বর্তমান সময়ের একটি কমন রোগ হলো শর্টকাট খোঁজা আর তা পরীক্ষায় পাশ থেকে শুরু করে ইসলাম পালন পর্যন্ত বিস্তৃত।এখন আপনি ভাবছেন শর্টকাট তো ভালো উপায় যেকোনো বিষয় অর্জনের জন্য কিন্তু আমি এটাকে রোগ বলছি কেনো! শর্টকাট বিষয়টা সময় ও শ্রম বাঁচিয়ে কার্যসিদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ সফল প্রমাণিত হলেও সময়ের আবর্তনে আপনি ঠিকই বুঝতে পারেন যে,ইশ্ শর্টকাটের চেয়ে যদি লম্বা রাস্তাই অনুসরণ করতাম এবং মাঝেমধ্যে কার্যসিদ্ধির পর অতিরিক্ত পরিশ্রম ও সময় ব্যায় করে ঠিকই ঐ কাজটি আপনি করতে বাধ্য হন।
যেমন: এই ধরুন আমাদের মেডিকেল কলেজের পড়াশুনার ক্ষেত্রেই বেশ বড় বড় টেক্সটবুক থাকা সত্ত্বেও সময়ের কথা চিন্তা করে আমরা পাশের জন্য সিনিয়র ভাইয়া-আপুদের নোট পড়ি,গাইড পড়ি। কিন্তু চূড়ান্ত ধাপে পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য সেই গাইটনের ফিজিওলোজি,ডেভিডসনের মেডিসিন,বেইলি লাভের সার্জারি পড়তে হয়।অথচ এই পরিশ্রমটা যদি আমাদের এমবিবিএস লেভেলেই করতে পারতাম তবে আমাদের পরবর্তীতে কষ্ট কম হতো।
যদি এই শর্টকাট পন্থার রোগটা আমাদের পার্থিব বিষয়াদিতে সীমাবদ্ধ থাকতো তাও ভালো ছিলো কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য তা ইসলাম পালনের সীমানায় প্রবেশ করেছে। অধিকাংশ যুবক-যুবতী ইসলাম পালনে শর্টকাট খুঁজে আর এই খোঁজাখুঁজির মূল উদ্দেশ্য ইসলামের কিছু নির্দেশকে এড়িয়ে যাওয়া ,কেবল সুফলটাই উপভোগ করা। অথচ ইসলাম পালনে সুফল পেতে হলে আপনাকে পুরোটাই গ্রহণ করতে হবে, হালাল-হারাম মানতে হবে, আপনার উপর বর্তিত দায়িত্ব পালন করতে হবে, আল্লাহর হক,বান্দার হক আদায় করতে হবে।
এই ব্যাপারে আপনি একটি বৈদ্যুতিক সার্কিটের কথাই ভাবুন।পুরো সার্কিটের মধ্য দিয়ে যদি বিদ্যুত প্রবাহিত হয় তবেই না সার্কিটে থাকা লাইট জ্বলবে,ফ্যান চলবে। কিন্তু আপনি যদি সার্কিটের শুরু আর শেষ বিন্দুর মাঝে একটা শর্টকাট লাইন স্থাপন করেন এই উদ্দেশ্যে যে, আপনি তাড়াতাড়ি অপর পাশে বিদ্যুত পৌঁছিয়ে দিবেন-এই উদ্দেশ্য হয়তো বা আপনি সফলও হলেন। কিন্তু প্রকৃত সার্কিটে থাকা বাতিগুলো জ্বলতে চাইবে না কেননা বিদ্যুৎ ছোটো ও দ্রুততর পথে চলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
এখন চিন্তা করুন সেই ফ্যান-লাইট হচ্ছে ইসলামের ফরজ-ওয়াজিব আর আপনি বাইপাস করতে গিয়ে সেগুলোকেই এড়িয়ে যাচ্ছেন তখন কি আপনার ইসলাম পালনের সার্থকতা থাকলো? আপনি যে মুসলিম পরিচয় দিচ্ছেন তার কাজেকর্মে ছাপ রাখতে পারলেন কি?
উত্তর হচ্ছে না কেননা হালাল-হারাম,ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নত এড়িয়ে ইসলাম পালন করা আর না করার মধ্যে পার্থক্য শুধু মুখের এই দাবিটুকু যে,”আমি মুসলমান”,যার প্রতিফলন আপনার কাজেকর্মে অনুপস্থিত।
বর্তমান সময়ের অনেক যুবক-যুবতী একইভাবে শর্টকাট খুঁজতে গিয়ে কর্মের দোহাই দিয়ে প্রতি ওয়াক্তের সুন্নাত নামাজকে এড়িয়ে যায়।কখনো কখনো অপরিচ্ছন্নতা, অসুস্থতার দোহাই দিয়ে ফরজ সালাতকেও কাযা করে।পর্দা ফরজ জানা সত্ত্বেও মেয়েরা ওজর আপত্তি করে এই অবশ্য পালনীয় কাজটি এড়িয়ে যায়। ধূমপানের মতো বদভ্যাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে যুবকরা “মাকরূহ” বলে গলা হাকায়।
এভাবে ইসলামের বিধিনিষেধ বাইপাস করে তারা বিদ্যুতের মতো এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে ঠিকই পৌঁছে যায় কিন্তু দিনশেষে তাদের অন্তর ইসলামের আলো শূন্য রয়ে যায়,কেননা তারা যে শতভাগ ইসলামী জীবনব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যে নিজেকে প্রবাহিত করেনি।
আর এভাবে শর্টকাটে যখন আর পেরে উঠতে পারে না তখন তারা ইসলামচ্যুত হয়, নিজেকে নাস্তিক বলে পরিচয় দিয়ে ইসলামের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ঘটায়। আর আজকের দিনে যুবক-যুবতীদের মধ্যে এই বিষয়টি ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। হিদায়াতের পথের অনুসন্ধান পেলেও সেখানে নিজের মন মতো শর্টকাট না থাকায় তা পরিহার করে মনগড়া জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে তারা আর এভাবে উম্মাহ তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি বড় অংশের অবদান থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
আপনাকে আবার সেই বৈদ্যুতিক সার্কিটে শেষ একবারের জন্য নিয়ে যাই। বৈদ্যুতিক সার্কিটে যখন শর্টসার্কিট হয় খেয়াল করবেন সেই সংক্ষিপ্ত রাস্তায় বিদ্যুতের দ্রুত প্রবাহের জন্য প্রচন্ড তাপ উৎপন্ন হয় যার ফলস্বরূপ আগুন ধরে যায় এবং অনেক বড় বড় অগ্নুৎপাতের সূত্রপাত এখান থেকেই হয়।একইভাবে আজ উম্মাহর একটা বিরাট অংশ এই শর্টসার্কিটের ফাঁদে পড়ায় উম্মাহর ঘরে আগুন লেগেছে, উম্মাহর শক্তি উম্মাহর শত্রুতে পরিণত হচ্ছে, জন্মসূত্রে ইসলাম লালন করা ছেলে বা মেয়েটি সেক্যুলারিজম বা নাস্তিকতাবাদ প্রচারে কাজ চালাচ্ছে। উম্মাহর কল্যাণের স্বার্থে যত দ্রুত সম্ভব এই অবস্থা থেকে উত্তরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে, শতভাগ ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক জীবনব্যবস্থায় তাদের দীক্ষিত করতে হবে।