সন্তানকে কিভাবে বড় করে তুলবেন? পার্ট – ১
সন্তানকে কিভাবে বড় করে তুলবেন?
প্যারেন্টিং নেভারএনডিং জার্নি
পার্ট – ১
প্যারেন্টিং একটা নেভারএনডিং জার্নি। আমরা সব জার্নির জন্য প্রিপারেশন নেই। প্যারেন্টিং এর জন্য কি আমরা আলাদা কোনো প্রিপারেশন নেই?? আপনাদের কি মনে হয় না প্যারেন্টিং এর জন্যও একটা প্রিপারেশন আছে।
সত্যিকার অর্থে যদি বলতে হয় তাহলে বলব আপনি এই প্যারেন্টিং জার্নির জন্য যত গুছিয়ে নিজের প্রিপারেশনটা নিতে পারবেন তত আপনি এই জার্নিতে সফলভাবে টিকে থাকবেন।
প্যারেন্টিং এর অনেকগুলো প্রিপারেশনের মধ্যে একটি হল ‘নিজেদের রিলেশনশীপের যত্ন নেওয়া’।
অনেক সময় দেখবেন আমরা যখন বাবা-মা হয়ে যাই, বাচ্চাটা যেহেতু আমাদের প্রায়োরিটির লিস্টে উপরে, আমরা নিজেদেরকে সময় দিতে ভুলে যাই।
একটা জিনিস সবসময় মাথায় রাখবেন এই বাচ্চাটাকে আমরা তো অনেক যত্ন দিয়ে বড় করছি। একদিন বাচ্চাটা বড় হবে, তার বয়স হবে, তার নতুন সংসার হবে, বাচ্চাটা কিন্তু আমাদের ছেড়ে আস্তে আস্তে একটা সময় দূরে চলে যাবে। কিন্তু মৃত্যুর ঠিক আগ দিন পর্যন্ত যে দুটো মানুষ একই ছাদের নিচে থাকবেন, তারা হচ্ছে Husband & Wife বাংলাতে আমরা যাহা বলে থাকি স্বামী এবং স্ত্রী। তাই আপনাদের এই রিলেশনশীপ যদি একটু নড়বড়ে হয় এবং দীর্ঘদিন যদি এটা চলতেই থাকে। তাহলে একবার চিন্তা করুন, দীর্ঘমেয়াদি আপনাদের সম্পর্কের অবস্থা কী হবে!!
তাই যখন আপনাদের বাচ্চা হচ্ছে খেয়াল রাখবেন কখনো যেন নিজেদের রিলেশনশীপ থেকে আপনাদের ফোকাসটা না সরে যায়।
অভিভাবকত্ব প্রতিবারই জীবনে এনে দেয় এক নতুনত্বের ছোঁয়া! সামান্য ভয় এবং বিশাল দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বাবা-মার পথচলার শুরু, তাদের ছোট্ট সোনামনির সাথে। যোগ্য লালন পালন দ্বারা এই নরম পুতুলকে তাদের আকৃতি দিতে হবে পরিপূর্ণ মানুষরূপে।
কিন্তু কিভাবে?
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন একটি ধাপ হলো আদর এবং শাসনের সীমারেখা অঙ্কন। অনেকেই বলেন “আমার সন্তান যাই চায়, আমি তাই দেই!”
অথবা
“বাচ্চাকে এমনভাবে পিটাই, ঠিক না শিখে যাবে কোথায়!” সাইকোলজি বলে এই দুটোই ভুল প্যারেন্টিং স্টাইল!
সন্তানের আচারবিধি সঠিকপথে পরিচালিত করতে চমৎকার একটি সমাধান হলো reward therapy; অর্থাৎ আকাঙ্খিত আচরণে পুরস্কৃত করা এবং অনাকাঙ্খিত ব্যবহারে উপহার সরিয়ে দেয়া।
একটি ছোট্ট উদাহরণ দিয়ে বুঝানো যাক। আপনার সন্তান সারাক্ষণই খেলাধুলা করতে চায়, কিছুতেই পড়তে বসতে চায় না এবং বললে জিদ করে। এখানে আপনি দুটো কাজ করতে পারেন। এক- তাকে বকা দিয়ে/পিটিয়ে, দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়ে থাকে পড়তে বসাতে পারেন। দুই- তাকে বুঝিয়ে বলতে পারেন, যে তার খুব পছন্দের কোন একটি জিনিস (যেমন চকলেট/কার্টুন দেখা) সে পাবে না, যদি না সে ঠিকমত পড়া শেষ করে। সে পড়লে একটি নির্দিষ্ট সময় সে খেলার জন্যও পাবে।
কোনটি তার জন্য লাভজনক হবে বলে আপনি মনে করেন? সাইকোলজি এবং গবেষণা বলে দ্বিতীয়টি! দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হয়তো প্রথমটির মত এত দ্রুত কাজ করবে না, আপনার কয়েকদিন বোঝাতে হবে, কয়েকদিন সে কান্নাকাটি করবে, আপনার অনেক ধৈর্য লাগবে। তবে সে যখন নিজের কর্মফল নিজেই ভোগ করবে, তখন তার জীবনে একটি দীর্ঘমেয়াদী নিয়মানুবর্তিতা আসবে।
এক্ষেত্রে আপনাকে ৩টি জিনিস মনে রাখতে হবে-
১. যা ‘না’ হবে, তা সে যতই কান্নাকাটি করুক না কেন, ‘হ্যাঁ’ হবে না।যাতে সে মনে না করে, কান্না/জিদ করলেই সব পাওয়া যায়।
২. একই নিয়মের সাথে পরিবারের সবাইকে একমত থাকাটা জরুরী। তাহলে সে ঠিক-বেঠিকের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা পাবে।
৩. যদি পুরস্কারস্বরূপ কিছু দেবার কথা বলে থাকেন, তবে সেটা যত দ্রুত সম্ভব পালন করুন, এতে কাজ দ্রুত হবে।এবং ভালো কাজে শিশুকে অবশ্যই – অবশ্যই প্রশংসা করুন।
প্রতিটি শিশুই জন্মগত ভাবে সুন্দর, তাকে সমাজের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা অভিভাবকের দায়িত্ব। স্নেহ- মমতার পাশাপাশি, আপনার অনুপ্রেরণা, দিকনির্দেশনা এবং পর্যাপ্ত শাসনই জাতিকে উপহার দেবে একজন সুষ্ঠু মানুষ।