সন্তানকে কিভাবে বড় করে তুলবেন? পার্ট – ৪ (পেরেন্টিং)

পার্ট – 1
পার্ট – 2
পার্ট – 3

পার্ট – 4
(পেরেন্টিং)

যখন আফসোস করে বলেন, ‘এই ছেলে এমন সন্ত্রাসী হলো কীভাবে?’ মনে পরে, ছেলের চার বছর বয়সে খুব শখ করে নিজের হাতে ছেলেকে খেলনা নামক পিস্তল কিনে দিয়েছিলেন। পিস্তল একটি অস্ত্র, যা কি না বেশীরভাগ ক্ষেত্রে অসৎ কাজে ব্যবহৃত হয়, কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনে ব্যবহৃত হয়। পিস্তল খেলনা সামগ্রী কীভাবে হয় আমি তা আজও ভেবে পাই নি।

‘উফ, ভাবী আর বইলেন না, বাচ্চারা সারাদিন ঘর এলোমেলো করে রাখে, এগুলি গুছাইতে গুছাইতে আমার সব সময় শেষ’, যখন বলেন, তখন মনে পরে কি, আপনার সন্তান দশ বার খেলনা এলোমেলো করতো, আর দশ বার-ই কাজের মেয়ে জরিনাকে দিয়ে সব গুছিয়ে নিতেন আর আহা আহা করে করে, সন্তানকে গুছানো না শিখিয়ে আহ্লাদ দিতেন।

স্কুল থেকে যখন কমপ্লেইন আসে, ‘আপনার ছেলে সবাই কে মারে’, মনে পরে কি, অফিস থেকে ফিরে ছেলেকে সাথে নিয়ে প্রতি সন্ধ্যায় রেস্লিং দেখতেন, আবার জন্মদিনে বক্সিং জাতিয় একটা খেলনাও কিনে দিয়েছিলেন। আপনার সন্তান নিজে নিজে মোবাইল স্ক্রল করে, গোলা-গুলি, মারা-মারি দেখছে, নাকি বয়স অনুযায়ী শিক্ষণীয় কিছু দেখছে, পরোখ করে দেখেছেন কি?

সন্তান যখন নাইট ক্লাবে গিয়ে নাচা-নাচি করে, কষ্টে আপনার চোখের পানি ঝরে, গালে হাত দিয়ে ভাবেন ‘কেনও এমন উশৃঙ্খল হয়ে গেলো’। মনে পরে, দেয়াল জোড়া ফ্ল্যাট স্ক্রিনে, রগরগে পোশাকের হিন্দি গান ছেড়ে সন্তানকে নাচিয়ে ছিলেন, আবার ফেইসবুকে নাচের ভিডিওটি ছেড়ে, কতো গর্বিত হয়ে ছিলেন।

আপনি আফসোস করেন, ‘ছেলেটা, সারাদিন গেইম খেলে, ভাত টাও রুমে দিয়ে আসতে হয়’, একটু মনে করে দেখুন তো, ছোট বেলায় মোবাইল অথবা ২৪ ঘণ্টার কার্টুন চ্যানেল ছাড়া, সময় কাটানোর আর কোন ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন কি? ঘরে একটা বইয়ের আলমারি ছিলো কি? আপনার সন্তান আপনার হাতে কখনো বই দেখেছিলো কি?

১৮ বছর বয়সে সন্তান আবদার করে বসলো গাড়ি, শুনে আপনি আকাশ থেকে পড়েন, না দিলে ঘরে অশান্তি। মনে পরে, ছোট বেলায় মুখ থেকে কোনও আবদার মাটিতে পড়ার আগেই, সেই জিনিষ কিনে হাজির করেছেন। আর সেই থেকেই শুরু হয়েছিলো কিছু না দিলেই মাটিতে শুয়ে হাত-পা দাপা-দাপি করার অভ্যাস।

আপনার ১৮ বছরের মেয়েটিকে আপনি প্রতিদিন বুঝানোর চেষ্টা করেন এতো উশৃঙ্খল জামা-কাপড় পরে যেন বিশ্ববিদ্যালয় না যায়। একটু মনে করে দেখুন তো, ৯-১০ বছর বয়সে, গায়ের সাথে ফিটিং জামা আর উরু অব্ধি ইংলিশ প্যান্ট পরিয়েছিলেন কি না? আপনার কন্যা সন্তানটি কে জ্ঞান আর বুদ্ধিতে সবার মাঝে আকর্ষণীয় না করে, শুধুমাত্র সাজপোশাকে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছেন না তো?

আপনার সাবালক অথবা সাবালিকা সন্তানটিকে প্রতিদিন তাগাদা দিচ্ছেন নামায পড়তে, অথচ মনে করে দেখেন তো, নামাযের গুরুত্ব, তাৎপর্য, কেন এবং কার জন্য নামায পড়তে হবে সেটা কখনো বুঝিয়েছেন কি না? যেই সত্ত্বার জন্য নামায, সেই সত্ত্বা কে আগে ভাল মতো পরিচয় করিয়েছেন তো?

‘এতো কোল্ডড্রিংস, চিপস, চকলেট খায়, কি যে করবো ভাবী, ডাক্তার বলসে এগুলি কম খেতে’, খুব আফসোস হচ্ছে তাই তো? মনে পরে, আপনার সন্তানটির নয় মাস বয়সে, নিজে হাতে কোল্ডড্রিংস খাইয়ে ছিলেন। সেই ছবি আবার ফেইসবুকেও শেয়ার করেছিলেন। কোল্ডড্রিংস, চিপস, চকলেট যে কম খেতে হয় সন্তানকে কখনো যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন? না কি এগুলো সবসময় বাসায় স্টোর করে রেখেছেন?

‘এতো খাবার বাছে!!! মুরগি ছাড়া কিছুই খায় না, মাছ তো ধরেও দেখে না’, অভিযোগটি করার আগে, একটু মনে করে দেখেন তো, খুব তোলা তোলা করে বাচ্চাকে শুধু মুরগি খাওয়া আপনিই শিখিয়েছিলেন কি না? না কি নিজের অলসতায় মাছ বেঁছে খাওয়া শিখান নি? টেবিল ভর্তি আইটেম করেছিলেন, নাকি নিয়ম করেছিলেন, ‘টেবিলে যেটা আছে সেটাই খেতে হবে?

‘কি যে করবো, ও তো টেবিলে বসতেই চায় না, লেখা তো দূরে থাক’, প্লে গ্রুপ পার করে, নার্সারিতে উঠার পর আপনি এই অভিযোগ করেন। বাচ্চা কে স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন, অথচ বাচ্চার একটা টেবিল কেনার প্রয়োজন মনে করেন নাই!!! হাতে মোবাইল ফোন না দিয়ে, ছোট্ট টেবিল, ছোট্ট চেয়ার, কিছু সাদা কাগজ আর কিছু রঙ্গিন পেন্সিল দিয়ে কখনো টেবিলে বসানোর চেষ্টা করেছেন?

আগে নিজে নিজেদের শুধরে নেই, তার পর না হয় সন্তানদের দুষবো!!!

Exit mobile version