এ নিয়ে বেশ মজার একটি ঘটনার বর্ণনা পাওয়া যায়।

সারা রাত ইবাদতে কাটানোর ফলে নবী যুল-কিফল আ. ক্লান্তি দূর করতে দুপুরবেলা একটু ঘুমাতেন। শয়তান ইচ্ছা করলো এই সময়ে তাকে বিরক্ত করলে হয়তো তিনি রাগান্বিত হয়ে যাবেন এবং তার শর্ত ভঙ্গ হবে। তাই একদিন বৃদ্ধের ভেশ ধরে শয়তান দুপুরবেলা ঠিক ঘুমের সময় এসে যুল-কিফল আ. এর দরজায় কড়া নাড়লো। ঘুম ভেঙ্গে গেলো যুল কিফল আ. এর। উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। বৃদ্ধ লোকটি নিজেকে মজলুম হিসেবে প্রকাশ করে বিচার চাইলে তিনি বললেন আমি যখন বিকালে দরবারে বসবো তখন এসো তুমি। সে খুশি হয়ে চলে গেলো।

এরপর বিকালে যখন তিনি দরবারে গেলেন তখন অনেক অপেক্ষার পরও বৃদ্ধ লোকটি এলো না। পরেরদিন সকালেও তিনি অপেক্ষা করলেন লোকটির জন্য। কিন্তু সে এলো না। এরপর দুপুরে যখন তিনি ঘুমাতে গেলেন তখন আগেরদিনের মতো লোকটি এসে দরজায় কড়া নাড়লো। যুল-কিফল আ. উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখেন সেই বৃদ্ধ দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। এসেই বৃদ্ধ লোকটি নানা অজুহাত পেশ করতে লাগলো। এবার যুল-কিফল আ. বললেন আচ্ছা তাহলে তুমি আজ বিকাল বেলা এসো। এরপর লোকটি চলে গেলো।

আজও লোকটি এলো না। পরেরদিন যুল-কিফল আ. বাড়ির লোকদের বলে দিলেন যেন লোকটি এলে তাকে প্রবেশ করতে না দেয়া হয়। এদিনও লোকটি এলো। কিন্তু বাড়ির লোকজন বাধা দিলে সে জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকে দরজার আঘাত করে যুল-কিফল আ. এর ঘুম ভাঙিয়ে দিলো।

ঘুম থেকে উঠে যুল-কিফল আ. দরজার বন্ধ অবস্থায় লোকটিকে ঘরের ভিতরে দেখে বুঝে ফেললেন যে এ হচ্ছে শয়তান। তিনি বললেন, তাহলে তুমিই শয়তান?
এতোদিন আমাকে জালাতন করেছো। এবার শয়তান ভারি গলায় বললো, হ্যা আমিই শয়তান। আমি আপনাকে রাগান্বিত করতে ব্যর্থ হলাম।

নবী যুল-কিফল আ. এর মতো আমরাও যেন হতে পারি, সিয়াম পালনকারী, রাত্রি জেগে ইবাদতকারী এবং রাগকে সংবরণকারী।

লিখেছেন

সিলেটে থাকি, পড়ালেখা সিলেটেই। পড়ছি কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে। আর ভালোবাসি লিখালিখি করতে।
Writer and selector at জাগরণ – Jagoron
সসীমের পথ ছেড়ে ছুটি অসীমের পানে

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture