শীতের রাতে ফরয গোসল
ইসলাম একটি সহজ দীন। এরচেয়ে সহজ জীবন ব্যবস্থা আর নেই। যেকোনো বিধানের ক্ষেত্রে সহজ থেকে সহজ প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে ইসলাম। অপারগতায় অবশ্যই বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। মানুষের স্বভাব সামর্থ্য ও ফিতরতের সাথে সমন্বিত করেই শরীয়ত প্রবর্তিত হয়েছে।
যৌন চাহিদা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এ চাহিদা পূরণে যেকোনো হালাল প্রক্রিয়া ইসলাম সমর্থন করে। স্ত্রীর হায়েয ও নেফাসের সময় বাদ দিয়ে যখন-তখন এ প্রয়োজন পূরণের অনুমতি রয়েছে। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা যেকোনো ঋতুতে এটা পূরণ করা যেতে পারে। প্রয়োজন পড়লে মাঘের শীতেও এটা সারতে পারেন।
কথা হলো,
ফরয নামায সামনে রেখে সহবাস করা যাবে কি না?
হাঁ, যাবে। প্রয়োজন দেখা দিলে সে প্রয়োজন অবশ্যই পুরা করতে পারবেন। হাঁ, যদি কারও প্রবল ধারনা হয়, এখন সহবাস মানে ফরজ নামায ছুটে যাওয়া, অলসতা ভেঙে তার পক্ষে গোসল করা আর হবে না, তা হলে তখন এ কাজে লিপ্ত হওয়া ঠিক হবে না। বরং তা নামাযের পরে হতে পারে।
স্বপ্নদোষ ও সহবাসের পর বড় কাজ হলো গোসল করা, অতঃপর নামায পড়া। শীতের রাতে সবচেয় কঠিন বিষয় হলো এই গোসল। কারও যদি গোসল ফরজ হয়ে যায়, চাই সহবাসের কারণে, বা স্বপ্নদোষের কারণে, অথবা অন্যকোনো কারণে; তা হলে তার গোসল করার উপায় কি?
অথবা
এর বিকল্প কি?
হাঁ, গোসল করা একদম সহজ, শুধু সামান্য সাহসের প্রয়োজন। একবালতি পানির সাথে একমগ সাহস মেলালেই গোসল সেরে যায়, চাই যত শীতই হোক না কেন! কাজেই অলসতা ও ভীরুতা ছাড়ুন, সাহসী ও সক্রিয় হোন।
শয়তানের ওয়াসওয়াসা ও গাফলত পরিহার করুন। মনে রাখবেন, শয়তানের আসর ও কুমন্ত্রণা তাড়াতে পানি এক মোক্ষম ওষুধ। এর আগে প্রথম কাজ হলো- দোয়া পড়ে শোয়া থেকে উঠে পড়া। শুয়ে শুয়ে গোসলের কথা মোটেও ভাববেন না। তা হলে আর উঠতে পারবেন না। উঠে অযু ইস্তিঞ্জা করে নিন। এরপর গোসলের পদক্ষেপ নিন। দেখবেন ব্যাপারটা সহজ হয়ে গেছে।
গোসল করার সাহস থাকার পরেও বাস্তব কোনো ওজর থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে শীতের সাথে অযথা ফাইট করার প্রয়োজন নেই। বরং শরীয়তের দেওয়া রুখসত গ্রহণ করুন। যদি গোসল করার কারণে সত্যিই কোনো শারীরিক সমস্যা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে, যেমন-
আপনার বাতব্যথা বেড়ে যেতে পারে,
আপনার কোনো অঙ্গ অবশ হয়ে যেতে পারে,
আপনার বুকে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে,
আপনার জ্বর বা সর্দি দেখা দিতে পারে,
আপনার কোনো রোগ বেড়ে যেতে পারে,
আপনার পূর্ব-অসুস্থতা সারতে দেরি হতে পারে,
আপনার এলার্জিক সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে;
আপনার শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানী বেড়ে যেতে পারে;
আপনার জীবনের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে;
অথবা অন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করেন; তা হলে আপনার জন্য গোসলের পরিবর্তে তায়াম্মুম করা একদম জায়িয। আপনি নির্দ্বিধায় ফরয গোসলের বদলে ফরয তায়াম্মুম করুন এবং নামায আদায় করুন।
হাঁ, তায়াম্মুম করার পূর্বে গরম পানি দিয়ে ট্রাই করতে পারেন। যদি গরম পানির সুযোগ থাকে তা হলে গরম পানি দিয়ে গোসল করে নিন। নতুবা তায়াম্মুম করুন।
কিন্তু এমন কোনো সমস্যার আশঙ্কা না থাকলে শুধুমাত্র শীতের কষ্টের কারণে তায়াম্মুম করার বিধান শরীয়তে নেই। সুতরাং গোসল ফরয হওয়ার পর নিজের মনের সাথে বোঝাপড়া করুন। নবীজির (সা.) ভাষায়-
استفت قلبك.
“নিজের মনকে জিজ্ঞাস করুন।”
হাঁ, আপনার বেলায় আপনার মন মুফতী সাহেব!
যদি আপনার মন আপনাকে বাস্তব ওজরের কারণে তায়াম্মুম করতে বলে, এতে মনে কোনো খটকা না জাগে, তা হলে আপনি তায়াম্মুম করুন। অন্যথা আপনি গোসল করুন এবং নামায পড়ুন।
গোসলকে কঠিন মনে করার অন্যতম কারণ এর অয়োজন ও বাহুল্যবিলাস। যেমন- সাবান লাগানো, সেস্পু মাখা, কাপড়চোপড় ধোয়া, অনেক্ষণ ধরে শরীর ঘষামাঝা করা ইত্যাদি। কিন্তু শীতের রাতে গোসল সংক্ষেপ করলে তেমন কঠিন হবে না; এবং নামাযও কাযা হবে না।
গোসল করার সহজ উপায়:
প্রথমে বাথরুমে গিয়ে লজ্জাস্থান ও নাপাকস্থান গুলো ধুয়ে ফেলুন। কাপড়ে নাপাক লেগে থাকলে শুধুমাত্র নাপাকের স্থানটি ধুয়ে নিন। তারপর ওই কাপড় পরে, অথবা একটা গামছা পরে গোসল করে নিন। ব্যস। নাপাক কাপড়সহ কখনো গোসল করবেন না।
মহিলারা বড় কাপড় ও অতিরিক্ত কাপড়গুলো আলাদা করে রাখুন। চুল খোপা করে বেঁধে রাখুন। গোসল সহীহ হওয়ার জন্য ঝুলন্ত চুলে পানি পৌঁছানো জরুরি নয়। কেবল চুলের গোড়ায় পানি পৌঁছানোই যথেষ্ট।
নবীজির গোসল কতই না সহজ সংক্ষেপ হতো যে, এক সা’ তথা সোয়া তিনকেজি পারি দ্বারা তিনি গোসল সেরে নিতেন।
এটাও যদি কারও কাছে কঠিন মনে হয়- তার জন্য আরও সহজ উপায় আছে। সেটা মনে হয় সবাই বুঝে ফেলেছেন। হাঁ, নামায কাযা করার চাইতে বিবস্ত্র হয়ে গোসল করা অনেক ভালো। কাজেই রাতের গোসল কঠিন করে নামায কাযা করা পরিত্যাগ করুন। স্ত্রী সহবাসকে কখনোই নামায ত্যাগের কারণ বানাবেন না। নচেৎ সেটা বরকতশূন্য হয়ে পড়তে পারে। আল্লাহকে ভয় করুন।
নামায কায়েম করুন।