Writing

রোগীর জন্য নামায ও পবিত্রতা

রোগী কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে

রোগীর উপর ওয়াজিব হলো পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা। সুতরাং সে ছোট নাপাকি থেকে অজু করবে এবং বড় নাপাকি থেকে গোসল করবে।

আর যদি পানির দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করতে সে সামর্থ না হয়, তা অপারগতা, রোগবৃদ্ধির ভয় অথবা আরোগ্য লাভে দেরী হওয়ার আশঙ্কায় হোক, সে তখন তায়াম্মুম করতে পারে।

তায়াম্মুমের পদ্ধতি হলোঃ সে তার উভয় হাত মাটির উপর মেরে তার দ্বারা প্রথমে সম্পূর্ণ চেহারা মসেহ করবে, তারপর উভয় পাঞ্জা একটি দিয়ে অপরটি মসেহ করবে।

যদি রোগী নিজে নিজে পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে তাহলে অপর কোনো ব্যক্তি তাকে ওজু বা তায়াম্মুম করাবে।

যদি রোগীর পবিত্রতা অর্জনের (ওজুর) কোনো অঙ্গে জখম থেকে থাকে তাহলে সে তা ধৌত করে নিবে। আর যদি ধুইলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হয় তাহলে ভাল করে মসেহ করে নিবে অর্থাৎ পানির দ্বারা হাত সিক্ত করে জখমের উপর বুলিয়ে নিবে। আর মসেহ দ্বারাও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা হলে সে তায়াম্মুম করে নিবে।

পবিত্রতা অর্জনের কোনো অঙ্গে যদি ভাঙ্গন থাকে এবং নেকড়া অথবা জিব্স জাতীয় কিছুর দ্বারা পট্টি দেওয়া থাকে তা হলে সেই অঙ্গ না ধুয়ে তার উপর দিয়ে মসেহ করে নিবে। তায়াম্মুম করার কোনো প্রয়োজন নেই; কেননা, মসেহ ধোয়ার স্থলাভিষিক্ত হয়ে গেছে।

দেয়াল অথবা অন্য কোনো ধুলাযুক্ত পবিত্র বস্তুর উপর হাত মেরে তায়াম্মুম করা জায়েয আছে। যদি দেয়াল মাটি জাতীয় নয় এমন কোনো বস্তু দ্বারা প্রলেপ করা হয়, যেমন রং এর আস্তরণ, তাহলে তার দ্বারা তায়াম্মুম করা যাবে না।

মাটির উপর অথবা ধুলাযুক্ত দেয়াল অথবা অন্যকিছুর উপর তায়াম্মুম করা সম্ভব না হলে একটি পাত্র বা রুমালের মধ্যে মাটি রেখে তা থেকে রোগী তায়াম্মুম করে নিতে পারে।

যদি কোনো এক সালাতের জন্য রোগী তায়াম্মুম করে এবং অপর সালাত পর্যন্ত তার পবিত্র বহাল থাকে তা হলে সে প্রথম তায়াম্মুম দিযে পরবর্তী সালাত পড়ে নিতে পারে, দ্বিতীয় সালাতের জন্য তাকে আবার তায়াম্মুম করতে হবে না। কেননা, সে পবিত্র অবস্থায় বহাল রয়েছে এবং তা বাতিল হয়নি।

রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, তার সম্পূর্ণ শরীর নাজাসাত (অপবিত্র বিষয়) থেকে পবিত্র করা। আর যদি তা সম্ভব না হয় তা হলে সেই অবস্থায়ই সালাত পড়ে নিবে, পুনরায় তা পড়তে হবে না।

রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, পবিত্র কাপড়ে সালাত পড়া। যদি কাপড় নাপাক হয়ে যায় তাহলে উহা ধুয়ে নিবে অথবা উহার পরিবর্তে অন্য পবিত্র কাপড় বদলে নিবে। যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে ঐ অবস্থায়ই সালাত পড়লে তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে; পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।

রোগীর পক্ষে ওয়াজিব হলো, পবিত্র স্থান ও বস্তুর উপর সালাত পড়া। যদি স্থান অপবিত্র হয় তা হলে তা ধৌত করে নিবে অথবা পবিত্র কোনো বস্তু দিয়ে বদলে নিবে অথবা এর উপর পবিত্র কোনো কিছু বিছিয়ে নিবে। তাও যদি সম্ভব না হয় তা হলে যে অবস্থায় থাকে সে অবস্থায়ই সালাত পড়ে নিবে। সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় সালাত পড়তে হবে না।

পবিত্রতা অর্জনে অপারগ হওয়ার কারণে রোগীর পক্ষে নির্ধারিত সময়ের পর দেরী করে সালাত পড়া জায়েয নয়; বরং সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করে সময়মত সালাত পড়ে নিবে; যদিও তার শরীরে বা কাপড়ে অথবা সালাতের স্থানে এমন নাজাসাত থেকে যায় যা দূর করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি।

রোগী কিভাবে সালাত পড়বে

রোগীর উপর ওয়াজিব হলো সে ফরজ সালাত দাঁড়িয়ে পড়বে; তা নত হয়ে হোক আর প্রয়োজনে লাঠির উপর অথবা দেয়ালের উপর ভর দিয়ে হোক।

রোগী দাঁড়াতে সক্ষম না হলে বসে সালাত পড়বে। তবে উত্তম হলো দাঁড়ানো ও রুকুর ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসা।

যদি রোগীর পক্ষে বসে সালাত পড়া সম্ভব না হয় তাহলে সে ক্বিবলামূখী হয়ে পার্শ্বের উপর কাত অবস্থায় সালাত আদায় করবে। ডান পার্শ্বে কাত হওয়া ভাল। আর যদি ক্বিবলামূখী হওয়া সম্ভব না হয় তা হলে যে দিকে আছে সে দিকেই মুখ করে সালাত পড়ে নিলে তার সালাত শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় সেই সালাত পড়তে হবে না।

রোগী যদি পার্শ্বের উপর কাত হয়ে সালাত পড়তে অপারগ হয় তা হলে ক্বিবলার দিকে পা রেখে চিত হয়ে সালাত পড়ে নিবে। তবে উত্তম হবে মাথাটি একটু উপরে তুলে রাখা, যাতে করে সে ক্বিবলামূখী হতে পারে। যদি পা ক্বিবলার দিকে রাখতে না পারে তা হলে যেভাবেই থাকে সেভাবেই রেখে সালাত পড়ে নিবে এবং পুনরায় সেই সালাত তাকে পড়তে হবে না।

রোগীর উপর ওয়াজিব হলো, সালাতে সঠিকভাবে রুকু ও সিজদাহ সম্পাদন করা। আর যদি সম্ভব না হয় তা হলে ইশারায় রুকু ও সিজদাহ আদায় করবে। তবে রুকুর চেয়ে সিজদায় মস্তক অধিকতর নত করবে। যদি রোগী রুকু আদায় করতে সমর্থ হয় এবং সিজদা করতে না পারে তা হলে সে সঠিক ভাবে রুকু আদায় করবে এবং ইশারার মাধ্যমে সিজদাহ আদায় করবে আর যদি সে সিজদাহ করতে পারে এবং রুকু করতে না পারে না তা হলে সে সঠিক অবস্থায় সিজদাহ আদায় করবে এবং ইশারার মাধ্যমে রুকু সম্পাদন করবে।

রোগী যদি রুকু ও সিজদাহ মাথার ইশারায় আদায় করতে সমর্থ না হয় তা হলে তা চোখের ইশারায় আদায় করবে এবং রুকুর বেলায় সামান্য এবং সিজদাহর বেলায় একটু বেশী পরিমাণে চোখ দাবাইবে। হাতের দ্বারা ইশারা করা, যেমন – কোনো কোন রোগী করে থাকে, শরীয়ত সম্মত নয়। এর কোনো আসল না কুরআন বা সুন্নাতে আছে, না বিশ্বস্ত আলেমবর্গের কোনো বক্তব্যে রয়েছে।

যদি রোগীর পক্ষে মাথার দ্বারা বা চোখের দ্বারা ইশারা করা সম্ভব না হয় তাহলে অন্তর দিয়ে সালাত পড়বে, এরপর অন্তর দিয়ে রুকু, সিজদাহ, ক্বিয়াম ও উপবেশনের নিয়ত করবে। কারণ, প্রত্যেক লোকের নিয়তানুসারে তার কাজের মূল্যায়ন করা হয়।

রোগীর উপর ওয়াজিব হলো: প্রত্যেক সালাত তার নির্ধারিত সময়ে আদায় করা এবং সাধ্যমত ওয়াজিবসমূহ সঠিকভাবে সম্পাদন করা। যদি প্রত্যেক সালাত তার নির্ধারিত সময়ে পড়া তার পক্ষে কঠিন হয় তাহলে যোহর ও আসর একত্রে এবং মাগরিব ও এশা একত্র করে পড়বে। সে পরবর্তী সালাত অর্থাৎ যোহরের সাথে আসর এবং মাগরিবের সাথে এশার সালাত আগেই একত্র করে পড়তে পারে। তবে ফজরের সালাত তার পূর্ববর্তী অথবা পরবর্তী কোনো সালাতের সাথে কোনো অবস্থায় একত্র করে পড়া জায়েয নয়।

যদি কোনো রোগী চিকিৎসার জন্য বিদেশে মুসাফির অবস্থায় থাকে তখন সে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত চার রাকা‘আতের সালাত অর্থাৎ যোহর, আছর ও এশার সালাত দু’রাকাআত করে পড়তে পারে। তার সফর দীর্ঘ মেয়াদী হোক অথবা স্বল্পমেয়াদী তাতে কোনো পার্থক্য হবে না।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture