Writing

সন্তানকে কিভাবে বড় করে তুলবেন? পার্ট – 2

পার্ট – 1
পার্ট – 2

আমাদের প্যারেন্টিং এ একটা নরমাল প্র্যাকটিস হচ্ছে আমরা বাচ্চাদের ইমোশনকে অনেক কম মূল্যায়ন করি।

যেমন ধরেন :- একটা বাচ্চা কাঁদছে, চিৎকার করে হাত-পা ছুড়ছে এবং বাচ্চাটা রাগ দেখাচ্ছে, জিদ দেখাচ্ছে। আর আমরা কনস্ট্যান্টলি বলি তুমি এত রাগী কেন, জেদি কেন, তোমার জিদ আমার ভাল্লাগেনা, রাগ আমার ভাল্লাগেনা। বাচ্চারা জানে যে তাদের এ আচরণগুলো আমাদের ভাল লাগে না।

এক্ষেত্রে আমি প্যারেন্টসদেরকে বলি যে আগে ইমোশন এবং বিহেভিয়ার এই দুইটার মধ্যে পার্থক্যকে আইডেন্টিফাই করুন। যেমন ধরেন যে, আমাকে দেখে আপনাদের কী মনে হয় যে আমি খুব রাগি নাকি খুব হাসিখুশি মানুষ?

বোঝাটা একটু ডিফিকাল্ট। এটা ততক্ষণ বোঝা যাবে না যতক্ষণ না আমি আপনাদের সামনে খুব চিল্লা-পাল্লা করছি।

আবার ধরেন একটা ঘটনার কারণে একজনের রাগ হয়েছে, সেই সাথে আমিও রেগে গেলাম। আমাদের দুজনেরই সমপরিমাণ রাগ হয়েছে।দুজনের মধ্যেই সমান সমান রাগ। কিন্তু যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনি আমাকে রাগী মানুষ বলবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত আমি রাগটা না দেখাই। অন্যজনের কিন্তু একই পরিমাণ রাগ হয়েছে, সে চুপচাপ বসে আছে। আপনার তো মনে হচ্ছে আরে এর তো কোনোও রাগই নেই।


এ কথাটি একারণে বলছি যে বাচ্চাদের রাগ একটা ইমোশন। আমাদের মন খারাপ যেমন একটা ইমোশন, ভাল লাগা একটা ইমোশন। তেমনি রাগও একটা ইমোশন।

আমাদের দুজনের সমপরিমাণ রাগ হয়েছে। কিন্তু একজন দেখিয়েছে আরেকজন দেখায়নি। তারমানে রাগটা কিন্তু কখনো ভুল না। রাগের কোনো ঠিক-ভুল আছে?

যখন ওরা কোনো কারণে রাগ করে, জেদ করে। আপনি ওর ইমোশনকে ট্যাগ করবেন না যে তুমি রাগী, তুমি জেদি। কারণ এগুলো ওর ইমোশন।আপনি তার রাগকে ভ্যালিডেট করবেন। বলবেন যে, ‘আমি জানি তোমার রাগ হচ্ছে। কিন্তু রাগ করে এইযে তুমি মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছ, চিৎকার করছ, জিনিসপত্র ভাঙছ। বাবা এগুলো ঠিক না।


মূল কথাটা হচ্ছে আমরা বাচ্চাদের ইমোশনকে সবসময় ভ্যালিডেট করবো, মূল্যায়ন করবো।তাদের মন খারাপ, তাদের রাগ/কষ্ট, অন্য মানুষের প্রতি ক্ষোভ এসবকিছুকে আসলে আমরা মূল্যায়ন করবো।
কিন্তু এগুলো তারা কোন বিহেভিয়ারে আপনার সামনে এক্সেপ্রস করবে সেই পজিটিভ বিহেভিয়ার গুলো তাকে শেখাবেন।


যখন আপনার বাচ্চা খুব জেদী হয় তখন যদি আপনি একটা ছোট কাজ দিয়ে শুরু করেন যে আপনি তার ইমোশনকে ভ্যালিডেট করবেন আপনি তাকে বলবেন আমি জানি তুমি রাগ করেছ, আমি জানি তোমার এখন কষ্ট হচ্ছে, আমি তোমার কথা শুনছি, মা তোমাকে ভালবাসে। আপনি তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তার চোখে চোখ রাখলেন। বাচ্চার সাথে যখনই কমিউনিকেশন করবেন, সবসময় চোখে চোখ রেখে কথা বলবেন। এগুলো বাচ্চাকে ভীষণ পজিটিভ একটা ইনপুট তাদের ব্রেইনে দেয়। যখন আমরা অনেক রাগ করি তখন যদি কেউ জড়িয়ে ধরে, ভালবাসার কথা বলে।আমরা একটু চেষ্টা করি আচ্ছা ঠিকাছে মানুষটার কথাটা একটু শুনি।

আপনি যখন বুঝবেন যে বাচ্চাটা রেগে যাচ্ছে, ও এখনি মাটিতে গড়াগড়ি খাবে তার আগেই আপনি তার ইমোশনটাকে ভ্যালিডেট করবেন এবং তাকে বলেন যে আমি তোমার কথা শুনছি।আস্তে আস্তে দেখবেন আপনি এই প্যারেন্টিং স্কিলটা কাজে লাগাবেন, আপনার কষ্ট হবে। দেখবেন যে কোথাও কোনো কাজে দিচ্ছে না। কিন্তু আস্তে আস্তে দেখবেন যে বাচ্চাটা একটু সফট হচ্ছে। অনেক সময় দেখবেন যে বাচ্চারা আমাদের কাছে প্রচুর এটেনশান চায়। রাগ, জিদের বড় একটা কারণ হচ্ছে, সেই প্রপার এটেনশানটা আমরা বাচ্চাকে দেই না।


কীভাবে বাচ্চাদের রাগ, জিদের শুরুটা হয় সেটা একটু বলি।ধরেন আমি বাসাতেই আছি। ল্যাপটপে কাজ করছি। বাচ্চাটা হয়তো আমার আশেপাশেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। বারে বারে আমার কাছে আসছে। আমি বাচ্চাকে কাজের দোহাই দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছি। আমরা ভাবছি বাসাতেই তো আছি। বাচ্চা আমার সাথেই আছে।তারমানে এই না যে, বাচ্চাটা আমার কাছ থেকে এটেনশানটা পাচ্ছে।

অনেক সময় বাচ্চাদের রাগ বলেন, তাদের জিদ বলেন, এটেনশান সিকিং বিহেভিয়ার গুলো সবচেয়ে বেশি করে যখন দেখে যে কনস্ট্যান্টলি একটা জায়গা থেকে তারা রিজেক্টেড হচ্ছে।আমার সাথে সে কানেক্ট করতে চাচ্ছে কিন্তু সে পাচ্ছে না। তখন বয়স অনুযায়ী একেকজন একেকভাবে এটেনশানটা তার দিকে নিতে চেষ্টা করে।বাচ্চাদের এই রাগের এক্সেপ্রশন দেখানো একটা এরকমই এটেনশান সিকিং বিহেভিয়ার।এজন্য আপনি যেটা করবেন, ধরেন ও টিভি দেখছে, ওর পাশে বসে জাস্ট দুই মিনিটের জন্য দাঁড়াবেন, জিজ্ঞেস করবেন, ‘কী কার্টুন হচ্ছে? ও আচ্ছা টম & জেরি!!’ অথবা ছবি আঁকছে জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘কী ছবি আকছ? ও ব্লু কালার দিয়েছ!!’

মানে আমি বলছিনা যে সারাক্ষণ বাচ্চার কাছে বসে থেকে, ওর চোখে চোখে তাকিয়ে আপনাকে 100% এটেনশান দিতে হবে। কিন্তু বাচ্চাকে ছোট ছোট ইনভেস্টমেন্ট যেমন দুই মিনিটের, তিন মিনিটের জন্য ওর জন্য সময় বের করতে পারেন।মানে বাচ্চার যেন মনে হয় ও প্রচণ্ড এটেনশানের ভিতরে আছে। এটা বাচ্চাকে একটা পজিটিভ ফিলিংস দেয়। এটা ভীষণ জরুরি যে আমি যখন বাসায় থাকব তখন যেন এই এটেনশান আসলে আমরা নিশ্চিত করতে পারি।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture