স্বার্থপরের মতো ইবাদত করছেন কি সালাহউদ্দীন মাক্কী
স্বার্থপরের মতো ইবাদত করছেন কি?
আপনি সারাদিন মোবাইলে ফেসবুক ও ইউটিউব চালাচ্ছেন আর সন্তানদেরকে বলছেন এই মোবাইল চালাবি না পড়াশোনা কর আপনার স্ত্রীকে ঘরে রেখে আপনার বাচ্চাকে ঘরে রেখে আগুন লাগার পরে আপনি একা বের হয়ে যান না নিজেকে স্বার্থপর মনে করেন কিন্তু আপনি একাকী ফজরের সালাতে চলে আসেন।
আপনার বউ-বাচ্চা সবাই ঘুমিয়ে আছে তাদেরকে একবার ডাকলেন না আপনি তো তাদের আগুনে রেখে চলে আসলেন
দুপুরে খাবারের পর জিজ্ঞেস করলেন আজকে কি জোহর পড়তে পারছ আপনার বৌ বলল না রান্নাবান্নার অনেক ঝামেলা ছিল যোহর এখনো পড়তে পারি নাই!
আপনার কি ওরকম মন খারাপ হয়, উনি রান্না না করলে যেরকম মন খারাপ হতো।
দ্বীন ব্যবস্থাটা ফ্যামিলিতে এরকম ভাবে ব্যবহার করতে পারি না?
কারণ কি?
কারণ হচ্ছে আমরা নিজেরাই ভালোভাবে সেটা মানতে চাই না। যেমন ধরেন একজন বাবা সালাত অফার করে না, তিনি তার সন্তানকে কিভাবে সালাত আদায় কারী বানাবেন?
একজন বাবা মিথ্যা কথা বলেন, তিনি তার সন্তানকে কিভাবে সত্যবাদী করে গড়ে তুলবেন?
একজন মা বেপর্দায় চলেন তিনি তার বাচ্চাকে কিভাবে পর্দানশীল বানাবেন?
কঠিন, আপনি সারাদিন মোবাইল ফোন নিয়ে ঘরে বসে থাকেন মোবাইল ফোন চাপতে থাকেন ফেসবুকিং করছেন ইউটিউব দেখছেন, আর বলছেন মোবাইল চালাবি না পড়াশোনা করো। সন্তান তো এটা শুনবে না, কারণ সন্তান আপনার মুখের কথার চেয়ে আপনার কর্ম বা কাজটাকে বেশি ফলো করে। এক কথায় বলতে চাইলে আপনাকে তার আদর্শ আইডল মানে।
যারা এখানে বিবাহিত আছেন, আপনি কষ্ট করে অফিস থেকে বাসায় ফিরলেন গিয়ে দেখলেন আপনার স্ত্রী রান্না করে নাই, আপনার কি মেজাজ গরম হবে না নাকি?
হবে।
আচ্ছা কষ্ট করে অফিস থেকে বাসায় গেলেন গিয়ে দেখলেন সবকিছু সাজানো-গোছানো আছে খাবার দাবার রেডি আপনি ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করলেন। খাবার পর আপনি আপনার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন আজকে কি যোহর নামাজ আদায় করতে পারছো?
আপনার স্ত্রী বলল না আদায় করতে পারিনাই রান্নাবান্না অনেক ঝামেলা ছিল জোহর পড়তে পারি নাই।
আপনার কি ওরকম মন খারাপ হয়, উনি রান্না না করলে যেরকম মন খারাপ হতো?
কেন হয় না?
কারণ আমরা আমাদের দুনিয়াটাকে এরকমভাবে সাজাতে চাই, কিন্তু আমাদের আখেরাত টাকে এরকম ভাবে সাজাতে চাই না, সেই সেন্সটা আমাদের আসেনা।
আবার সবাই জান্নাত বাসী হতে চাই কিন্তু জান্নাতবাসি হওয়ার জন্য যে প্রস্তুতির দরকার সেই প্রস্তুতি তা আমরা কেউ ওই ভাবে নেইনা বা নিতে চাই না। যদি নিতেই চাইতেন তাহলে আপনার স্ত্রী সঠিক রান্নাবান্না করেন নাই এজন্য আপনার মেজাজ গরম। কিন্তু তিনি সঠিকভাবে যে সালাত আদায় করেন নাই, এটা নিয়ে আপনার কোনো মাথাব্যথা নাই। এটা কিভাবে হয়।
ধরেন আপনার ঘরে আল্লাহ না করুক, আগুন লেগেছে ছোট ছোট বাচ্চা আছে্আপনার স্ত্রী আছে আপনি আছেন বাচ্চারা ঘুমিয়ে আছে। মাঝরাতে আগুন লেগে গেছে এখন আপনি কী চাইবেন?
তারা ঘুমিয়ে থাকুক, আপনি একা উঠে ঘর থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। আপনার স্ত্রী বাচ্চা বা সন্তান সবাই আছে ঘুমিয়ে। আগুন লেগেছে আপনি একা একা ঘর থেকে বের হয়ে যেতে পারবেন?
যদি যান আপনার পরিচয় কি হবে আমাদের মানুষের কাছে, নিজের কাছে, কি মনে হবে?
বলেনতো তারা পুড়ে মারা গেল, আর আপনি একা বেঁচে গেলেন।
কেমন হবে, ভালো হবে?
এটা আপনার কাছে খুবই দৃষ্টিকটু মনে হচ্ছে তাই না। অথচ দেখেন অনেক সালাত আদায়কারী আছেন, যিনি ফজরের সময় সালাত আদায় করছেন তার বউ তার তার বাচ্চা তার সবাই ঘুমিয়ে আছে, ফজরের নামাজের পর ঘুম থেকে উঠছে। এই অবস্থায় যদি আপনার বউ মারা যেত, এ অবস্থায় যদি আপনার বালেগ হয়েছে এমন সন্তান মারা যেত, অবশ্যই সে জাহান্নামে যাবে। নামাজ ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে আছে ইচ্ছে করে, ঘুমের আগে তার মাথার ভিতরে এই চিন্তা নাই আমি উঠে ফজর পড়বো। এই চিন্তা না নিয়েই তিনি ঘুমিয়েছেন।
আমি সাতটা বাজে উঠবো সাড়ে সাতটায় অফিস বা সাড়ে সাতটায় উঠে নাস্তা রেডি করতে হবে আমার স্বামী আটটা বাজে অফিসে যাবে। আপনার স্ত্রী কিভাবে চিন্তা করে ঘুমিয়েছে ঘুমের মধ্যে যদি তিনি মারা যান। এতে কোন সন্দেহ নাই তিনি কুফুরি নিয়ে মারা গেলেন, নাউজুবিল্লাহ।
আর কোন ব্যক্তি যদি কুফুরি নিয়ে মারা যায়। আল্লাহ যদি কেয়ামতের দিন ক্ষমা না করেন, তাকে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে।
তাহলে আপনার স্ত্রী কে ঘরে রেখে আপনার বাচ্চাকে ঘরে রেখে আগুন লাগার পরে আপনি একা বের হয়ে যান, না নিজেকে স্বার্থপর মনে করেন কিন্তু আপনি একাকী ফজরের সালাত চলে আসছেন আপনার বউ-বাচ্চা সবাই ঘুমিয়ে আছে তাদেরকে একবার ডাকলে্ন না।
আপনিতো তাদের আগুনে রেখে চলে আসলেন!!!
তারা যদি এ অবস্থায় মারা যায় তারা জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।
তো কিভাবে আপনি আমি নিজেকে জান্নাত উপযোগী মুমিন হিসাবে গড়ছি। আসলেই কি আমরা গড়তে পারছি?
না।
সময় এভাবে দিনকে দিন দিনকে দিন সময় চলে যাচ্ছে, এভাবে প্রতিনিয়ত চলে যাচ্ছে। আমি কিছুই করতে পারছি না। আমরা সবাই জান্নাতে যেতে চাই, Thats Okay তবে এটা ভালো চিন্তা। কিন্তু সেটার জন্য আপনার প্রস্তুতি তো লাগবে?
তো সে প্রস্তুতি নেয়ার আগে আপনাকে চিন্তাশীল হওয়া লাগবে। আপনার কি কাজ, কিভাবে করা দরকার, আপনি তো এভাবে করছেন না।
দিনের-পর-দিন মাসের-পর-মাস বছরের পর বছর আপনার মা, আপনার বোন, আপনার স্ত্রী, আপনার সন্তানেরা দ্বীনের বাহিরে আছে। দ্বীন মানে না, যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে চলছে। আপনি তাদেরকে কিছুই বলেন না?
আপনি কতটা স্বার্থপর কোনদিন চিন্তাও করেন না।
দুনিয়ার ঘরে আগুন লাগলে, আপনি আগুন লাগা অবস্থায় সবাইকে ঘুমিয়ে রেখে আপনি বের হয়ে চলে যান।
আপনি হয়তো বেঁচে যাবেন কিন্তু আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা’আলার আখেরাতের আদালতে, দুনিয়াতে সবাইকে এভাবে রেখে যদি দ্বীন মানেন দ্বীন পালন করেন। আখেরাতের আগুন থেকে আপনিও বাঁচতে পারবেন না।
কারণ আপনি তাদের উপর দায়িত্বশীল।
আপনি চিন্তা করেছেন কি?
আমি আমার আমল করেছি বা করে যাচ্ছি। আমি সালাত আদায় করছি, আমি সিয়াম পালন করছি, আমি যাকাত দিচ্ছি, আমি হজ্ব করেছি আমি বুঝি জান্নাতে যাবো।
না আপনি জান্নাতে যাওয়ার প্রস্তুতি নেন নাই। কারণ আপনি আপনার পরিবারে ইসলাম পালনের জন্য কিছুই বলেন না।
আপনি জানেন না যে আপনি জাহান্নামের পথে খুব বেশি অগ্রসর হচ্ছেন। কিন্তু আপনি ভাবছেন আপনি জান্নাতে যাবেন।
তাহলে কিভাবে আপনি জান্নাত উপযোগী মুমিন নিজেকে গড়ে তুললেন।
একটু চিন্তা করে দেখেন তো।
একটু চিন্তা করে দেখেন।
হ্যাঁ, আপনি বারবার বলছেন আপনার মাকে, আপনার বোনকে, আপনার বাবাকে সবাইকে দ্বীনের ব্যাপারে বলে যাচ্ছেন তাদেরকে বুঝাচ্ছেন এরপরও তারা দিনের কথা শুনেনা দ্বীনের কথা মানে না।
আপনার এখানে ওজর আছে।
হে আল্লাহ আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি তারা তোমার কথা শুনে নাই।
সময় থাকতে সতর্ক হোন সহিহ দ্বীন পালন করুন এবং পরিবারকে দ্বীনের দাওয়াত দ্বীন।