মা-বাবার সাথে কেমন আচরণ করতে হবে, এই নিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ একটি উপমা দেন। এই উপমা নিয়ে তাফসিরবিদগণ অনেক আলোচনা করেছেন। আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:
“তাদের (মা-বাবার) সামনে ভালোবাসার সাথে এবং নম্রভাবে মাথা নত করে দাও…।”
[সূরা ইসরা ১৭: ২৪]
এই আয়াতে এমন দুটো শব্দ আছে, যে শব্দ দুটো নিয়ে পৃথিবীর নানান প্রান্তের তাফসিরবিদ নানান ব্যাখ্যা করেন। শব্দ দুটো হলো- ‘যানাহ’ ও ‘যুল’। যানাহ শব্দের অর্থ ডানা, যুন শব্দের অর্থ বিনয়াবনত। ডানা আর বিনয়ের সাথে সম্পর্ক কী? এই নিয়ে তাফসিরবিদদের মধ্যে চারটি মত পাওয়া যায়।
আবু বকর আল-কাফফাল আশ-শাশী রাহিমাহুল্লাহ বলেন- যেভাবে মা পাখি তার ছানাদেরকে ডানায় আগলে, ডানা দিয়ে যেভাবে কাছে টেনে নেয়, সন্তানও তেমন তার মা-বাবাকে আগলে রাখবে।
তাঁর দ্বিতীয় মত হলো- যখন পাখি ডানা মেলে ওড়ে, তখন পাখির ডানা থাকে ছড়ানো। কিন্তু, যখন পাখি নিচে নামে, তখন তার ডানা গুঁটিয়ে নেয়। আমরা বাইরে অন্য কারো সাথে যেভাবেই কথা বলি না কেনো, যখনই আমরা মা-বাবার সাথে কথা বলবো, তখন পাখির অবতরণের মতো ডানা গুঁটিয়ে বিনয়ের সাথে কথা বলবো।
আল্লামা ইবনুল আসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন- যখন একটি পাখি ক্লান্ত থাকে, তখন তার ডানা মাটিতে বিছিয়ে দেয়। আমরা যখন আমাদের মা-বাবার সাথে কথা বলবো, আমাদেরকেও তেমন আত্ম-অহংকার, গর্ব, রাগ সবকিছু মাটিতে বিছিয়ে দিতে হবে। বিনয়াবনত হয়ে আমরা তাদের সাথে কথা বলবো।
শিহাব উদ্দিন আল-খাফাজী রাহিমাহুল্লাহ বলেন- একটি পাখি যেমন আক্রমণের ভয়ে ভীত হয়ে মাটিতে ডানা মেলে থাকে, মা-বাবার সামনে কথা বলার সময়ও আমাদেরকে এভাবে থাকতে হবে।
কুরআনের উপমা আর সেই উপমা বুঝতে গিয়ে তাফসিরবিদদের উদাহরণের কথা চিন্তা করুন। এখন চিন্তা করুন আমাদের সমাজে মা-বাবার সাথে কেমন আচরণ করা হয়। চিন্তা করুন, আপনি কিভাবে তাদের সাথে কথা বলেন।
মা-বাবারা অভিযোগ করেন, তাদের সন্তান তাদের সাথে চেঁচামেচি করেন, তাদেরকে গালাগালি করেন, খাবার দিতে দেরি হলে রাগ দেখান, মনমতো কেনাকাটা না করে দিলে মা-বাবাকে কষ্ট দেন। অথচ কুরআন আমাদেরকে কী বলে? মা-বাবার সাথে কথা বলতে হবে নম্রভাবে, পাখি যেমন ইমার্জেন্সি মাটিতে অবতরণ করতে ডানা গুঁটিয়ে নেয়, তেমন।
এই আয়াতের ওপর ভিত্তি করে আলেমগণ আরেকটি বিষয়ে আলোচনা করেছেন- সন্তান কি তার মা-বাবাকে উপদেশ দিতে পারে? সন্তানকে এতোটা নম্র হয়ে মা-বাবার সাথে কথা বলতে বলা হয়েছে, সে কিভাবে পারে তার মা-বাবাকে উপদেশ দিতে? সাধারণত যিনি উপদেশ দেন, তিনি উচ্চাসন থেকে কথা বলেন। যারা উপদেশ শুনে, তারা থাকে নিম্নাসনে। মা-বাবা আর সন্তানের সম্পর্ক তো Hierarchy সম্পর্ক। মা-বাবা উচ্চাসনে, সন্তান নিম্নাসনে। সেখানে কিভাবে মা-বাবাকে সন্তান উপদেশ দিতে পারে?
এই বিষয়ে আলেমগণের নানান মত আছে।
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন:
“তোমার বাবা আর দশজন মানুষের মতো না।”
অর্থাৎ, তুমি তোমার বাবাকে উপদেশ দিতে পারবে না। অন্য সবাইকে উপদেশ দাও ভালো কথা, কিন্তু নিজের বাবাকে না।
ইমাম গাজালী রাহিমাহুল্লাহও প্রায় একই কথা বলেন। তিনি বলেন:
“উপদেশকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যারমধ্যে মাত্র দুই ভাগ উপদেশ মা-বাবাকে দেয়া যায়। সেগুলো হলো-
তারা কোনো নাজায়েজ কাজ করলে, তাদেরকে উপদেশ দেয়া যায়
খুবই নম্রভাবে তাদেরকে কোনো উপদেশ দেয়া যায়।”
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বলেন, হ্যাঁ, মা-বাবাকে উপদেশ দেয়া যাব, তবে সেটাও করতে হবে নম্রভাবে, বিনয়াবনত হয়ে।
আর আমরা কী করি? আমরা কোথাও বের হতে গেলে মা-বাবা দেরি করে ফেললে তাদেরকে তাড়া দিই, কথা শুনাই, কোনো কাজ তারা না করলে উচ্চস্বরে জিজ্ঞেস করি- ‘কেনোওওও?’
ইসলামের ইতিহাস দেখলে দেখতে পাই, কুরআনের নির্দেশমতো মা-বাবার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হবে সেটা শুধু পুস্তকেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আমাদের পূর্ববর্তীগণ সেই আমল করে গিয়েছেন।
হাসান ইবনে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু কখনো মায়ের সাথে খেতে বসতেন না! মায়ের এতো আদরের ছেলে হওয়া সত্ত্বেও তিনি কেনো মায়ের সাথে খেতে বসতেন না? আমাদের মনে যেমন প্রশ্নটি জাগলো, তাঁর সমসাময়িক কয়েকজনের মনেও প্রশ্নটি জাগে।
জবাবে তিনি বলেন:
“ধরুন আমি মায়ের সাথে খেতে বসলাম। মা এমন এক খাবারের দিকে তাকাচ্ছিলেন খাবেন বলে, কিন্তু আমি মায়ের তাকানো দেখতে পেলাম না। আমি কী করলাম? ঐ খাবারটাই খেয়ে ফেললাম। ফলে কী হলো? আমি মায়ের অবাধ্য হয়ে গেলাম!”
[আল-বিররুল ওয়ালিদাইন, ইবনুল জাওযী, ৫৬]
আব্দুল্লাহ ইবনে আউন রাহিমাহুল্লাহর মা একবার তাঁকে দূর থেকে ডাক দিলেন। তিনি শব্দ করে জবাব দিলেন- “জ্বি…মা।” একটু পর তাঁর মনে হলো, তিনি মায়ের সাথে জোরগলায় কথা বলেছেন। মায়ের সাথে এভাবে ‘জোরগলায়’ জবাব দেয়ায় তাঁর মনে হলো তিনি পাপ করেছেন। এই পাপের কাফফারা কিভাবে দিবেন?
তিনি তাঁর দুজন দাস মুক্ত করে দিলেন।
মানুষ দাস মুক্ত করে কখন?
যখন মানুষ সিরিয়াস কোনো অপরাধ করে, ভয়ঙ্কর কোনো গুনাহের কাজ করে।
যেমন: কাউকে হত্যা করা, রোজা থাকাবস্থায় সহবাস বা কিছু খেয়ে ফেলা ইত্যাদি। এমন কাজের কাফফারা হিশেবে মানুষ দাস মুক্ত করে। অথচ আব্দুল্লাহ ইবনে আউন মায়ের সাথে প্রয়োজনে একটু জোরে কথা বলায় সেটার কাফফারা আদায় করেন! তারা মায়ের ব্যাপারে এতোটা সতর্ক থাকতেন।
আয়িশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাহর মধ্যে দুজন ছিলেন তাঁদের মায়ের সাথে শ্রেষ্ঠ (আচরণকারী)।”
তারা কারা?
উসমান ইবনে আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু ও হারিসা ইবনে নোমান রাদিয়াল্লাহু আনহু তারা কী করতেন?
উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
“ইসলাম গ্রহণ করার পর থেকে আমি আমার মায়ের দিকে চোখ তুলে তাকাইনি।”
হারিসা রাদিয়াল্লাহু আনহু মায়ের চুল আঁচড়ে দিতেন, মাকে মুখে তুলে খাওয়াতেন। তাঁর মা কোনো কিছু করতে বললে বিনা প্রশ্নে সেটা করতেন। পরবর্তীতে মানুষজন তাঁকে জিজ্ঞেস করে, “আপনি মাকে প্রশ্ন করেন না কেনো?”
তিনি বলেন:
“মাকে প্রশ্ন করলে তিনি যদি কিছু মনে করেন!”
[আল-বিররুল ওয়ালিদাইন, ইবনুল জাওযী, ৫৫]
ইমাম আবু হানিফা রাহিমাহুল্লাহর মা ছিলেন খুবই ধার্মিক। সুরালো ওয়াজিদের তিনি পছন্দ করতেন। কুফার সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়াজি ছিলেন আমরূদ বিন জারকা। আবু হানিফার মা ছিলেন তাঁর ভক্ত। কোনো ফতোয়া জানার থাকলে তিনি আমরূদের কাছে লোক পাঠিয়ে জেনে নিতেন।
একবার ইমাম আবু হানিফার মায়ের একটা ফতোয়া জানার প্রয়োজন হলো। তাঁর কাপড়ে রক্ত লেগে গেলো। এই কাপড় পরে কি তিনি মসজিদে যাবেন?
আবু হানিফা ফতোয়া দিলেন। কিন্তু, আবু হানিফার ফতোয়া মায়ের পছন্দ হলো না। মা বললেন, “আমাকে আমরূদের কাছে নিয়ে যাও। আমি তাঁর কাছ থেকেই ফতোয়া জেনে আসবো।”
মাকে খচ্চরের পিঠে বসিয়ে ইমাম আবু হানিফা লাগাম টেনে চললেন আমরূদের বাড়ির দিকে। মজার ব্যাপার হলো, আমরূদ ছিলো আবু হানিফার ছাত্র! আমরূদ নিজেই এই ফতোয়া জানতেন না। আবু হানিফা তাঁকে ফতোয়া বলে দেন, আমরূদ সেই ফতোয়া আবু হানিফার মাকে বললে তিনি এবার সন্তুষ্ট হলেন।
মায়ের মনে আমরূদের প্রতি যে ভক্তি ছিলো, ইমাম আবু হানিফা সেটা ভাঙ্গেন নি। নিজের শান শওকতও বলে বেড়াননি, “আপনি যার কাছে ফতোয়া জানতে গেলেন, সেই লোকটি আমার ছাত্র”।
[আল-খায়রাত আল-হিসান, ইবনে হাজার আল-হায়তামী, পৃষ্ঠা ১৯৫-১৯৬]
আমরা মনে করি মা-বাবাকে তো আমরা কটু কথা বলি না, তাদেরকে আঘাত করি না; আমরা মনে হয় পার পেয়ে গেলাম। ইমাম মুনায়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন:
“মা-বাবার অবাধ্য হওয়া কথার মাধ্যমে হতে পারে, কাজের মাধ্যমে হতে পারে, এমনকি তাদের প্রতি বাঁকা দৃষ্টিতে তাকানোর মাধ্যমেও হতে পারে।”
মা-বাবা আপনাকে কিছু বললেন, আপনি তাদের কথার জবাব দিলেন না, রাগে ফুসফুস করলেন, এমনভাবে তাকালেন, মনে হবে তাদেরকে খেয়ে ফেলবেন; এই তাকানোটা পর্যন্ত তাদের প্রতি অবাধ্য হবার নিদর্শন!
আবু উমর রাহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞেস করা হলো, তাঁর ছেলে তাঁর সাথে কেমন আচরণ করে। তিনি জবাব দেন:
“রাতে আমি হাঁটলে আমার ছেলে আমার আগে আগে হাঁটে, যাতে কোনো কিছু আমাকে আক্রমণ করার আগে তাকে আক্রমণ করে। আর দিনে সে আমার প্রতি বিনয়াবনত হয়ে আমার পিছু পিছু হাঁটে। আমি কোনো বাসার নিচতলায় থাকলে আমার ছেলে আমার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সে বাসার উপর তলায় যায় না। কারণ, উপর তলায় গেলে আমি থাকবো তার পায়ের নিচে!”
মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিখ্যাত তাবেয়ী। তাঁর ভাইয়ের নাম উমর ইবনে মুনকাদির রাহিমাহুল্লাহ। একরাতে উমর ইবনে মুনকাদির সারা রাত নামাজ পড়ে কাটান আর মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির মায়ের সেবা করে কাটান। সেই রাতের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির বলেন:
“আমার ভাইয়ের ঐ রাতের নামাজের পরিবর্তে আমি কখনো আমার মায়ের সেবা করার আমল বিনিময় করবো না।”
অর্থাৎ, সারা রাত নামাজ করার চেয়ে মায়ের সেবা করার আমল তাঁর কাছে অধিক প্রিয়।
আপনার মা-বাবা আপনাকে কিছু করতে বললে বা কোনো কিছু করতে নিষেধ করলে চেষ্টা করুন তাদের কথা শুনার; যদিও আপনার মত ভিন্ন। তারা বলছেন একটি, আপনি আরেকটি কাজ ভালো মনে করছেন। সেক্ষেত্রে তাদের কথা শুনলে কল্যাণ হবে।
আব্দুল ওয়াহাব আল-ওয়াররাক রাহিমাহুল্লাহর এক ছেলে ছিলো, তাঁর নাম হাসান। হাসান ছিলেন ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসা করার জন্য সমরকন্দ যেতে চাইলেন। তাঁর বাবা তাঁকে বললেন, “শুনলাম, তুমি নাকি সমরকন্দ যেতে চাচ্ছো?” তখন সমরকন্দে রাজনৈতিক ঝামেলা চলছিলো। ছেলে হ্যাঁ বললে বাবা বললেন, “যদি শুনি তুমি সমরকন্দ গেছো, তাহলে তোমার সাথে আমি কথা বলা বন্ধ করে দেবো।”
হাসান ইবনে আব্দুল ওয়াহাব বাবার কথামতো আর সমরকন্দ গেলেন না। তিনি ভাবছিলেন তাঁর ব্যবসায় এবার লস হবে। কিন্তু দেখা গেলো ব্যবসায় লাভ পূর্বের তুলনায় এতো বেশি হলো যে, তিনি বিশ্বাসই করতে পারেননি।
মুহাম্মদ ইবনে বাশশার রাহিমাহুল্লাহ ছিলেন বিখ্যাত হাদীস বিশারদ। তাঁর ডাকনাম ছিলো ‘বুনদার’। বুনদার এমন ব্যক্তিকে বুঝায়, যার অনেক সম্পদ আছে। মুহাম্মদ ইবনে বাশশারকে বুনদার বলা হতো এই কারণে যে, বসরা শহরে তারচেয়ে বেশি কারো হাদীস মুখস্থ ছিলো না।
সেই সময়ে হাদীস মুখস্থ করার মাধ্যম ছিলো বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করা। অথচ মুহাম্মদ ইবনে বাশশারকে তাঁর মা শহরের বাইরে বেরুনোর অনুমতি দেননি। তারপরও কিভাবে তিনি এতো হাদীস মুখস্থ করলেন?
সেই গল্প তিনি নিজের ভাষায় বলেন:
“আমি হাদীস সংগ্রহের জন্য বাইরে যেতে চাইলাম, কিন্তু আমার মা আমাকে নিষেধ করলেন। আমি তাঁর কথা রাখলাম। এতেই আল্লাহ আমার জ্ঞানে বরকত দান করলেন।” [ইমাম আয-যাহাবী, সিয়ারু আ’লাম আন-নুবালা: ১২/১৪৫]
আপনার মা-বাবা আপনাকে কিছু বললে আপনার কষ্ট হলেও সেই কথা রাখার চেষ্টা করুন। মা-বাবার কথা শুনার মধ্যেই আপনার কল্যাণ রয়েছে; আপনি হয়তো বুঝতেই পারছেন না। একটি জরুরি মিটিংয়ে যাবার জন্য বের হলেন। হঠাৎ যদি আপনার মা বলেন, ‘আজকে না যাও’; আপনার মেনে নিতে কষ্ট হবে। কিন্তু, একবার মেনে দেখুন, হয়তোবা কিছুদিন পর মায়ের কথার গুরুত্ব বুঝতে পারবেন।
আপনি যদি কোনো গুনাহ করেন, সেই গুনাহ থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজুন মা-বাবার খেদমত করে। ইতোমধ্যে দুনিয়ার যতো বড়ো গুনাহর কাজই করে ফেলুন না কেনো, মা-বাবার খেদমতের মাধ্যমে সেই গুনাহ আল্লাহ চাইলে ক্ষমা করে দিতে পারেন।
একবার এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছি। এখন কি আমার তাওবা করার কোনো সুযোগ আছে?”
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার মা কি জীবিত আছেন?”
তিনি বললেন, “না।” অতঃপর তিনি বললেন, “তুমি তাহলে আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং যথাসাধ্য তাঁর নৈকট্যলাভে যত্নবান হও।”
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছাত্র আতা ইবনে আবি রাবাহ রাহিমাহুল্লাহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর শিক্ষকের প্রশ্ন শুনে তিনি অবাক হোন। লোকটি চলে যাবার পর তিনি জিজ্ঞেস করেন, “তার মা জীবিত আছে কিনা আপনি জানতে চাইলেন কেনো?”
তখন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,
“আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য মায়ের সাথে সদাচারের চেয়ে উত্তম কোনো কাজ আমার জানা নেই।”
[আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী: ৪]
সেই লোকটির মতো অনেকেরই হয়তো মা-বাবা বেঁচে নেই। তারপরও তাদের প্রতি আপনার দায়িত্ব আছে। আপনি আপনার মৃত মা-বাবারও ‘খেদমত’ করতে পারেন। কিভাবে?
এক সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বললেন, “আমার মায়ের আকস্মিক মৃত্যু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃত্যুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সদকা করে যেতেন। এখন আমি কি তাঁর পক্ষে সদকা করলে এর সওয়াব তিনি পাবেন?”
প্রশ্নের জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
“হ্যাঁ (পাবেন)।”
[সহীহ বুখারী: ১৩৮৮]
যাদের মা-বাবা ইন্তেকাল করেছেন, তারা চাইলে মা-বাবার পক্ষে সদকা করতে পারেন।
আরেকবার আরেক সাহাবী এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ! মা-বাবার মৃত্যুর পরও কি তাদের প্রতি হক্ব রয়েছে? থাকলে আমি তা কিভাবে পালন করবো?”
উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মা-বাবার মৃত্যুর পরও তাঁদের প্রতি ৪ টি হক্বের কথা বলেন। সেগুলো হলো:
- তাঁদের জন্য দু’আ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করা
- তাঁদের কৃত ওয়াদা পূরণ করা
- তাঁদের উভয়ের মাধ্যমে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তা রক্ষা করা
- তাঁদের বন্ধুদের সম্মান করা।
[সুনানে আবু দাউদ: ৫১৪২। ইবনুল আরাবী আল-মালিকী বলেন সনদটি ‘হাসান’, আরিদাত আল-আহওয়াধি ৪/৩০৭]
আপনার মা-বাবা হলেন পৃথিবীতে আপনার জান্নাত। আখিরাতের জান্নাত লাভ করতে হলে আগে পৃথিবীর জান্নাতের পরিচর্যা করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
“মায়ের খেদমত করো। কেননা, জান্নাত তাঁর পায়ের নিচে।”
[সুনানে আন-নাসাঈ: ৩১০৪]
“জান্নাতের সর্বোত্তম দরজা হচ্ছে বাবা। তুমি ইচ্ছে করলে এটা ভেঙ্গে ফেলতে পারো, ইচ্ছে করলে সেটার রক্ষণাবেক্ষণও করতে পারো।”
[জামে আত-তিরমিজি: ১৯০০]
উস্তাদ আলী হাম্মুদার লেকচার অবলম্বনে প্রকাশিতব্য ‘সফলতার সূত্র’ বই থেকে। প্রকাশনী পরে জানানো হবে, ইন শা আল্লাহ।