প্রায়শই কোন এক সংসারে এমন হয় যে, মেয়েটা খুবই ভালো, কিন্তু স্বামীটা খুবই খারাপ। আবার এমনও হয় যে, স্বামী বড় ভালো একটা মানুষ, কিন্তু স্ত্রী খুবই খারাপ! কিন্তু এ কারণে কেউ কাউকে ছেড়ে যায় না, যথা সম্ভব সংসারে টিকে থাকার প্রচেষ্টা করে; জীবনের চাকা চলে আপন গতিতে। যেহেতু কবুল বলে একে অপরের সাথে জীবনের গাঁটছড়া বেঁধে নিয়েছে, তাই বিচ্ছিন্ন হবার কোনো চিন্তাই আসে না।
বিবি আসিয়ার কথাই বলা যাক। যার জন্য আল্লাহ তাআলা জান্নাতে ঘর নির্মাণ করেছেন, তার স্বামী ফিরাউন ছিল কতইনা খারাপ! আল্লাহদ্রোহী! একই ছাদের নিচে যখন আসিয়া বলতেন, সুবহানা রাব্বি আল আ’লা, সেই ছাদের নিচেই ফিরাউন বলত, আনা রাব্বুকুম আ’লা!
নবি লুত আলাইহিস সালামের কথাই তো জানেন। তিনি কওমের লোককে ইমানের দাওয়াত দিলেন, অনেকেই ইমান আনয়ন করল। তার সন্তানেরাও তার দাওয়াত গ্রহণ করল। কিন্তু তার স্ত্রী সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল! একজন নবির স্ত্রী হয়েও সে বেইমান থেকে গেল!
এক ভার্সিটি পড়ুয়া বোনের ব্যাপারে জানি। তিনি খুব দীনদার। জ্ঞান হবার পর থেকেই পরদা করেন। নামাজ-কালাম পড়েন। দীনের ওপর চলেন। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি- কোথাও তার পরদার বিঘ্নয় ঘটাননি। এমন কী পরীক্ষার হলে মুখের নিকাব সরাতে বলায় দেড়ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন, তবুও নিকাব সরিয়ে পরীক্ষা দিতে রাজি হননি। শেষমেশ ভার্সিটি প্রধান এসে পরীক্ষার অনুমিত দেওয়ায় বোনটি পরীক্ষা দিলেন।
স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটি লাইফে অনেক পথহারা মেয়েও তার দীনদারি দেখে মুগ্ধ হয়ে দীনের পথে এসেছে। কিন্তু সেই বোনেরই বিয়ে হলো এমন এক খারাপ লোকের সাথে, যার মধ্যে দীনের কোনো ছিটেফোঁটা নেই! স্ত্রীকেও কোনো মর্যাদা দেয় না। অকথ্য ভাষার গালিগালাজ তো করেই; সাথে তলপেটে লাথি দেয়!
অত্যন্ত দীনদার একজন ডাক্তারকেও চিনি। যার নামাজ, তাসবিহ, দুআ, আমল, সাদাকাহ দেখে লোকজন যারপরনাই আশ্চর্য হয়। যার কথাবার্তা শুনলে মনে হয়, তিনি বড় মাপের একজন আলেম। সেই ডাক্তার সাহেবের বউ হলেন আধুনিকা! দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবি, দীনদারি মোটেও দেখতে পারেন না!
স্বামীর এসব নিয়ে প্রায়ই গোলমাল করেন। কখনও রাগ দেখিয়ে বাবার বাসায় চলে যান।
কিন্তু কয়েক মাস পর নিজে নিজেই আবার চলে আসেন! তাকে দাওয়াহ দিতে দিতে ডাক্তার সাহেবও ব্যর্থ! আশাহত!
সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর দুই দম্পতির কথা উল্লেখ করলাম। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, দুই দম্পতির ঘর আলোকিত করে কিন্তু দুটি করে সন্তান আছে! প্রথমে উল্লিখিত দম্পতির একটা মেয়ে, আর পরে উল্লিখিত দম্পতির একটা ছেলে।
সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে দুই মেরুর দুই মানব-মানবী চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের সংসারজীবন!
ঘরের ছাদ একটাই, কিন্তু তার নিচে দাম্পত্যজীবন যাপনকারী দুজন মানব-মানবী হয় ভিন্ন প্রকৃতির। মানবিক কিংবা সামাজিক অথবা পারিবারিক দায়বদ্ধতার কারণে এরা সংসারজীবন চালিয়ে যায় ঠিক; লোকদের কাছে এরা স্বামী-স্ত্রী হয়ে থাকে, কিন্তু দুই দেহে দুই প্রাণ হয়ে; দুই দেহে একপ্রাণ হয় না কখনও!
এজন্য বিয়ের আগে থেকেই দুআ করতে হয়। কেঁদেকেটে আল্লাহর কাছে চাইতে হয়। আল্লাহ যেন দুনিয়াতেই এক টুকরো জান্নাত মিলিয়ে দেন।
সংসার জীবন বড় আজিব! বড় অদ্ভুত! বড় বৈচিত্র্যময়!
লিখেছে
Ainul Haque Qasimi