Q/AAbdullahil Hadi

মৃতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম একটি বিদআতি প্রথা

মৃতের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম বা শবিনা খতম (কুরআনখানি) একটি বিদআতি প্রথা। কুরআন খতম করার পর পরিবারের কোন মৃত ব্যক্তির নামে বখশিয়ে দেয়ার যে রীতি আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে, সেটা কি সঠিক?
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, বর্তমানে শহরে, গ্রামে-গঞ্জে মৃত মানুষের উদ্দেশ্যে কুরআনখানি ও ফতিহাখানি করার যে নিয়ম দেখা যাচ্ছে সে বিষয়ে না পাওয়া যায় কোন সহিহ হাদিস না জঈফ হাদিস। এমনকি এ ব্যাপারে কোন বানোয়াট হাদিসও পাওয়া যায়না। এটা এমনই বিদআত যা সুদৃঢ় প্রমাণাদির সরাসরি বিরুদ্ধ।

এ কুপ্রথা সমাজে এতটা ব্যাপকতা লাভ করার কারণ হল, পয়সা লোভী, নাম সর্বস্ব লেবাস ধারী আলেমগণ এ ব্যাপারে নীরব ভূমিকা পালন করছে আর জনসাধারণ এটাকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরেছে। এমনকি এটাকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বরং ফরযের স্তরে নিয়ে পৌঁছিয়েছে।

সুতরাং মৃতের উদ্দেশ্যে কবরের নিকট গিয়ে অথবা মসজিদ ও মাহফিলে কুরআনখানি বা শবিনাখতম করে তার সওয়াব বখশানো বা সওয়াব রেসানী করা সম্পূর্ণ বিদআত এবং গোমরাহি মূলক কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর উম্মতকে কখনো এ কাজের প্রতি পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ কোন নির্দেশ, দিকনির্দেশনা, উৎসাহ কিংবা উপদেশ দিয়ে যান নি। কোন সাহাবির পক্ষ থেকেও কখনো এ রকম কথা বলা হয় নি। কুরআনখানি করলে মৃত ব্যক্তি যদি উপকৃত হত তবে সর্ব প্রথম সাহাবীগণ তা বাস্তবায়ন করে এ সৌভাগ্য অর্জন করতেন।

সুতরাং এ পদ্ধতি ইসলামের কোন কাজ হতে পারে না। বরং তা বিদআতি পন্থা।
আর বিদআতের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতকে শক্তভাবে সতর্ক করে গেছেন।
তিনি বলেন:
يَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ
“(দীনের ক্ষেত্রে) নতুন আবিষ্কৃত বিষয়াদির ব্যাপারে তোমরা সাবধান হও। কারণ, প্রতিটি নতুন জিনিসই বিদআত আর প্রতিটি বিদআতই গোমরাহি।
[মুসনাদ আহমদ (৩৫/৯) প্রখ্যাত সাহাবী ইরবায ইবনে সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত।]

উম্মুল মুমিনিন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও ঘোষণা করেছেন:
مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدّ
“যে আমাদের এ ব্যাপারে তথা ইসলামী শরীয়তে এমন নতুন কিছু আবিষ্কার করল যা এর অন্তর্ভুক্ত নয় তা পরিত্যাজ্য। ”
[সহীহ বুখারি,অধ্যায়: কোন আমল কারী অথবা শাসক যদি ইজতেহাদ করে ফায়সালা দেয় এবং না জানার কারণে সেটা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ফয়সালার বিপরীত প্রমাণিত হয় তবে তা প্রত্যাখ্যাত। মুসলিম, অধ্যায়: অন্যায় বিধান ভেঙ্গে ফেলা।]

আল্লাহ তাআলা আমাদের সমাজকে বিদআতের মহামারী থেকে রক্ষা করুন।
আমীন।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture