আমার স্ত্রী আমাকে অনেক বিষয়েই কথা দেয় যে, সে এই কাজ টা করবে না। কিন্তু একটা সময় সেই কাজ টা করে বসে এবং আমার কাছ থেকে বিষয়টা গোপন করার চেষ্টা করে-যদিও আমি তার এই কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে অবগত। তাছাড়া এসব বিষয়ে তাকে কিছু বলতে গেলে উল্টো আমার উপর রাগ করে বসে। এ ক্ষেত্রে আমার করণীয় কি? কিভাবে তাকে দীনের পথে দাওয়াত দেবো? নাকি সব কিছু আল্লাহর উপরে ছেড়ে দেবো?
আপনার স্ত্রী যদি অন্যায়, অপকর্ম ও পাপাচারে লিপ্ত থাকে তাহলে তা দেখা বা জানার পর আপনার জন্য নীরবতা অবলম্বন করা বা স্ত্রীর উপর দায়-দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ বসে থাকা জায়েজ নাই। কারণ আল্লাহ তাআলা স্বামীকে স্ত্রীর উপর কর্তৃত্ববান ও দায়িত্বশীল বানিয়েছেন (সূরা নিসা: ৩৪) এবং আদেশ করেছেন, নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর পাশাপাশি স্ত্রী-পরিবারকে জাহান্নামে আগুন থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করা। (সূরা তাহরিম: ৬)
এই দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে স্বামীকে আল্লাহর কাঠগড়ায় জিজ্ঞাসার সম্মুখীন হতে হবে। ইবনে উমর রা. সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ : وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهُوَ مَسْئُولٌ عَنْهُمْ”
“জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই একেকজন দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। …একজন পুরুষ তার পরিবার (স্ত্রী-সন্তানদের) উপর দায়িত্বশীল। সে তাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।”
[সহিহ মুসলিম]
যাহোক, আপনি তার অন্যায়-অপকর্ম সম্পর্কে অবগত হলে তাকে তাকে তা বলুন। আন্তরিকতার সাথে উপদেশ দিন ও সংশোধনের চেষ্টা করুন। সেই সাথে তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করুন এবং যে কারণে সে অন্যায়-পাপাচারে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ পায় তা চিহ্নিত করে সে পথ বন্ধ করুন।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যায় দেখলে প্রথমত: তা হাত দ্বারা প্রতিহত করার নির্দেশ দিয়েছেন যদি ক্ষমতা থাকে। [সহিহ মুসলিম]
সুতরাং স্বামী যদি তার স্ত্রীকে অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর নাফরমানি করতে দেখে বা জানতে পারে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, তাকে বাধা দেয়া বা নিষেধ করা। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে সে ক্ষমতা প্রয়োগেরও অধিকার রাখে। এটি তার আল্লাহ প্রদত্ত অধিকার।
এতে যদি সে তওবা করে, সংশোধিত হয় এবং অন্যায় পথ থেকে ফিরে আসে তাহলে তো আল হামদুলিল্লাহ। অন্যথায় তার উপর সূরা নিসা এর ৩৪ ও ৩৫ নং আয়াত প্রয়োগ করবেন।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَاللَّاتِي تَخَافُونَ نُشُوزَهُنَّ فَعِظُوهُنَّ وَاهْجُرُوهُنَّ فِي الْمَضَاجِعِ وَاضْرِبُوهُنَّ ۖ فَإِنْ أَطَعْنَكُمْ فَلَا تَبْغُوا عَلَيْهِنَّ سَبِيلًا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلِيًّا كَبِيرًا وَإِنْ خِفْتُمْ شِقَاقَ بَيْنِهِمَا فَابْعَثُوا حَكَمًا مِّنْ أَهْلِهِ وَحَكَمًا مِّنْ أَهْلِهَا إِن يُرِيدَا إِصْلَاحًا يُوَفِّقِ اللَّـهُ بَيْنَهُمَا ۗ إِنَّ اللَّـهَ كَانَ عَلِيمًا خَبِيرًا
“আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ। যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিস নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছু অবহিত।”
[সূরা নিসা: ৩৪ ও ৩৫]
কিন্তু স্বামী যদি নিজেই অন্যায়-অকর্ম ও নানা গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে তাহলে স্ত্রী-পরিবারকে বাধা দেয়ার সাহস পাবে কোত্থেকে? সুতরাং তার জন্য আবশ্যক হল, নিজে যেমন পাপবাচার ও আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত থাকবে তেমনি তার স্ত্রী-সন্তানদেরকেও মুক্ত রাখবে। পাশাপাশি তাদেরকে ঈমান, তাকওয়া, সৎকর্ম ও পবিত্রতার উপর পরিচালনা করবে।
অন্যথায় একদিকে তাদের দাম্পত্য জীবন পাপ-পঙ্গিলতায় কলুষিত হওয়ার এবং আল্লাহর গজবে নিপতিত হয়ে সাংসারিক সুখ-শান্তি বিনষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা আছে, অন্য দিকে আশঙ্কা আছে আখিরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হওয়ার। আল্লাহ ক্ষমা করুন। আমিন।