Writing

সৎকাজ অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে

গতকালের কথা। অফিসের একজন কর্মচারীকে দেখলাম হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে ঘুরছেন। আমি মজা করে বললাম,
‘কী হে, কার সাথে মারামারি করে হাতে ব্যথা পেলে? তোমাকে না কতবার বলেছি রাস্তাঘাটে মারামারির অভ্যাসটা বাদ দিতে?’
‘স্যার, মারামারি না…আমি মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি। প্রায় যান্ত্রিক গলায়’ জবাব দিল সে।

অবাক হলাম। মানুষটার চোখগুলো স্থির হয়ে আছে। গলায় কাঁপনের সুর। যাই ঘটেছে তার ধাক্কা এখনো সামলে উঠতে পারেনি বেচারা, বোঝা যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি ক্ষমা চেয়ে, জানতে চাইলাম কী হয়েছে। দুর্বল গলায় বলতে শুরু করল লোকটা,
‘এক মাস আগের কথা। বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ থেকে বাসায় লোক এসেছিল। কী জানি ওয়্যারিং এর সমস্যার কথা বললো। আমার বাসার জানালার সামনে দিয়েই নতুন একটা তার টানল ওরা। যাওয়ার পর দেখলাম জানালার সামনে ঝুলে আছে তারটা। আমি ওটা শুধু একটুখানি উঠিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তারটা মাঝখানে ফাটা ছিল। ধরামাত্র শরীরে বয়ে গেল বিদ্যুতের প্লাবন।
এক মুহূর্তের জন্য চোখের সামনে আমার সব মৃত আত্মীয়, বন্ধুবান্ধবকে দেখতে পেলাম। তারপর সব অন্ধকার…’

সুবহানআল্লাহ। বারযাখের জীবনের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল মানুষটা। দুর্ঘটনার সাথে সাথে ছুটে আসে ওর স্ত্রী-সন্তানেরা। টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে আনে ওকে। জানে বেঁচে গেলেও ওর হাতে রয়ে যায় বিদ্যুতের স্পর্শের ছাপ। দুর্ঘটনার এক মাস পর আজও ওর বাম হাতের আঙুলে রয়ে গেছে ক্ষতচিহ্নগুলো। ও আমাকে আঙুলগুলো দেখাল। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলাম। লোকটার ভাগ্য ভালো, সাধারণত এসব ক্ষেত্রে আঙুল কেটে ফেলতে হয়। নিঃসন্দেহে এটা আল্লাহর রহমত।

কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর চাপা গলায় আবার কথা বলা শুরু করল লোকটা…
‘স্যার, আপনাকে একটা কথা বলি। কথাটা এখনও পর্যন্ত আর কারও কাছে বলিনি। ওইদিন ঘটনাটা ঘটে বিকেল ৪.১০ এ। আসরের আগে আগে। ঠিক এক ঘণ্টা বিশ মিনিট আগে আমি ছিলাম অফিসে। অফিস ছেড়ে বের হচ্ছিলাম।

এক মহিলা; অফিসের সিঁড়ি পরিষ্কার করেন, আমার পথ রোধ করে দাঁড়ালেন। প্রশ্ন করলেন,
আপনি কি বাসায় যাচ্ছেন?
হ্যাঁ।
আমাকে একটু সাহায্য করুন। আপনার বাসায় তো খাবার আছে কিন্তু আমার বাচ্চাদের মুখে দেয়ার মতো এক মুঠো খাবার আমার কাছে নেই।
পকেটে দুই দিনার (জর্ডানের মুদ্রা, ১ দিনার সমান প্রায় ১২০ টাকা) ছিল, তার একটা উনার হাতে দিলাম।
মহিলার মুখ থেকে যেন ছায়া সরে গেল। খুশিমনে আমার জন্য দু’আ করলেন, ‘আল্লাহ আপনার ওপর রহম করুন, আপনার সম্পদ বাড়িয়ে দিন, আপনাকে হেফাযত করুন’।

তারপর আমি বাড়ি ফিরে এলাম। তার কিছুক্ষণ পর এ ঘটনা ঘটল।’
কথা শুনতে শুনতে আমি লোকটার দিকে তাকাচ্ছিলাম। একেবারে সাধারণ একজন কর্মচারী। খুব কম বেতনের চাকরি করে। সেই মহিলার সাথে কথোপকথনের ঠিক এক ঘণ্টা বিশ মিনিট পর ওর দেখা হয়েছিল মৃত্যুর সাথে। আল্লাহ তাঁকে হেফাযত করেছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ। সেই চিহ্ন আজও সে বয়ে বেড়াচ্ছে তার বাম হাতের আঙুলগুলোতে। যেন মৃত্যু ওর সাথে হাত মিলিয়ে গেছে, রেখে গেছে চিহ্ন। আল্লাহ তাঁকে শিফা দান করুন।

হাদিসে এসেছে এবং অনেক উলামা এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন,
صنائع المعروف تقي مصارع السوء
সৎকাজ অপমৃত্যু থেকে রক্ষা করে। [আত তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৬৯]
প্রিয় পাঠক, আমরা তো কেউ জানি না এ দুনিয়াতে আর কত দিন আছি। একটা সময় ঠিক করা আছে, যখন আমাদের বিদায় নিতে হবে। সেই দিনের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি আমাদের আছে কি? আসুন সাধ্যমতো নেক আমল করার চেষ্টা করি।
আর মনে রাখবেন কখনো মযলুমের দু’আকে তুচ্ছ মনে করবেন না, কারণ আমাদের রব সবকিছুর সাক্ষী।

কক্ষান্তরের প্রস্তুতি, আয়নাঘর
ড. ইয়াদ আল-কুনাইবি

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture