Writing

স্মৃতিচারণ

খাদিজার (রাঃ) মৃত্যুর পর, তাঁর বেশীর ভাগ বর্ণনা আমরা পাই আয়েশার (রাঃ) কাছ থেকে, কিন্তু কেন? কারণ, আয়েশা (রাঃ) নিজেই বলেছেন, “আমি কোনো মহিলাকে এই ভাবে হিংসা করিনি, যেভাবে খাদিজাকে (রাঃ) করেছি, যদিও তাঁকে আমি কখনো দেখিনি। তিনি রাসুলের (সাঃ) মৃত স্ত্রী, কিন্তু তারপরও তাঁকে আমি এতটাই হিংসা করেছি।” আয়েশা (রাঃ) বলেন, “খাদিজার (রাঃ) মৃত্যুর ১৩ বছর পরও, এমন একটি দিন যায়নি, যে রাসুল (ﷺ) তাঁর কথা উল্ল‍্যেখ করেন নি।” চিন্তা করে দেখুন, প্রতিদিন! ১৩ বছর গত হয়েছে, সব কিছুই চলছে – বদর, ওহুদ, খন্দক, ফাতহে মক্কা, কিন্তু এমন কোনো দিন যায় নি যে, রাসুল (ﷺ) তাঁর কথা উল্ল‍্যেখ করেন নি।

আয়েশা (রাঃ) বলেন, “খাদিজার (রাঃ) প্রশংসা না করে, রাসুল (ﷺ) ঘর থেকে বের হতেন না। একদিন, তিনি তাঁর প্রশংসা করেই যাচ্ছিলেন, আমি হিংসায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়লাম। আমি তখন উঠে দাঁড়িয়ে, রাসুলকে (সাঃ) বললাম, “আল্লাহ কি কুরাইশদের এই দন্তহীন, বুড়ো মহিলার চেয়ে ভালো কাউকে আপনার জীবনে দেন নি?” সেই দিন আয়েশা (রাঃ) তাঁর ভাগ্য পরীক্ষা করেছিলেন। তখন রাসুলের (ﷺ) মুখের অভিব্যাক্তির এমন পরিবর্তন হলো যা শুধু ওহী পাওয়ার সময়ই হতো। তাঁর চেহারা এমন ভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল যেন তাঁর উপর তখন কুরআন নাজীল হচ্ছিলো। আয়েশা (রাঃ) বলেন, “তখন রাসুল (ﷺ) এতই রাগান্বিত হলেন যে, তাঁর মাথার চুল খাড়া হয়ে গিয়েছিলো।”

রাসুল (ﷺ) আয়েশাকে (রাঃ) খাটো করলেন না। কি চমৎকার! একবার ভেবে দেখুন, আয়েশা (রাঃ) নিজেই এসব বর্ণনা করছেন, খাদিজার (রাঃ) উৎকর্ষতা ও রাসুলের (ﷺ) চরিত্রকে তুলে ধরার জন্য। রাসুল (ﷺ) তখন উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, “আমি আল্লাহর কসম করে বলতে পারি, খাদিজার (রাঃ) চেয়ে ভালো কাউকে আল্লাহ তা’য়ালা আমার জীবনে দেন নি, যখন সবাই আমাকে অবিশ্বাস করেছিল, কেবল তিনিই আমাকে বিশ্বাস করেছিলেন। সুবহানাল্লাহ! সবাই যখন আমাকে মিথ্যাবাদী ভেবেছিলো, একমাত্র তিনিই আমাকে সত্যবাদী জেনেছেন। তিনি তাঁর সমস্ত অর্থ সম্পদ আমার জন্য ব‍্যায় করেছেন। যখন কেউ এগিয়ে আসেনি, তখন তিনি শুধু কথা দিয়েই নয়, তাঁর অর্থ সম্পদ দিয়েও আমাকে সাহায্য করেছেন। একমাত্র তাঁর সাথে আল্লাহ আমাকে সন্তান সন্ততি দিয়েছেন, যা আর কারো সাথে দেন নি। তিনি আমার সন্তানদের মা, তিনিই আমার জীবনের সব। না, আল্লাহ আমাকে তাঁর চেয়ে ভালো কাউকে আমার জীবনে দেন নি।”

আয়েশা (রাঃ) বলেন, “আমি তখনই বুঝে গেলাম, খাদিজার (রাঃ) ব্যাপারে আর কখনোই সীমা অতিক্রম করা যাবে না।” রাসুলের (ﷺ) অন্তরে, খাদিজার (রাঃ) স্থান সীমাহীন। যখনি রাসুল (ﷺ) ভেড়া জবাই করতেন, কিছু মাংস তিনি সরিয়ে রাখতেন, এবং কাউকে নির্দেশ দিতেন, “যাও, খাদিজার (রাঃ) বান্ধবীদের এসব দিয়ে আস।” যখন রাসুল (ﷺ) খাদিজার (রাঃ) বোন হালার কণ্ঠস্বর শুনতে পেতেন, তখন তিনি চমকিত হয়ে বলতেন, “ও আল্লাহ ইনি হালা, ও আল্লাহ, ইনিই যেন হালা হন।” কারণ, হালার কণ্ঠস্বর ছিল অবিকল খাদিজার (রাঃ) কণ্ঠস্বরের মতো। তাঁর কণ্ঠস্বরের মধ্যে তিনি খাদিজাকে (রাঃ) স্মরণ করতে চাইতেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, “তাঁরা একসাথে বসে খাদিজাকে (রাঃ) স্মরণ করতেন ঘন্টার পর ঘন্টা, খাদিজার (রাঃ) যে কোনো স্মৃতি চারণের জন্য তিনি উৎসুক থাকতেন।”

আয়েশা (রাঃ) বলেন, “একবার এক বৃদ্ধা তাঁদের বাসায় আসেন। তাকে রাসুল (ﷺ) এতটাই উদারতার সাথে আপ‍্যায়ন করলেন যে সারা বাড়ি খালি করে ফেললেন।। আমিতো ভেবেছিলাম, তিনি রাস্তার ভিক্ষুক।” আয়েশা (রাঃ) বললেন, “বৃদ্ধাকে আপনি এভাবে সমাদর করলেন?” রাসুল (ﷺ) তখন বলেছিলেন, “খাদিজার (রাঃ) সময়কালে তিনি আমাদের বাসায় আসতেন, আমি তাকে স্মরণ করেছি, সেই সময়গুলোতে, যখন খাদিজা (রাঃ) জীবিত ছিলেন।”

আয়েশা (রাঃ) নিজেই বলেন, “কেন তাঁকে আমি এতো হিংসা করতাম? কারণ, আল্লাহ রাসুলকে (ﷺ) আদেশ করেছিলেন, খাদিজাকে (রাঃ) জান্নাতের প্রাসাদের সুসংবাদ দিতে।” আয়েশা (রাঃ) নিজের জন্যও তা প্রত্যাশা করতেন। কতই না মধুর ছিল আমাদের নবীজির জন‍্য এই সব স্মৃতিচারণ।
(চলবে, ইন শা আল্লাহ্ )

খাদিজা (রাঃ) এর জীবনী : পর্ব ১৪

ডঃ ওমর সুলাইমান

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture