মুসলিম সভ্যতায় বিড়াল

নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রী আয়িশা (রাদিআল্লাহু আনহা) -এর ঘরে একটি বিড়াল ছিলো। তিনি হয়তো বিড়ালটি পালতেন, অথবা হতে পারে আমাদের ঘরে যেমন মাঝেমধ্যে বিড়াল আসে, তেমনি তাঁর ঘরে বিড়াল এসেছে।
একজন তাঁর ঘরে খাবার রেখে গেলেন। তখন তিনি নামাজ পড়ছেন। তাঁর জন্য রাখা খাবার থেকে বিড়াল কিছু অংশ খেয়ে নিলো। যিনি খাবার নিয়ে এসেছেন, তিনি ভাবলেন আয়িশা (রা:) হয়তো পুরো খাবার ফেলে দিবেন। খাবারে তো বিড়াল মুখ দিয়েছে।

কিন্তু, তিনি দেখলেন বিড়াল যেখান থেকে খেয়েছে, সেটা ফেলে না দিয়ে আয়িশা (রা:) সেখান থেকে খাওয়া শুরু করলেন! খাবার নিয়ে আসা ব্যক্তি অবাক হলেন। আয়িশা (রা:) তাঁর কৌতুহল নিবারণ করলেন- নবিজী (সা:) বলেছেন বিড়াল অপবিত্র প্রাণী নয়।

আয়িশা (রা:) আরেকদিনের গল্প শুনালেন। একবার নবিজী (সা:) বিড়ালের উচ্ছিষ্ট পানি দ্বারা ওজু করেছেন। যে পানিতে বিড়াল মুখ দিয়েছিলো, সেই পানি নবিজী (সা:) ফেলে দেননি।

নবিজীর (সা:) একজন বিখ্যাত সাহাবীর নাম আবু হুরাইরা (রাদিআল্লাহু আনহু)। তাঁর আসল নাম ছিলো- আব্দুর রহমান (ইসলামপূর্ব নাম- আব্দুস শামস)। সাহাবীদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে বেশি হাদীস বর্ণনা করেন।

ছোটোবেলায় তিনি বিড়াল পালতেন। তাঁর সঙ্গে সবসময় একটি বিড়াল থাকতো। তিনি যেখানে যেতেন, বিড়ালটিও সেখানে যেতো। শীতকালে চাদরের ভেতর বিড়াল নিয়ে ঘুরতেন। ফলে, তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ডাকা শুরু করে ‘বিড়ালওয়ালা’ নামে। আরবিতে ‘বিড়ালওয়ালা’ বলতে বুঝায় ‘আবু হুরাইরা’। বন্ধুদের দেয়া এই নামেই তিনি বিখ্যাত।
হাদীসের বইয়ে যতোবার আবু হুরাইরার (রা:) নাম আসে, ততোবার স্মরণ করিয়ে দেয় তাঁর বিড়ালপ্রীতি।

নবিজীর (সা:) আরেকজন সাহাবী ছিলেন আবু কাতাদাহ (রাদিআল্লাহু আনহু)। তাঁর পুত্রবধূ তাঁর জন্য ওজুর পানি এনে দেন। তখন একটি বিড়াল এসে পানি পান করতে লাগলো। বিড়ালের পানি পান করতে কষ্ট হচ্ছে দেখে তিনি ওজুর পানির পাত্রটি কাত করে ধরলেন, যাতে বিড়ালটি ভালোভাবে পানি পান করতে পারে।
মোঙ্গলদের জয়যাত্রা রুখে দেয়া মামলুক সুলতান রুকনুদ্দীন বাইবার্সের বিড়ালপ্রীতি ছিলো প্রসিদ্ধ। তিনি মিসরে বিড়ালের জন্য আলাদা বাগানের ব্যবস্থা করেন যাতে বিড়াল স্বাচ্ছন্দ্যে বিচরণ করতে পারে।

উনিশ শতকে ব্রিটিশ ওরিয়েন্টালিস্ট উইলিয়াম লেইন কায়রোতে গিয়ে সেখানকার মানুষের বিড়ালপ্রীতি দেখে অবাক হোন। তিনি দেখতে পান হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে অসংখ্য বিড়াল। বিকেলবেলা মানুষজন বিড়ালের জন্য ঝুড়িতে করে খাবার নিয়ে আসে।
মিসরের মানুষের বিড়ালপ্রীতি নিয়ে লড়েইন চিট্টক একটি বই লিখেন। বইয়ের নাম- ‘Cats of Cairo’।

উসমানি খলিফাদের মধ্যে বেশিরভাগ বিড়াল পছন্দ করতেন। ইস্তাম্বুলের রাস্তায়, পার্কে বিড়াল ঘুরে বেড়ায়। এমনকি মসজিদগুলোতেও বিড়াল প্রবেশ করে। মানুষজন নামাজ পড়ছে, বিড়াল দৌড়াদৌড়ি করছে। মসজিদের বারান্দায় গিয়ে বিড়াল বিশ্রাম নেয়, ছোটো শিশুরা বিড়ালদের সাথে খেলাধুলা করে।

https://youtu.be/X57Sze7fj-s

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version