রেখো বিশ্বাস সদা আল্লাহর ক্ষমতায়

আজকের দু’আঃ
“ রেখো বিশ্বাস সদা আল্লাহর ক্ষমতায় ”
আজকের দু’আর প্রধান আলোচ্য বিষয়, নিজের করা দু’আর উপর ভরসা টা কেমন হওয়া উচিত। অনেক সময়েই দেখা যায়, লোকেরা কোন একটি বিশেষ দু’আ করছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা ইতোমধ্যে ই সেই দু’আর কার্যকারিতা ধ্বংস করে ফেলেছে। কিভাবে? কেননা তারা নিজেরা ও এক্বীন রাখেনা যে এই দু’আ আল্লাহর কাছে কবুল হবে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার কুদরত, ক্ষমতা সম্বন্ধে তারা সম্যক অবগত নয়৷

তাই ইমাম ইবনুল কায়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন,
“যদি তোমার মাঝে সত্য ই আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্বুল থাকে, ঠিক যেভাবে তিনি ভরসাস্থল হবার দাবি রাখেন; তাহলে তুমি পাহাড়কে ও তার অবস্থান থেকে সরাতে সক্ষম হবে।”

আবু মূসা আল আশআরী(রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি স্বয়ং বসরায় এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলাম। একটি সম্পূর্ণ বসতিতে আগুন লেগে গেলো। বাজারে লোকেরা ছোটাছুটি করে সেই বসতির লোকেদের জানান দিচ্ছিলো। যেনো তারা দ্রুত বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে ক্ষতির হাত থেকে সম্পদগুলো যথাসম্ভব রক্ষা করতে পারে।
আমরা এমন একজন মানুষের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, যার বাড়ি সেই বসতিতে ই ছিলো।

আমরা তাকে আগুন লাগার ঘটনা জানালাম এবং দ্রুত বাড়ির দিকে যেতে বললাম। প্রত্যুত্তরে সে বললো, আমার বাড়ি আগুনে পুড়ে যাওয়া নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কেননা আমি আল্লাহর কাছে তাঁর নামে শপথ করেছি। সম্পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আমি বলতে পারি, আমার ঘর আগুনে জ্বলে যাবে না।

আবু মূসা আল আশআরী(রাঃ) উল্লেখ করেছেন, যখন পুরো বসতির আগুন নিভে গেলো, ক্ষয়ক্ষতির সন্ধান করতে গিয়ে দেখা গেলো যে, সত্যই সব বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেলেও তার বাড়ি রয়েছে সম্পূর্ণ অক্ষত। সে সত্য ই বলেছিলো। কারণ আমি রাসূল(সাঃ) এর কাছ থেকে শুনেছি যে তিনি বলেছেনঃ

আমার উম্মাতের মাঝে এমন কিছু ব্যক্তি থাকবে, যারা সমাজে অবহেলিত রূপে থাকবে, সবার থেকে আলাদা করে চিনবার জন্য তাদের মাঝে কোন তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যদি তারা আল্লাহর নামে কোন শপথ করে, তবে আল্লাহ সে শপথ পূর্ণ করে দেন।

সুবহানাল্লাহ। কতো অনুপম মর্যাদা! কতিপয় ব্যক্তি, যারা সমাজে গুরুত্বহীন তাদের কাছে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়া কতোটা সহজ, তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এই ঘটনাটি। ভাবতে ই অবাক লাগে, সমাজের সুবিধাবঞ্চিত লোকেরা- যাদের কোন অর্থনৈতিক স্ট্যাটাস নেই, সবার চোখে তাদের কোন বিশেষ মর্যাদা নেই; অথচ সর্বশক্তিমান, মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর কাছে তারা দু’আ করলে তা সহজেই কবুল হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এটি কিভাবে সম্ভব হলো৷ তা কি বোঝা যাচ্ছে? কেবল এবং কেবল মাত্র আল্লাহর কাছে যে দু’আ করেছে তার প্রতি তারা পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল রেখেছে। ভরসা করেছে শুধুমাত্র মহান আল্লাহর প্রতি।

অন্য একটি বর্ণনা থেকে জানা যায়, আবু দারদা (রাঃ) বলেন, একবার আমার আশেপাশের এলাকার সমস্ত বাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলো। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমার বাড়িটি এ ক্ষতি থেকে বেঁচে যায়। কেননা আমি প্রতিদিন এ দু’আটি আমল করতামঃ

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

অর্থ : “ [আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি] ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।”

রাসূল (সাঃ) আমাদের প্রত্যহ সকালে এবং সন্ধ্যায় ৩ বার এ দু’আটি পাঠ করতে শিখিয়ে গিয়েছেন।

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদেরকে দু’আ করে আল্লাহর প্রতি এবং কৃত দু’আর প্রতি পরিপূর্ণ ভরসা করবার তাওফিক দান করুন। আল্লাহ আমাদের দু’আর শক্তির মাধ্যমে তার কুদরত আমাদের প্রদর্শন করুন। এই দুনিয়ার বিপদসমূহ এবং জাহান্নামের আগুন থেকে আমাদের রক্ষা করুন।
আমীন।

পুণ্যবানের প্রার্থনা
(পর্ব-২৯)

মূলঃ ওমর সুলাইমান

লিখেছেন

সাবিহা সাবা

আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভার লঘু করতে কিছুটা লিখালিখির চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্য বিশেষ পছন্দ।
আকাশে পরিচিত হতে চাই💙
জমিনে না হয় অপরিচিত ই থাকলাম...

All Posts

আল্লাহর কাছে জবাবদিহির ভার লঘু করতে কিছুটা লিখালিখির চেষ্টা করি। এক্ষেত্রে অনুবাদ সাহিত্য বিশেষ পছন্দ।
আকাশে পরিচিত হতে চাই💙
জমিনে না হয় অপরিচিত ই থাকলাম…

Exit mobile version