প্রশ্ন: একটি মাছ, যাকে বাংলাদেশে ইলিশ বলে। যখন এই মাছটির ডিম দেওয়া ও শারীরিক গঠন বৃদ্ধির সময় হয়। তখন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে রাষ্ট্রীয় ভাবে এই মাছটি বিশেষ দিনে শিকার করতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম দ্বারা জানা গেছে যে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে মাছের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি ও শারীরিক গঠনের প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
কিন্তু কিছু মানুষ তখনও উক্ত আইন লঙ্ঘন করে মাছ শিকার করে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী তাদেরকে গ্রেফতার করে তাদের থেকে মাছ ছিনিয়ে নেয়। অতঃপর এয়াতীম খানা বা বিভিন্ন মাদরাসায় দিয়ে দেয়।
এখন এই বিষয়ে আমার কিছু হুকুম জানার আছে:
- নিষিদ্ধ সময়ে কেউ মাছ শিকার করলে সে উক্ত মাছের মালিক হবে কি-না?
- শরঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এই মাছ ক্রয় করা বৈধ কি-না?
- রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের জন্য এই মাছ নেওয়া বৈধ হবে কি-না?
- মাদ্রাসার ছাত্রদের জন্য এই মাছ খাওয়া বৈধ হবে কি-না?
- গরীব বা সম্পদশালী হওয়ার কারণে কি হুকুমের মধ্যে কোন তারতম্য হবে?
- উস্তাদদেরকে এই মাছ খাওয়ানো বা খাওয়া বৈধ হবে কি-না?
উত্তর:
লক্ষণীয় বিষয়, যখন রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের কল্যাণের ইচ্ছায় কোন বৈধ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা বা বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয় তখন সাধারণ মানুষের জন্য রাষ্ট্রীয় বিধান সংরক্ষণ করার লক্ষ্যে উক্ত বিষয় থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
কারণ যে কোন রাষ্ট্রের অধিবাসী সে দেশের প্রচলিত আইন মানার নিরব অঙ্গীকার করে থাকে।
আর বৈধ বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ার পর উহা পূর্ণ করা দেশের সকল নাগরিকের ঈমানি দায়িত্ব। এধরণের বৈধ বিষয় সম্পৃক্ত বিধান লঙ্ঘন রাষ্ট্রের সাথে কৃত অঙ্গীকার লঙ্ঘনের শামিল। এবং যে কোন বৈধ অঙ্গীকার লঙ্ঘন করতে শরীয়ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
তাছাড়া আইন লঙ্ঘনে সম্পদ নষ্ট ও ইজ্জত খর্ব হওয়ার আশংকা রয়েছে। এবং গ্রেফতার হলে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি শাস্তি ভোগেরও আশংকা রয়েছে। আর নিজে নিজেকে লাঞ্ছনার স্থান হতে রক্ষা করা শরঈ দৃষ্টিকোণে একটি জরুরি বিষয়।
উল্লেখিত ভুমিকার পর কাংখিত প্রশ্ন গুলোর উত্তর ধারাবাহিক ভাবে নিম্নে প্রদত্ত হলো:
১. সমুদ্রে বিদ্যমান মাছ মূলত বৈধ (মুবাহ)।
একারণে রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ থাকা সত্বেও জেলে তার শিকারকৃত মাছের মালিক হবে। তথাপি যেহেতু আইনত ব্যাপক কল্যানার্থে রাষ্ট্রীয়ভাবে উক্ত দিন গুলোতে মৎস্য শিকার নিষিদ্ধ। তাই উক্ত মাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
২. জেলে থেকে উক্ত মাছ ক্রয় বৈধ।
৩. ৪.৫.৬. উল্লিখিত দিন গুলোতে মৎস্য শিকার যদিও নিষিদ্ধ। তথাপি আইন লঙ্ঘনের কারণে রাষ্ট্রের জন্য, উক্ত মাছ জেলে থেকে নিজেদের তহবিলে নেওয়া জায়েয নয়। কেননা রাষ্ট্রের জন্য আইন লঙ্ঘনের কারণে শাস্তি দেওয়া যদিও বৈধ আছে। কিন্তু অর্থনৈতিক দন্ড বৈধ নয়।
একারণে মাদরাসা পরিচালকদের জন্যে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা এজাতীয় মৎস্য নেওয়া জায়েয নয়।
এবং রাষ্ট্র থেকে পাওয়া এমন মাছ ছাত্র-উস্তাদ কারো জন্যই ব্যবহার জায়েয নয়।
সূত্র: দারুল ইফতা, আল্লামা ইউসুফ বানূরী টাউন, পাকিস্তান।
ফতোয়া নং: 144207200311
[অনুবাদক: মুফতি নাঈম হাসান ]