শশুর তার পুত্রবধুর সাথে যেনা করলে তার ছেলের জন্য কি হালাল
যদি শশুর তার পুত্রবধুর সাথে যেনা করে তাহলে কি ওই নারী তার ছেলের জন্য হালাল হবে? প্লিজ দয়া করে এর সঠিক সমাধান রেফারেন্সসহ দিলে উপকৃত হবো।
ইমাম আবূ আজম আবূ হানীফা রহঃ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর মতে ধর্ষণ করার দ্বারা ছেলের জন্য উক্ত স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে। ইমাম মালেক রহঃ এর একটি কওলও এটি।
জিনা করার দ্বারা হুরমাতে মুসাহারাত তথা সুনির্দিষ্ট কিছু আত্মীয়কে আজীবন বিবাহ নিষিদ্ধতার বিধান আরোপিত হয় কি না?
ব্যাখ্যা করলে এমন দাঁড়ায়, যেমন আব্দুল আলীম এক মহিলাকে বিবাহ করল, এখন আব্দুল আলীমের জন্য তার স্ত্রীর মাকে বিবাহ করা হারাম। সেই সাথে তার স্ত্রীর আগের ঘরের মেয়ে এবং তার নিচের কাউকে বিবাহ করা হারাম। সেই সাথে আব্দুল আলীমের আগে ঘরের ছেলের জন্য আব্দুল আলীমের নতুন স্ত্রীকে বিবাহ করা হারাম।
আব্দুল আলীম বিবাহ না করে কোন মহিলার সাথে [নাউজুবিল্লাহ] জিনা করলেও কি এরকম হুরমতে মুসাহারাত এর হুকুম আরোপিত হবে কি না? এ বিষয়ে চার ইমামের মাঝে মতভেদ আছে।
তবে দলীলের দিক থেকে শক্তিশালী বক্তব্যটি ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল রহঃ এর। তথা বিয়ের দ্বারা যেমন হুরমাতে মুসাহারত সাব্যস্ত হয়, তেমনি জিনার দ্বারাও হুরমাতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হয়। কয়েকটি প্রমাণ নিচে উপস্থাপন করা হল।
কুরআন থেকে
وَلاَ تَنكِحُواْ مَا نَكَحَ آبَاؤُكُم مِّنَ النِّسَاء إِلاَّ مَا قَدْ سَلَفَ إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَمَقْتًا وَسَاء سَبِيلاً
যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। {সূরা নিসা-২২}
নিকা তথা বিয়ের অর্থ দু’টি। যথা- ১- আকদ করা। ২- সহবাস করা।
আসলে মৌলিক অর্থ সহবাসই। কিন্তু যেহেতু আকদের মাধ্যমেই সহবাস জায়েজ হয়, তাই নিকাহ বলে আকদকেই সাধারণত বুঝানো হয়ে থাকে।
ইমাম রাজী রহঃ উক্ত আয়াতের অধীনে বিধান লিখতে গিয়ে লিখেন-
قَوْله تَعَالَى وَلا تَنْكِحُوا مَا نَكَحَ آباؤُكُمْ مِنَ النِّساءِ قَدْ أَوْجَبَ تَحْرِيمَ نِكَاحِ امْرَأَةٍ قَدْ وَطِئَهَا أَبُوهُ بِزِنًا أَوْ غَيْرِهِ إذْ كَانَ الِاسْمُ يَتَنَاوَلُهُ حَقِيقَةً فَوَجَبَ حَمْلُهُ عَلَيْهَا
অনুবাদ- আল্লাহ তাআলার বাণী “যে নারীকে তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না” আবশ্যক করছে ঐ মহিলাকে বিবাহ করা, যার সাথে তার পিতা সহবাস করেছে জিনার মাধ্যমে বা অন্যকোনভাবে। যেহেতু নিকাহ শব্দটির আসল অর্থ সহবাস। তাই আসল অর্থে এটিকে নিহিত করাই আবশ্যক। {আহকামুল কুরআন লিররাজী-২/১৩৬, সূরা নিসা-২২}
সাহাবায়ে কেরামের ফাতওয়ার আলোকে
নিচে উদ্ধৃত সাহাবায়ে কেরাম জিনাকে হুরমাতে মুসাহারাত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। যেমন-
১- হযরত ইমরান বিন হুসাইন রাঃ। {আহকামুল কুরআন লিররাজী-২/১৩৭}
হযরত উবাই বিন কা’ব রাঃ। {ইলাউস সুনান-১১/২০}
হযরত উমর রাঃ।
হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাঃ।
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ। [সহীহ কওল অনুপাতে]
জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ।
হযরত আয়শা রাঃ। {ফাতহুল কাদীর লিইবনে হুমাম]
তাবেয়ীগণের ফাতওয়া
নিচে উদ্ধৃত তাবেয়ীগণও একই ফাতওয়া প্রদান করতেন। যেমন-
হযরত হাসান বসরী রহঃ।
হযরত কাতাদা বিন দাআমা রহঃ।
সাঈদ বিন মুসাইয়িব রহঃ।
অতএব ছেলের জন্য তার স্ত্রী চিরতরে হারাম হয়ে যাবে।