ইমাম আল হাকিম আন নাইসাপুরী হাদীসের সেরা একজন আলেম ছিলেন। একবার তিনি নিরাময়অযোগ্য এক রোগে আক্রান্ত হন, তার সারা গায়ে ফুসকুড়ি উঠে ভরে যায় এমনকি মুখও বাদ যায়নি। এমন অবস্থায় তিনি তার দুআর পরিমাণ বাড়িয়ে দেন এবং একইসাথে ইমাম আবু উসমান আস সাবুনিকে অনুরোধ করেন দুআ করার জন্য।
ইমাম আবু উসমান শুক্রবারের সালাত আদায় করে সবাইকে নিয়ে দুআ করেই চললেন আর তার সাথে সাথে সবাইও বলে চললো ‘আমীন’ ‘আমীন’।
শুক্রবারের ঐ দুআয় এক মহিলাও শামিল ছিলো যিনি ইমাম আল হাকিমের অসুস্থতার কথা শুনে দুঃখিত হয়েছিলেন এবং বাড়ি ফিরে গিয়েও নিজে থেকে দুআ করেছিলেন।সেদিন রাতে স্বপ্নে তিনি নবীজী ﷺ এর সাক্ষাৎ লাভ করেন। নবীজী ﷺ ঐ মহিলাকে পরামর্শ দেন, “তুমি আল হাকিমকে গিয়ে বলো সে যেন মুসলিম জনপদের জন্য পানির ব্যবস্থা করে।”
মহিলাটি তার স্বপ্নের কথা জানিয়ে আল হাকিমকে চিঠি লিখলেন। ইমাম আল হাকিম চিঠি পাওয়ার সাথে সাথে বিষয়টি বুঝতে পারলেন এবং কালক্ষেপণ না করেই তার বাগানে বড় পুকুর খনন করলেন এবং সাধারণের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেন। সুবহানাল্লাহ! এই ঘটনার সপ্তাহখানেক বাদেই ইমাম আল হাকিম পরিপূর্ণ সুস্থতা লাভ করলেন, তার মুখের ফুসকুড়ি চলে গেল এবং এরপর দীর্ঘদিন তিনি জীবিত ছিলেন।
আপনি নিশ্চয়ই এতোক্ষণে বুঝতে পেরেছেন কোন ওষুধটি নিয়ে আলোচনা করছি আমরা, ওষুধটি হচ্ছে সাদাকা। সাদাকা এমন এক ওষুধ যা মেডিকেল সাইন্সের সাথে সম্পৃক্ত না কিন্তু আল্লাহর কাছে এতোটাই প্রিয় যে এর বদলে আল্লাহ পাক শেফা দান করেন। সাদাকা হচ্ছে এমন এক ওষুধ যা ডাক্তারদের প্রেসক্রিপশনে আপনি পাবেন না ঠিকই কিন্তু একজন মুমিন হিসেবে আপনার কর্তব্য সুস্থ ও অসুস্থ উভয় অবস্থাতেই সাদাকা আদায় করা বিশেষত এরকম অবস্থায় যখন আপনি জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অবস্থান করছেন কেননা তখন আল্লাহর সন্তুষ্টিই পারে আপনার হায়াতে বরকত বাড়িয়ে দিতে আর তাঁর সন্তুষ্টির জন্য দরকার সাদাকা।
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণের কথা যেহেতু বলাই হচ্ছে অতএব এরকম একটা বাস্তব উদাহরণ হলে আরো ভালো হয় কি বলেন। ঠিক এরকম একটা বাস্তব উদাহরণ আপনার সামনে এখন পেশ করতে যাচ্ছি।
শাইখ আল ফাইফী তার এক বন্ধুর কথা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, একবার তার বন্ধু তাড়াহুড়ো করে গাড়ি পিছনে নিতে গিয়ে তার দুই বছর বয়সী ভাগ্নীর উপর চালিয়ে দেয়। সে বুঝতে পারে কতোবড় বিপদ ঘটিয়ে ফেলেছে সে। সে তৎক্ষণাৎ মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে নিয়ে যায়। ডাক্তার জানায় মেয়েটির ৮০ ভাগ সম্ভাবনা আছে মারা যাওয়ার, কি কঠিন একটা পরিস্থিতি অনুভব করতে পারছেন?
এমতাবস্থায় তার পরিবার আলেমের সরণাপন্ন হয় যে বিশেষ কিছু করা সম্ভব কিনা যাতে মেয়েটার জীবন রক্ষা পায়। আলেম পরামর্শ দিলেন তারা যাতে পশু কোরবানি দেয় এবং তা মানুষের মধ্যে বিতরণ করে এই নিয়তে যে এর বিনিময়ে আল্লাহ পাক তাকে সুস্থ করে দেন। তারা এরকমই করলো এবং সুবহানাল্লাহ পরের দিন ফজরের সময় মেয়েটি সুস্থ হয়ে উঠলো এবং সেইদিনই সুস্থ অবস্থায় বাসায় ফিরে আসলো।
আপনি সাদাকার বিনিময় কল্পনা করতে পারছেন তো?
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহি সাদাকার বিনিময় সম্পর্কে বলেন, “যেকোনো বিপদআপদ দূরীকরণে সাদাকার গুণ অনন্য হোক সাদাকা আদায়কারী ব্যক্তি গুণাহগার, নাস্তিক কিংবা কাফির।”
এবং ইমাম আল মুনাবি রাহি বলেন,
“উম্মাহর পূণ্যবান লোকেরা সবসময় সাদাকা আদায় করেছেন এবং তারা দেখেছে যে সাদাকা এমন কিছু আধ্যাত্মিক আরোগ্য দান করতে সক্ষম যা দুনিয়াবী সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি পারেনা। এবং এই বিষয়ে স্বীকারোক্তি কেবলমাত্র তারাই দেয় না যারা এই আধ্যাত্মিকতার বিষয়টি সম্পর্কে অবুঝ।”
তাই আসুন সাদাকা আদায় করি।
সাদাকা আমাদের বিপদ আপদ দূর করতে সক্ষম। সাদাকা হচ্ছে সেই ওষুধ যা আমাদের মুমিনদের জন্য সুস্থ থাকি আর অসুস্থই থাকি সামর্থ্য থাকা মাত্র আদায় করা কর্তব্য আর এই সাদাকা আদায়ের সেরা সময় কোনটি?
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: এ সম্পর্কে বলেন,
“মানুষের মধ্যে কল্যাণের পথে সবচেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন নবীজী ﷺ। আর রমজান আসলে তার দানের মাত্রা আরো বেড়ে যেত যখন জিব্রাইল আ: সাক্ষাত করতেন।
জিব্রাইল আ: রমজানের প্রতি রাতেই তাঁর সাক্ষাত করতেন, এ সময় তার দানের উদাহরণ প্রবাহিত বায়ুর ন্যায়।”
[বুখারী, হাদীস নং ১৯০২]
সুবহানাল্লাহ!
রামাদান মাসে আমরা অবস্থান করছি অর্থাৎ দানের সবচাইতে বড় সুযোগ আমাদের সামনে। আসুন এই সময়ে দানের পরিমাণ বাড়িয়ে দিই, সামর্থ্য মতো অসহায়দের সাহায্য করি, আপনার আমার মুমিন ভাইবোনকে ইফতারি করাই।যতোটা সম্ভব নিজের মতো করে যাই কেননা উত্তম বিনিময় তো আল্লাহর কাছ থেকেই পাবো ইনশাআল্লাহ।
পরিবর্তনের মাস রামাদান: সাদাকা একটি ওষুধ
উস্তাদ আলী হাম্মুদার লেকচার অবলম্বনে
মাহিনুর রহমান
২৪.০৪.২১