সালাতে থাকা অবস্থায় দৃষ্টি কোথায় থাকবে
সালাতে দাড়ানো অবস্থায়, রুকু অবস্থায়, তাশাহুদের বৈঠক ইত্যাদিতে দৃষ্টি কোথায় থাকবে? তাশাহুদে শাহাদাত আঙ্গুল নাড়ানোর বিধান কি? চোখ বন্ধ করে নামায পড়া কি জায়েজ আছে?
সালাতে দৃষ্টি কোথায় থাকবে?
সালাতে কেবল তাশাহুদের বৈঠক ছাড়া অন্য সকল অবস্থায় সেজদার স্থানে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখা সুন্নত। কেবল তাশাহুদের বৈঠকে দৃষ্টি থাকবে ডান হাতের শাহাদাত (তর্জনী) অঙ্গুলীর দিকে।
নিম্নে এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো পেশ করা হল:
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত,
তিনি বলেন,
إنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه و سلم كانَ إِذَا صَلَّى، طَأْطَأَ رَأْسَهُ وَرَمَى بِبَصَرِهِ نَحْوَ الأَرْضِ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে দাঁড়াতেন, তখন মাথাটা নিচু করে ঝুঁকিয়ে রাখতেন এবং দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন জমিনের দিকে”।
[মুসতাদরাক হাকেম, হাদিস নং ১/৪৭৯। তিনি বলেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। আল্লামা আলবানী রহ. হাদিসটির বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। পৃ: ৮৯।]
অপর এক হাদিসে বর্ণিত,
دَخَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْكَعْبَةَ مَا خَلَفَ بَصَرُهُ مَوْضِعَ سُجُودِهِ حَتَّى خَرَجَ مِنْهَا
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কা‘বা ঘরে প্রবেশ করেন, বের না হওয়া পর্যন্ত তার দৃষ্টি সেজদার স্থান হতে অন্য দিকে ফেরান নি”।
[এ ইমাম হাকেম মুস্তাদরাকে বর্ণনা করেন, হাদিসটি শাইখাইনের শর্ত অনুযায়ী বিশুদ্ধ। দেখুন: ১/৪৭৯- আল্লামা যাহাবী রহ. হাদিসটি বিশুদ্ধ হওয়ার বিষয়ে সহমত পোষণ করেন। আল্লামা আলবানী রহ. তাদের উভয়ের সাথে একমত পোষণ করেন; দেখুন, এরওয়াল গালিল: ২/৭৩।]
তাশাহুদে বসে শাহাদাত আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করার বিধান
তাশাহুদে বসে শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা এবং সে দিকে নিদৃষ্টি নিবন্ধ রাখা সুন্নত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত,
أنه كان إذا جلس للتشهد يشير بأصبعه التي تلي الإبهام إلى القبلة ويرمي ببصره إليها
“যখন তিনি তাশাহ্হুদের জন্য বসতেন, তখন তিনি তার বৃদ্ধাঙ্গুলের পাশে যে আঙ্গুলটি আছে (অর্থাৎ শাহাদাত বা তর্জনী আঙ্গুল) দ্বারা কিবলার দিকে ইশারা করতেন এবং তার দিকে দিক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেন”।
[ইবনু খুযাইমা: ১/৩৫৫; হাদিস: ৭১৯। আর মুহাক্কিক বলেন, হাদিসটির সনদ বিশুদ্ধ। দেখুন, সালাতের পদ্ধতি, পৃ: ১৩৯। অপর এক বর্ণনায় এসেছে, (وأشار بالسبابة ولم يجاوز بصره إشارته) মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৪/৩, আবু দাউদ, হাদিস: ৯৯০]
আব্দুল্লাহ ইবনু যুবায়র রা. থেকে বর্ণিত যে, أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا قَعَدَ فِي التَّشَهُّدِ وَضَعَ كَفَّهُ الْيُسْرَى عَلَى فَخِذِهِ الْيُسْرَى وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ لاَ يُجَاوِزُ بَصَرُهُ إِشَارَتَهُ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন তাশাহুদ আদায় করতে বসতেন তখন তার বাম হাত তাঁর বাম উরুর উপর রাখতেন এবং তর্জনি দ্বারা ইশারা করতেন। আর দৃষ্টি তাঁর ইশারা অতিক্রম করত না।উল্লেখ্য যে, আমাদের সমাজে একটি মাসআলা বলা হয় যে, রুকু অবস্থায় দৃষ্টি রাখতে হবে বাম পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের দিকে! এ কথাটি যে সহীহ সুন্নাহ পরিপন্থী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আল্লাহ আমাদেরকে সহীহ সুন্নাহর পথে পরিচালিত করুন। আমীন।
সালাতে চোখ বন্ধ রাখা
কিছু মানুষকে দেখা যায়, সালাতে অধিক মনোযোগ সৃষ্টি হবে-এই নিয়তে চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করে। কিন্তু হাদিসের আলোকে তা সঠিক নয়। কেননা উপরোক্ত হাদিস সমূহে আমরা দেখলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাধারণভাবে সেজদার স্থানে আর তাশাহুদ অবস্থায় ডান হাতের তর্জনী আগুলের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন। এখান থেকে প্রতিয়মান হয় যে, চোখ বন্ধ করে সালাত আদায় করা সুন্নত পরিপন্থী কাজ। তবে মুসল্লির সামনে যদি এমন কিছু থাকে বা নড়াচড়া করে যার কারণে সালাতে মনোযোগ বিঘ্নিত হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে চোখ বন্ধ করা জায়েয আছে ইনশাআল্লাহ।