মা বাবার প্রতি ভালো আচরণ পাপের কাফফারাহ স্বরুপ

আপনার সন্তানের দিকে তাকালে আপনার পিতামাতা ভাইবোনের উৎসর্গের কথাগুলো অনায়াসে বুঝতে পারবেন। কতটা পরম যত্নে, আদর মায়া মমতায় আপনাকে আগলে রাখা হয়েছিল।
আপনার সখগুলো পূরণ করতে গিয়ে হয়তোবা পরিবারের কেউ নিজের সখের কথা ভুলেই গিয়েছিল! আপনাকে সময় দিতে গিয়ে হয়তোবা পরিবারের কেউ নিজের প্রতি তাকানোর সুযোগও পাননি!

আপনি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হলেন,
আপনি জাগতিক বিষয়গুলো আয়ত্ত করা শিখলেন,
আপনার ভেতরে যখন লোভ, স্বার্থ, আত্ম-অহংকার বেড়ে উঠলো,
আপনি যখন আপনার ‘ইগো’ কে প্রায়োরিটি দেয়া শুরু করলেন,
আপনি এবং আপনার পরিবারের মাঝে শুরু হলো ‘দূরত্ব’, ‘বিচ্ছিন্নতা’, ‘শত্রুতা’…

সময়ের তালে কিংবা দুনিয়ার মায়াজালে আপনি এতটাই কঠোর হয়ে গেলেন যে, পরিবারের কারো প্রতিই আপনার আবেগ কাজ করে না। কারো প্রতিই আপনার মায়া লাগেনা। কারো দিকে তাকাতেও আপনার ইচ্ছে হয়না।

অথচ এই আপনি যখন হাটতে পারতেন না,
কথা বলা শিখেননি,
খাইয়ে না দিলে খেতে পারতেন না,
জামাকাপড় পরিবর্তন করে দিতে হতো,
তখন পরিবারের সবাই আপনাকে সময় দিয়েছেন, শ্রম দিয়েছেন, আপনার সর্বপ্রকার কষ্ট তারা লাঘব করেছেন, আপনার সকল চাওয়া-পাওয়া পূরণ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছেন।

আপনি সবকিছুই বুঝতে পারেন, আপনি সত্যমিথ্যার পার্থক্যও ধরতে পারেন, আপনি এটাও বুঝতে পারেন আপনিই ভুল অথচ আপনি আপনার ‘ইগো’কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে আজ পরিবার থেকে কতটা দূরে…..

মা বাবা ভাইবোন আত্মীয়স্বজন এরা সবাই আপনার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ, আজকের এই আপনার পেছনে এদেরই অবদান সবথেকে বেশি।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
ঐ ব্যক্তির নাক ধূলোমলিন হোক যে, তার পিতা-মাতাকে অথবা তাদের একজনকে তার জীবদ্দশায় পেয়েছে কিন্তু সে জান্নাতে যেতে পারল না।
(তিরমিযী:৩৫৪৫)

পরিবারের সবার প্রতিই সহনশীল হউন,
উনাদের যত্ন নিন,
উনাদের কথাগুলো শ্রদ্ধার সাথে শুনুন,
উনাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করুন,
সম্পর্কগুলোর প্রতি খুব খেয়াল রাখুন।
আপনার মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব, আপনি ই পারবেন, সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য সবার প্রথমে আপনাকেই পরিবর্তন হতে হবে, সুতরাং নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনুন। প্রতিদিন সবার জন্য দুয়া করুন।

رَبِّ اجْعَلْنِي مُقِيمَ الصَّلَاةِ وَمِن ذُرِّيَّتِي ۚ رَبَّنَا وَتَقَبَّلْ دُعَاءِ
‘হে আমার রব! আমাকে সালাত কয়েমকারী করুন এবং আমার বংশধরদের মধ্য হতেও। হে আমাদের রব! আর আমার দো’আ কবূল করুন।
(সূরা ইবরাহীম:৪০)
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
হে আমার রব! যেদিন হিসেব অনুষ্ঠিত হবে সেদিন আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং মুমিনদেরকে ক্ষমা করুন।
(সূরা ইবরাহীম:৪১)
 رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
হে আমার রব, তাদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন করেছেন।
(সূরা বানী-ইসরাঈল:২৪)
‘হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যে আমার ঘরে ঈমানদার হয়ে প্রবেশ করবে তাকে এবং মুমিন নারী-পুরুষকে ক্ষমা করুন।
(সূরা নূহ:২৮)
‘হে আমার রব, আমাকে সামর্থ্য দাও, তুমি আমার উপর ও আমার মাতা-পিতার উপর যে নিআমত দান করেছ, তোমার সে নিআমতের যেন আমি শোকর আদায় করতে পারি এবং আমি যেন সৎকর্ম করতে পারি, যা তুমি পছন্দ কর। আর আমার জন্য তুমি আমার বংশধরদের মধ্যে সংশোধন করে দাও। নিশ্চয় আমি তোমার কাছে তাওবা করলাম এবং নিশ্চয় আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত’।
(সূরা আল-আহকাফ:১৫)

লিখেছেন

মাহমুদ হাসান

বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।
(২২ঃ৪৬)

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

বস্তুত চোখ তো অন্ধ হয় না, বরং অন্ধ হয় বক্ষস্থিত হৃদয়।
(২২ঃ৪৬)

Exit mobile version