Writing

সত্য ঘটনা অবলম্বনে

রিক্সা থেকে নামার পর রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দিলাম ।

সে বলল … স্যার … আমাকে ১০ টাকা কম দিবেন ।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম , কম দিবো কেন ?
উত্তর না দিয়ে রিক্সাওয়ালা বলল … স্যার আমাকে ১০ টাকা কমই দেন ।

আমি তাকে এক জায়গায় বসালাম । জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা কি ?

সে উত্তর দিলো , স্যার আমার বয়স ৩৫ ।
আমার বাপের একটা রিক্সার গ্যারেজ ছিল । আমি ছিলাম খুব ষণ্ডা প্রকৃতির মানুষ । যুবক বয়সে বাপের টাকা উড়াইতাম ।

আমার বাপ মনে করলো বিয়ে দিলে আমি ঠিক হয়ে যাবো । করায় দিলো বিয়া । আমার বউটা ভালো ছিল না । আমি আর আমার বউ মিলে আরো বেশি করে টাকা উড়াতে লাগলাম । বাপটাকে নিঃস্ব করে ফেললাম । এক সময় কৌশলে সম্পত্তি গুলো নিজের নামে লেখিয়ে আমার বৃদ্ধ বাপকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে আসলাম ।

আমার বাপ সেই অবস্থায় মারা গেলো ।
বিধাতা এর হিসাব আমার থেকে বুঝে নিলেন । আমার রিক্সার গ্যারেজ আস্তে আস্তে লোকসান করতে লাগলো । এক সময় ধার দেনা নিয়ে চলতে লাগলাম ।

দিনে দিনে হয়ে গেলাম পথের ফকির ।
বউ তালাক দিয়ে চলে গেলো ।
একটা ফকিরের সাথে কেউ ঘর করে না । মাত্র আট বছরের মাথায় আমি হইলাম নিঃস্ব । এখন ঢাকায় এসে অন্যের রিক্সা চালাই । আমার পেটে ভাত জুটে না । বাপ কে কি পরিমান কষ্ট দিয়েছি সেটা জানি না । আল্লার কাছে মাফ চাই । আর ন্যায্য ভাড়া যা হয় সেটা থেকে ১০ টাকা কম নিই । আমার পাপের প্রাশ্চিত্ত করি ।

চুপ হয়ে শুনলাম ।
কিছু বললাম না ।

মনে পড়ে গেলো আরেকটা ঘটনা ।

এক মহিলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে । তার হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ । মুখটা ঝলসে দেয়া হয়েছে । কাজটা করেছে তার পাষণ্ড স্বামী

মহিলা সারাদিন শুয়ে শুয়ে নামাজ পড়ে । আর কান্নাকাটি করে ।

জিজ্ঞেস করলাম , আপনি এরকম করছেন কেন ? আশেপাশের মানুষ আপনাকে দেখে । ওয়ার্ডে আরো অনেক রোগী আছে । তারাও তো বিরক্ত হয় ।

মহিলা বলেন, আমি আমার প্রথম স্বামীকে ঠকিয়েছিলাম । সে আমাকে খুব ভালোবাসত । কিন্তু আমি তার হক আদায় করতাম না । বিয়ের পর এক সন্তান রেখে আমি চলে এলাম আমার নতুন প্রেমিকের ঘরে । বিয়ে করলাম তাকে ।

এখন এই নতুন স্বামী আমাকে মারে । আমার চেহারা পুড়িয়ে দিয়েছে সে ।
ঠিকই করেছে । আমি একটা ভালো মানুষকে ঠকিয়েছিলাম । আল্লাহর কাছে আমার একটাই চাওয়া । আল্লাহ যেন আমার আগের স্বামীকে ভালো রাখেন । তাকে যেন জান্নাত দান করেন ।

কিছুক্ষন চুপ করে রইলাম ।
আসলে মানুষ পাপের শাস্তি দুনিয়াতেই পায় । আর আখিরাতের হিসাব তো আছেই ।

জীবনটা অনেক সুন্দর ।
আমরা যারা খারাপ কাজ করে অহঙ্কার করছি অথবা এমন ভাবছি আমাদের থেকে ক্ষমতাশালী কেউ নাই তারা কিন্তু বেশ ভুল ভাবছি । যার সাথে অন্যায় করেছেন মাফ চেয়ে নেন এখনই । মানুষের হক নষ্ট করতে হয় না । যারা এই কাজটা করে তাদেরকে ভুগতে হয় ।

আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন । আমীন …
( সত্য ঘটনা অবলম্বনে )

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture