স্ত্রীর অধিকার বা স্বামীর কর্তব্য
দাম্পত্য জীবন সুখময় করে তুলতে স্ত্রীর উপর যেমন স্বামীর বিশেষ অধিকার বা স্ত্রীর জন্য পালনীয় কর্তব্য রয়েছে, তেমনি স্বামীর উপরও স্ত্রীর বিশেষ অধিকার বা স্বামীর জন্য করণীয় কর্তব্য রয়েছে। গত পোস্টে স্বামীর অধিকার ও স্ত্রীর কর্তব্য সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এবার স্ত্রীর অধিকার বা স্বামীর কর্তব্য বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
স্ত্রীর প্রতি স্বামীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু কর্তব্য নিম্নরূপ–
Table of Contents
১. দেন মোহর প্রদান
স্বামীর উপর স্ত্রীর দেন-মোহর পরিশোধ করা ফরজ। এ হক তার নিজস্ব। তা তার পিতা-মাতা কিংবা অন্য কেউ নিতে পারবেন না কিংবা স্বামী না দিয়ে আত্মসাৎ করতে পারবেন না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ “তোমরা প্রফুল্ল চিত্তে স্ত্রীদের মোহরানা দাও।” (সূরা নিসা, আয়াত নং ৮)
وَآتُواْ النَّسَاء صَدُقَاتِهِنَّ نِحْلَةً فَإِن طِبْنَ لَكُمْ عَن شَيْءٍ مِّنْهُ نَفْسًا فَكُلُوهُ هَنِيئًا مَّرِيئًا
আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।
[সূরা নিসা-০৪]
২. ভরন পোষণ প্রদান
সামর্থ ও প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্বামীর কর্তব্য। স্বামীর সাধ্য ও স্ত্রীর আভিজাত্যের ভিত্তিতে এ ভরণ-পোষণ কম বেশি হতে পারে। অনুরূপভাবে সময় ও স্থান ভেদে এর মাঝে তারতম্য হতে পারে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন : “বিত্তশালী স্বীয় বিত্তানুযায়ী ব্যয় করবে। আর যে সীমিত সম্পদের মালিক সে আল্লাহ প্রদত্ত সীমিত সম্পদ হতেই ব্যয় করবে। আল্লাহ যাকে যে পরিমাণ দিয়েছেন, তারচেয়ে’ বেশি ব্যয় করার আদেশ কাউকে প্রদান করেন না।” (সূরাহ তালাক, আয়াত নং ৭)
৩. স্ত্রীর প্রতি মমতাশীল ও দয়া-পরবশ হওয়া
স্ত্রীর প্রতি মায়া-মমতা প্রদর্শন ও স্নেহশীল হওয়া কর্তব্য। তার প্রতি রূঢ় আচরণ না করা উচিত। তার সহনীয় ভুলচুকে ধৈর্যধারণ করতে হবে।
স্বামীর জানা উচিত, নারী মর্যাদার সম্ভাব্য সবক’টি আসনে অধিষ্ঠিত হলেও পরিপূর্ণরূপে সোজা হওয়া সম্ভব নয়। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : “তোমরা নারীদের ব্যাপারে কল্যাণকামিতা অবলম্বন করো। কারণ, তারা পাঁজরের হাড় দ্বারা সৃষ্ট। পাঁজরের উপরের হাড়টি সবচে’ বেশি বাঁকা। (যে হাড় দিয়ে নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে) তুমি একে সোজা করতে চাইলে, ভেঙে ফেলবে। আবার এ অবস্থায় রেখে দিলে, বাঁকা হয়েই থাকবে। তাই তোমরা তাদের কল্যাণকামী হও এবং তাদের ব্যাপারে সৎ-উপদেশ গ্রহণ করো।” (সহীহ বুখারী)
৪. স্ত্রীকে সুপথে পরিচালিত করা
স্ত্রীকে হিদায়াতের পথে পরিচালিত করা এবং তাকে দ্বীনদার হতে সাহায্য করা স্বামীর কর্তব্য। প্রয়োজনে হাতে ধরে তাকে পথনির্দেশনা প্রদান করতে হবে এবং সুপথে পরিচালিত করতে হবে।
কারণ, নারী সৃষ্টিগতভাবে দুর্বল। স্বামীর যে কোন উদাসীনতায় সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে এবং অপরকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
এ কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীর ফেতনা হতে খুব যত্ন সহকারে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেনঃ “আমার অবর্তমানে পুরুষদের জন্য নারীদের চেয়ে বড় ক্ষতিকর কোন ফেতনা রেখে যাইনি।” (সহীহ বুখারী :৪৭০৬)
যে পুরুষ তার অধীনস্থ নারীদেরকে বেপর্দাভাবে চলতে বা অন্যায় কাজ করতে দেয়, হাদীস শরীফে এমন পুরুষকে দাইয়ূছ বলা হয়েছে এবং ঘোষণা করা হয়েছে : “দাইয়ূছ জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (মুসনাদে দারিমী : ৩৩৯৭)
স্ত্রীর অন্যান্য হক একনজরে
হাদীস শরীফে স্বামীর ওপর স্ত্রীর আরো যে সকল হকের কথা বলা হয়েছে, তা হলো :
৫. স্ত্রীকে দ্বীনী মাসআলা-মাসায়িল শিক্ষা প্রদান করা।
৬. স্ত্রীকে ভালো কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা এবং অন্যায় কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখা।
৭. যাদের সঙ্গে দেখা দেয়ার ব্যাপারে ইসলামের অনুমতি রয়েছে (যারা একান্ত মাহরাম আত্মীয়), তাদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ প্রদান করা।
৮. শাসন ও সংশোধনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা বা সীমা অতিক্রম না করা। (রাগ করে) স্ত্রীকে ফেলে রেখে ঘর ব্যতীত অন্য কোথাও না যাওয়া।
৯. ইসলামী শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে স্ত্রীর আবদার পূরণ করে তার মন জয় করা।
১০. একাধিক স্ত্রী থাকলে তাদের মধ্যে সমতা বজায় রাখা।
স্ত্রীর সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে হাদীস শরীফৈ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : “তোমাদের মধ্যে তারাই উৎকৃষ্ট, যারা তাদের স্ত্রীর কাছে উৎকৃষ্ট এবং আপন পরিবার-পরিজনের প্রতি স্নেহশীল। (জামি‘ তিরমিযী)
তাই স্ত্রীর সাথে সুন্দর ও ভালো ব্যবহারের মাধ্যমে তাকে আপন করে নিতে হবে। এতে স্বামীর কাছ থেকে যখন স্ত্রী অকৃত্রিম ভালোবাসা পাবে, তখন সে তার সবটুকু স্বামীর জন্য উজাড় করে দিবে।
এভাবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের হক পরিপূর্ণভাবে আদায় করলে তাদের জীবন হবে সুখময় ও সার্থক। বস্তুত স্বামী-স্ত্রীর প্রেম-ভালবাসাই হচ্ছে দুনিয়ার প্রকৃত ও পবিত্র প্রেম-ভালবাসা।