রিজিকের ভাবনা – পর্ব ০১

আমার সাথে সচরাচর মসজিদের ইমাম, মোয়াজ্জেম এগুলোর সাথে ভালো একটা সম্পর্ক থাকে। দ্বীনে আসার পর থেকেই বন্ধু মহলে এদের সংখ্যাটাই বৃদ্ধি হয়েছে। বয়স বেদে সম্পর্ক গুলো হতো না। যেকোনো বয়সের সাথে আমার ভালোই জমতো। জোয়ান থেকে শুরু করে বৃদ্ধা, Doesn’t matter ।
এমনি তাদের মধ্যে একজন তোফাজ্জল ভাই। খুবই নম্র ভদ্র। মুগ্ধকর চাল চলন তার। যেকোনো ব্যাক্তির পছন্দ হওয়ার মতোই তার স্বভাব। বয়স আনুমানিক পয়তাল্লিশ প্লাস হবে, তবে তেমন একটা বুঝা যায় না।

আমি সময় পাইলে তার সাথে আলাপ করতে চলে যায়। কারণ তার সাথে কথা বললে ইমান আমল দুটোই বৃদ্ধি পায়। কোন সমস্যায় পড়লে সমাধানের জন্যও চলে যায় ওনার কাছে। অবশ্যই কখনো নিরাশ হতে হয়নি। এজন্য তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলছেন ইমানদারদের সোহবতে থাকতে।
[সুরা তওবাহ : ১১৯]

বেশ কদিন ধরে রিজিক নিয়ে খুব টেনশন কাজ করছিল। আল্লাহর উপর সবকিছু ভরসা দেওয়ার হাজারো চেষ্টার পরে-ও পরিপূর্ণ স্বস্থি পাচ্ছি না। এই টেনশনের কারণ ছিল এতদিন বাসায় আংশিক পরিমাণে খবর দেওয়া লাগতো, যা আমার জন্য অবশ্যই কষ্টের ছিল না, কিন্তু হঠাৎ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে অর্ধেক খরচ বহন করা লাগবে। আমরা শহরে যৌথ থাকি, মাস শেষে মোটামুটি বড় স্বরে একটা বিশাল খরচ হয়ে থাকে। যা অবশ্যই বিশাল খরচ। ভাবতে লাগলাম কি করা যায়?

এমন হতাশার সময় মোয়াজ্জেম ভাইয়ের কথা মনে পড়লো, ভাবতে লাগলাম ওনার কাছে গেলে হয়তো এর একটা সমাধান হবে। কিন্তু এখানে তো আমার ইনকাম নিয়ে সমস্যা, এটার কি সমাধান হতে পারে! আবার ভাবলাম তার কাছ থেকে তো কখনো নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়নি। অন্তত একটু সাময়িক প্রশান্তি হলেও পাবো।
উনার মসজিদে গিয়ে সালাত আদায় করলাম। কিন্তু উনি নাই, মোয়াজ্জেম সাহেব নামাজ পড়ালেন। এতে মনটা আরও বেশি খারাপ হয়ে যায়। নামাজ শেষে বাহির না হয়ে বসে রইলাম। কারণ মসজিদে যতক্ষণ থাকি, ততক্ষণ একটা প্রশান্তি কাজ করে। ভাবলাম অন্তত এটার স্বাদ হলেও নিই।

এভাবে অনেকক্ষণ ধরে বসে ছিলাম। হঠাৎ পেছন থেকে কাঁদে হাত দিয়ে সালাম জানালেন তোফাজ্জল ভাই। আমি তো সানন্দে বলে ফেলি আল্লাহ সাময়িক সময়ের জন্য প্রশান্তি দিয়ে দিল আমায় আপনার আগমনে।
-ভাই কি হয়েছে আপনার? পেছনে অনেক্ক্ষণ ধরে খেয়াল করলাম আপনাকে কোন বিষয়ে চিন্তিত মনে হচ্ছে? আমি কি শুনতে পারি!
ভাই আপনার সাথে শেয়ার করার জন্যই তো এখানে আমার আসা। আমি সবকিছু উনাকে খোলে বলি। তবে যেটা সত্য কথা আমি তার কাছ থেকে তেমন সন্তুষ্ট জনক সমাধান আসা করি নাই। ভাবলাম সে হয়তো এ বিষয়ে কিছু কোরআনের আয়াত ও হাদিস শোনাবে। যা আমি আগে থেকে জানতাম। তবে দেখি ভাই কি বলে।

আসলে ভাই এটা শুধু আপনার সমস্যা না, পুরো পৃথিবীর মানুষ এই একটা বিষয়ে ভোগেন সচরাচর। পরিবারের খরচ কিভাবে বহন করবো? কি হবে আমার ভবিষ্যৎ? প্রযুক্তি মানুষকে এমন ভাবে ঘিরে ধরেছে কোন ভাবে এর বাইরে চিন্তা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তবে একটা বিষয় নিয়ে আমার খুব অবাক লাগছে যে এই একই বিষয়ে আপনিও চিন্তিত। এটা আমার মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তার কারণ আপনার ইনকাম নিয়ে আমার কিছুটা হলেও ধারণা আছে। আপনি করেন ব্যবসা, যেখানে আল্লাহ চাইলে অনেক বরকত দিতে পারেন। এমনকি বরকত দেওয়ার সুযোগও রয়েছে। কারণ রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও ব্যবসা করেছেন।
আচ্ছা আপনি কি কখনো আমাকে নিয়ে চিন্তা করেছেন?

আপনি তো ভালো করেই জানেন আমার বেতন মাত্র নয় হাজার। কিছু টিয়োশন করায়। সব মিলে চৌদ্দ পনের হাজার পাই মাস শেষে। এই বেতন তো আপনার ইনকামের তুলনায় পিঁপড়ার মতো। আবার আসা যাক খরচের দিকে। আপনি তো জানেন আমার সাতজন ছেলে মেয়ে, এখনো আমার মাও বেঁচে আছেন। আমার সাতজন ছেলে মেয়ে সবাই পড়াশোনাও করে। কোথায় কোথায় পড়ে সেটাও আপনি জানেন।

আমার এতবড় সংসার কিভাবে চলছে আপনি কি ভেবে দেখেছেন? ।
এটা শোনার পর আমি সত্যি হা করে তাকিয়ে রইলাম। আমি তো আমার কথা ভুলেও গেছি যে আমি টেনশনে ছিলাম। আমি এখন উল্টো তোফাজ্জল ভাইকে নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলাম। আসলে সে কিভাবে চালায় সংসার! আমি এখনো বিয়েও করিনি, এত চিন্তা আমায় গ্রাস করে। তার কাধে বড় বুঝা, তবুও তো তাকে কখনো নিরাশার ছাপ চেহারায় দেখিনি।

এবার নিজেকে নিয়ে একটু ভাবনায় গেলাম। কেন আমি হতাশ হচ্ছি? কি নাই আমার? তোফাজ্জল ভাইয়ের চেয়ে অনেক বেশি ইনকাম আমার তবুও কেন আমি চিন্তিত?

যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলছেন, “আর যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরী করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেনই। নিশ্চয় আল্লাহ প্রত্যেক জিনিসের জন্য একটি সময়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন।”
[সূরা আত-তালাক, আয়াত : ২-৩]

আর আমার এত বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকা সত্বেও আমি চিন্তিত। হায় আফসোস।

লিখেছেন

হে আল্লাহ সেই সম্মানোত্তরে অন্তর্ভুক্ত করে দাও যে সম্মান তুমি দিয়েছ তোমার প্রিয় মুমিনদের

Exit mobile version