যে ঘটনা সালাত পড়তে উদ্বুদ্ধ করে

নিজের চোখে দেখা ঘটনা। আমি একটুও আগ বাড়িয়ে বলছি না। হুবহু ঘটনাটি আপনাদের শুনাচ্ছি।
একজন যুবক। বয়স আঠারো বছর। হঠাৎ একটা কল আসলো। তখন ঠিক দুপুরবেলা। একজন বললো, “শাইখ মুহাম্মাদ”! আপনি কি এখন একটু আসতে পারবেন?
আমি বললাম,কেন?
একটা বিভৎস দূর্ঘটনা হয়েছে।

সেখানে তারা ছিলো তিনজন এবং চতুর্থ জন্য অপেক্ষা করছিলো লাশের গোসল দেবার জন্য। আমি প্রশ্ন করলাম, অন্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না?তারা বলল, ” শাইখ, আপনি আসুন এবং দেখে যান।”

আমি রবের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করলাম এবং রওনা দিলাম। গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “মাইয়্যেত ( ডেড বডি) কোথায়?
” তারা বলল, এইতো। আমি তাকিয়ে দেখলাম। পাশে আরও একজন যুবক ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, কে তুমি?
আমি তার কাজিন। আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, “তার পরিবারের লোকজন কোথায়?

আমি লাশের দিকে এগিয়ে গিয়ে যুবকটির দিকে তাকালাম। অল্প বয়স। বেশ লম্বাচওড়া, হৃষ্টপুষ্ট, তামাটে গায়ের রঙ। কিন্তু তার মৃত্যুটা বড় অদ্ভুত ছিলো। আমি আবারও তার দিকে তাকালাম। তারপর ভাইদের বললাম, “আর কে গোসলে সাহায্য করবে?”
রবের সাহায্য চাইলাম। আমরা তাকে গোসল দেয়া শুরু করলাম।

ইয়া রব! ইয়া রব!
আমরা খুব ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। দ্বীনদার লোকদের গোসল কখনো এমন অনুভূতি হয় না। আর গুনাহগাররা তো পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার ক্ষেত্রেও উদাসীন। আমরা হঠাৎ অদ্ভুদ এক দৃশ্য দেখলাম। তার গায়ের রঙ ধীরে ধীরে কালো আকার ধারণ করছে। আমি বললাম, ভাইয়েরা! তাড়াতাড়ি গোসল শেষ করুন।
দ্রুত! তারপর আমরা তাকে ধরলাম এবং কাফনের উপর রাখলাম।

আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই! আল্লাহর কসম! যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই!
যেইমাত্র তাকে কাফনের উপর রাখলাম, ভীষণ দুর্গন্ধ ছড়ানো শুরু করল। কোথা থেকে এত দুর্গন্ধ আসছিলো আমরা ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। ঘামের গন্ধ কখনো এমন হয় না।

রবের কসম! আমরা এমন দুর্গন্ধ কখনো পাইনি। আমরা দৌড়ে গোসলখানা থেকে বের হয়ে গেলাম। কপাট খুলে বাইরে চলে আসলাম। দুর্গন্ধ যুবকটির লাশ থেকেই আসছিল। তার কাজিনকে জিজ্ঞেস করলাম,
” রবকে ভয় করুন! উনি কি সালাত আদায় করতেন?
সে আমার দিকে তাকালো। বলল, সে ইবাদাত করত। “সে কি সত্যিই সালাত আদায় করত?”
সে বলল, জ্বি!

আমরা ভিতরে প্রবেশ করতে পারছিলাম না! কি বিভৎস গন্ধ! একজন বয়স্ক লোক আমাদের বললেন, মুখ ঢেকে প্রবেশ করুন! মাস্ক পরে নিন। একজন ভাই দৌড়ে গিয়ে মাস্ক নিয়ে এলেন। আমি নিজে দুটো জামা দিয়ে নাক ঢেকে তার উপরে মাস্ক লাগালাম। ঘরের জানালা খুললাম। ফ্যান ছেড়ে দিলাম। দ্রুত তার লাশকে কাফন দিলাম এবং বের হয়ে গেলাম।

তার কাজিনকে বললাম, তুমি বললে সে ইবাদাত করতো! নিজের চোখে আমরা এই খারাপ লক্ষণ দেখেছি! এই লোক কখনোই ইবাদাতগুজার হতে পারে না! এই বলে আমি চলে এলাম।

ঠিক দুই দিন পর! কাজিনটি সেখানে আমার খুঁজে আসলো। লোকজন তাকে আমার ঠিকানা বলে দিলো। সে এলো।
তার অনুশোচনার কথা আমাকে জানালো। আমি বললাম, “আমি জানতাম, তুমি মিথ্যা বলেছো সেদিন।” সে বললো, হায়! আমি যদি মিথ্যা কথা না বলতাম! হায়! আমি যদি মিথ্যা কথা না বলতাম!

ইয়া শাইখ! আপনি জানেন কিভাবে সে মৃত্যুবরণ করেছিলো?
সে ঠিক এভাবেই বলেছিলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে সে মৃত্যুবরণ করেছিলো?
কীভাবে?

সে বললো, আমি লাইফে তাকে কখনো সালাত আদায় করতে দেখিনি। মৃত্যুর আগে আগে সে সমকামে ( হোমোসেক্সুয়াল) লিপ্ত হয়েছিলো এবং তা থেকে সে পাক- পবিত্রও হয়নি। মৃত্যুর সময় তার হাতে সিগারেট ছিলো। গাড়িতে গান চলছিলো ইয়া শাইখ!

আপনারা শুনছেন?
আপনারা জানেন, কেন তার লাশ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল?
যেন তার রব আখেরাতের পূর্বে, এই দুনিয়াতেই তার আসল চেহারা তুলে ধরতে পারেন।

মূল – শাইখ মোহাম্মাদ শাহরানী

লিখেছেন

ইসলামীক লেখক ও গবেষক
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ।
“Alhamdulillah For Everything”

Exit mobile version