রমজানের প্রস্তুতি – আবুল কালাম আজাদ বাশার

এই রামজানও কারো শেষ রমজান হতে পারে, এটা একবারে স্বাভাবিক বিষয়। গত রমজানে জীবিত ছিলেন এই রমজানে আজকে নেই, এমন লোকের সংখ্যা কম নয় হাজার হাজার। আবার এর পরের রমজান আসবে এর মাঝখানে চলে যাবে কত হাজার আল্লাহ্‌ ভাল জানেন। বিশেষ করে করোনার বিপর্যস্ত কারণে গত রমজান থেকে এ রমজানে মাঝখানে অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় মৃত্যুবরণকারী মানুষের সংখ্যা বেশি ছিল। করোনার বিপর্যস্ত তা আবার ঊর্ধ্বগামী আল্লাহ তাআলা ভালো জানেন এটাকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

আমার সামান্য অনুভূতিতে আমার কাছে মনে হচ্ছে আল্লাহ হেফাজত না করলে একটু জটিল হয়ে যেতে পারে। আমরা জানিনা আগামী রমজান পরবর্তী রমজান আমরা পাব কিনা!!!
এজন্য এই রমজানটা আমরা যারা পেয়ে যাব।

আমরা তার ফজিলত এর সামান্য থেকে বঞ্চিত হতে চাই না। এজন্য আগে থেকে প্রস্তুতি নেয়ার দরকার আছে কি?
রোজার প্রস্তুতি সবাই কিন্তু নিচ্ছে, সবাই নিচ্ছে। তবে প্রস্তুতির ধরন কি হওয়া উচিত?
এ বিষয়ে আমরা কথা বলবো।

কারন অনেকে বলে হ্যাঁ হুজুর ইতিমধ্যে মোটামুটি ছোলা বুট কিনে ফেলছি খেজুর ও কিনছি রোজার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু করে ফেলেছি। আবার যারা ব্যবসায়ী তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে মাল সামগ্রি জমায়ে রেখেছি স্টকে রেখেছি।

এ রমজান কিভাবে দাম বাড়ানো যায় এরকম পরিকল্পনা নিয়েছে কোন অসুবিধা নাই। রোজার প্লেন প্রস্তুতি চলছে।
যারা ঈদের সিনেমা মুক্তি দিবে তারা ইতিমধ্যে শুরু করে ফেলেছে। ঈদের সিনেমা তো আর এক মাসে বানানো যাবেনা। ওরা প্রস্তুতি আরো আগে থেকে শুরু করে ফেলেছে, রোজার প্রস্তুতি নিয়েছে। ঈদের নাটক যারা মুক্তি দিবে তারাও প্রিপারেশন মোটামুটি নিয়ে রেডি হয়ে গেছে।
প্রস্তুতি সবাই নিচ্ছে কিন্তু কেমন প্রস্তুতি হওয়া দরকার?

আমরা শরিয়ার আলোকে সেটা আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

আসলে যে জিনিস যেটা বড় হয় প্রিপারেশন নেয়া লাগে সেটা বেশি সময় ধরে, অতি সতর্কতার সাথে এটাই তো স্বাভাবিক নিয়ম। রমজান মাসের মতো শ্রেষ্ঠতম মাস নাই এ নিয়ে আমাদের কারও কোন সন্দেহ আছে কি?
নাই।
কারো সন্দেহ নাই। এটা সবচেয়ে সেরা মাস। এই মাসের মতো রহমত অন্য মাসে নাযিল হয় না। এই মাসের মতো ক্ষমা অন্য মাসে আল্লাহ করেন না। ক্ষমা পাওয়ার কিছু দিন আছে।

যেমন আরাফার দিন সবচেয়ে বেশি ক্ষমা হয়। কিন্তু জিলহজ মাসে সবচেয়ে বেশি ক্ষমা হয়, এমন নাই। ক্ষমার মাসের মাঝে প্রতিদিন ক্ষমা করে, একদিন না প্রতিদিন। রমজান মাস ঠিক কিনা?

সবচেয়ে ক্ষমা পাওয়ার মাস রমজান।

আমার বন্ধু, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস রমজান। আমরাতো একটি দুর্বল হাদিস শুনেছি রমজানের শেষ দশক হলো নাজাত এর দশক হাদীসটি দুর্বল আসলে নাজাত শুধু শেষ দশকে নয়। সহি হাদিস হলো আল্লাহ রমজানের প্রতি রাতে জাহান্নাম থেকে মানুষকে নাজাত দেন প্রতি রাতে রমজানের মত নাজাত কোন মাসে হয় না। এরপরে আমলের যে সওয়াব বেড়ে যায় রমজানের মত কোন মাসে কি বারে?
না।

অগণিত অসংখ্য, একটা নফল ফরজ হয়ে যায়। একটা ফরজ কমপক্ষে সত্তুরটা ফরজ হয়ে যায়। সুবহানাল্লাহ।
নরমালি ১ থেকে ১০হয়।
রমজানে ১ থেকে ৭০, একলাফে ৭ গুণ বেড়ে যায়। এই মাস এত সেরা মাস, তাহলে এর বরকত, এর রহমত, এর মাগফেরাত, এর নাজাত, এর ফজিলত যা আছে আমরা যেন সবকিছু পাই প্রস্তুতিটাও সে রকম হওয়া দরকার আছে কিনা?
আছে।
না হয়তো আপনি ঠকে যাবেন দুর্বল পরিকল্পনা উত্তম ফলাফল দেয় না। well planning is the halfway to success। আপনি প্ল্যান যদি ভালো করেন, কাজ শুরু করার আগে।

উত্তম পরিকল্পনা কাজে অর্ধেক সফলতা। এ জন্য যারা দশতলা বিশ তলা বিল্ডিং এর প্ল্যান করতে যান। তাঁরা কিন্তু তিন মাসে চার মাসে অনুমোদন পান না। খুব তাড়াতাড়ি করে দেয় না অফিসাররা, এটা নিয়ে অনেক ভাবে।

১৫ তলা বিল্ডিং এর অনুমোদন, না না। অনেক ভাব, এটা অনেক হাতে যাবে, অনেকে দেখবে। কারণ, এটা যদি ধ্বংস হয় ক্ষতি হবে বেশি। যে পরিমাণ লোকজন থাকে ১৫ তলায় লোকজন বেশি থাকবে, পাঁচতলা হলে আরো কম থাকবে, দোতালায় হলে আরো কম থাকবে। আপনি দোতলা, তিনতলা, একতলা বিল্ডিং বানান। কোন প্ল্যান লাগবে না। রাজমিস্ত্রি আপনার বিল্ডিং করে দিতে পারবে। যদি ধ্বংস হয় তবে তার ক্ষতিও কম। কিন্তু বিল্ডিং বড়, পরিকল্পনা ও বড়। কারণ ক্ষতি হবে বেশি, টাকা বেশি লাগবে, সব মিলিয়ে well plan খুব বেশি জরুরি। তো আমরা যেহেতু একমত রমজানের মত মাস হয় না, সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ সুবহানাল্লাহ।

আল্লাহ তা’আলা আমাদের জন্য দিয়েছেন এটা আল্লাহর অনেক বড় করুণা এর ফজিলত তাৎপর্য নিয়ে আমরা পরে কথা বলব সময় আমাদের হাতে আছে। আগামী জুমায় হবে রমজানের পরিকল্পনা, পরের জুমা থেকে রমজান কেন্দ্রিক আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। তো আজকে বলবো রমজানের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ। আমাদের প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হবে রমজান মাস আসছে মানুষকে মুত্তাকী বানাতে একটাই মাত্র লক্ষ। মুত্তাকী হয় আর তাকওয়া থাকে অন্তরে। এখন অন্তরে যে তাকওয়া ঢুকবে, ঢুকার জায়গা আছে নি?
নাকি আমরা ময়লা দিয়ে ভর্তি করে রাখছি?
যদি ময়লা ভর্তি অন্তর হয়, তাকওয়ার জন্য জায়গা করার দরকার আছে কিনা?
ওই ময়লা খালি করতে হবে সোজা কথা।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন মুমিন ব্যক্তি যখন গুনা করে সাথে সাথে তার অন্তর একটা কালো দাগ পড়ে যায় ।
দুইটা গুনাহ করেছেন দুইটা কালো দাগ পড়েছে, একশটা গুনাহ করেছেন একশোটা কালো দাগ পড়েছে অন্তরে, হাজার গুনাহ করেছেন হাজার টা কালো দাগ পড়েছে অন্তরে, এরকম যদি এত গুনা দিয়ে অন্তর কালো করে রাখেন, ভর্তি করে রাখেন তাহলে তাকওয়া ঢুকবে কোথায়?

ঢোকার জায়গাতো নাই। তাই তাকওয়া কে জায়গা দেয়ার জন্য যখন মানুষ গুনাহ করে ইস্তেগফার করে তওবা করে তখন অন্তরটা পরিষ্কার হয়ে যায়। গুনাহ করেছেন কালো দাগ পড়ে গেছে, এখন এই কালো দাগ সরাতে হবে।

কালো চশমা চোখে দিয়ে আপনি দুনিয়া কে সাদা দেখবেন এটা তো হয়না। লাল চশমা চোখে দিলে দুনিয়া লাল হয়ে যায়। কালো চশমা চোখে দিলে দুনিয়া কালো কালো লাগে। তো আপনি যদি দুনিয়াকে অরিজিনাল নিজস্ব আকৃতিতে দেখতে চান, তাহলে চশমাটা খোলা দরকার আছে নাকি নাই?
আছে।

না হয়তো আপনি আসল প্রকৃতি বা আকৃতি দেখবেন না। এখন আমাদের কলবে কম বেশি গুনাহ হয়ে গিয়েছে গত ১১ টি মাস, আমরা অনেক গুনাহ করেছি। কেউ কেউ তো গুনাহ করতে করতে গুনাহকে আর গুনাহ মনে হয় না। গুনাহ তার স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে এমন লোকের সংখ্যাও কি কম?
অনেক আছে।

আমার বন্ধু, অন্তরে তাকওয়া থাকবে এজন্য আপনি অন্তরকে পরিষ্কার করবেন তাওবার মাধ্যমে ইস্তেগফার এর মাধ্যমে কিভাবে করবেন তওবা কাকে বলে তাওবার ফজিলত কি এসব বিষয় নিয়ে আজকে কথা হবে ইনশাআল্লাহ।

আমরা জানি দুধ হল পৃথিবীতে সবচেয়ে দামি খাবারের নাম। এর চেয়ে দামি খাবার পৃথিবীতে আর নাই, এই দামী খাবার দুধ রাখার জন্য যে পাত্র আমরা নেই দুধ রাখার আগে প্রত্যেকটা মানুষ তাকায় দেখে পাত্র পরিষ্কার আছে কিনা। কারণ নোংরা পাত্রে দুধ রাখলেও দুধ খেলেও উপকার হবে না, আমরা সবাই জানি। দুধ টা ক্ষতি হতে পারে, দুধ টা পড়ার সাথে সাথে ময়লা দুধটা শেষ করে দিবে।

Exit mobile version