কুরআন ও সুন্নাহ গবেষণা করে মুহাররম মাসের ৫ টি করনীয় আমল খুঁজে পাওয়া যায় । এই ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের বিদ্বানদের মাঝে কোন দ্বিমত নাই ।
১ । গোটা মুহাররম মাস জুড়ে সাধ্যানুযায়ী নফল সিয়াম পালন করা । হাদিসে এ মাসের সিয়ামকে রমাদ্বানের সিয়ামের পর সর্বোত্তম সিয়াম হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে । সহীহ মুসলিমে সংকলিত হাদীসে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
أفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ المُحَرَّمُ
‘‘রামাদানের পরে সর্বোত্তম সিয়াম হলো আল্লাহর মাস মুহাররম মাসের সিয়াম।
(সহীহ মুসলিম ২/৮২১)
২। মুহাররম এর ১০ তারিখ আশুরার একটি সিয়াম পালন করা । এই একটি সিয়াম পূর্বের ১ বছরের গুনাহ মুছে দিবে। আশূরার সিয়াম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
يُكَفِّرُ السَّنَةَ الْمَاضِيَةَ
‘‘এ দিনের সিয়াম গত এক বছরের পাপ মার্জনা করে।’’
(সহীহ মুসলিম- ২/৮১৯)
৩। ১০ তারিখের আগে বা পরে আরো একটি সিয়াম পালন করা । ইয়াহুদী সম্প্রদায়ের লোকদের থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র রাখতে এমনটা করতে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম আমাদের উদ্ভুদ্ধ করেছেন ।
৪। আশুরার সিয়াম শুকরিয়া আদায়ের সুন্নাহ হিসেবে পালন, শোকের জন্য নয় ।মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম সহ পূর্বের বহু নবী-রাসুল এ দিনের মহত্বের দিক বিবেচনায় সিয়াম পালন করেছেন।
৫। এ মাসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে উম্মাহর চেতনাকে উজ্জীবিত করার স্বার্থে আলোচনা, সভা, সেমিনার করা যেতে পারে । মুসা আলাইহিস সালাম এর সংগ্রামী জীবন, হক্ব-বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব, আশুরায় ঘটে যাওয়া অন্যান্য ঘটনা এবং কারবালার বিশুদ্ধ ইতিহাস আলোচনায় আসতে পারে।
আর ২ টি বর্জনীয় কাজ যে ব্যাপারে এই উম্মাহর সকল বিদ্বান একমত । আর তা হলো,
১। এ মাসে সকল ধরণের পাপাচার, অনাচার , যুলম ও মন্দ কর্ম থেকে নিজেকে রক্ষা করা । কেননা পবিত্র কোরআনে আমাদের এই একটি মাত্র বিষয়ে শক্তভাবে হুশিয়ার করা হয়েছে । ইরশাদ হচ্ছে,
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ۬ۙ فَلَا تَظۡلِمُوۡا فِیۡهِنَّ اَنۡفُسَکُمۡ وَ قَاتِلُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ کَآفَّۃً کَمَا یُقَاتِلُوۡنَکُمۡ کَآفَّۃً ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰهَ مَعَ الۡمُتَّقِیۡنَ
অর্থাৎ, নিশ্চয়ই মাসসমূহের গণনা আল্লাহর কাছে বার মাস আল্লাহর কিতাবে, (সেদিন থেকে) যেদিন তিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন। এর মধ্য থেকে চারটি সম্মানিত, এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন। সুতরাং তোমরা এ মাসসমূহে নিজদের উপর কোন যুলম করো না, আর তোমরা সকলে মুশরিকদের সাথে লড়াই কর যেমনিভাবে তারা সকলে তোমাদের সাথে লড়াই করে, আর জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের সাথে আছেন।
(সুরা তাওবা: ৩৬)
২ । আশুরাকে কেন্দ্র করে শিয়া ও অন্যান্য বাতিল মতাদর্শের বিদয়াতী কর্মকাণ্ড থেকে নিজেদের বিরত রাখা । যেমন, তাজিয়া মিছিল, শরীর ক্ষত-বিক্ষত করা, আশুরার দিনের বিশেষ নামাজ, শোক পালন ইত্যাদি ।