মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব

একলোক সুদূর ইয়েমেন থেকে তার মাকে পিঠে বহন করে বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে আসলো। পিঠে একজন জ্যান্ত মানুষ বহন করে পথচলা, মানুষের ভিড়ে তাকে নিয়ে তাওয়াফ করা কতোটা কষ্টের চিন্তা করা যায়?
লোকটি তাওয়াফ করছিলো আর বলছিলো- “আমি তার জন্য তার অনুগত উটতুল্য, তার পাদানিতে আঘাতপ্রাপ্ত হলেও নিরুদ্বেগে তা সহ্য করি।”

তাওয়াফ শেষে সে আব্দুল্লাহ ইবনে উমরকে (রাদিয়াল্লাহু আনহু) দেখতে পেলো। মায়ের জন্য সে এতো কষ্ট করলো, সে কি তাহলে মায়ের হক্ব আদায় করতে পারলো? উৎসুক মন নিয়ে একজন সাহাবীর কাছে জানতে চাইলো- “আমি কি আমার মায়ের প্রতিদান দিতে পেরেছি বলে আপনার মনে হয়?”
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা:) বললেন:

“না, তার একটি দীর্ঘশ্বাসের প্রতিদানও হয়নি।”
[আল-আদাবুল মুফরাদ, ইমাম বুখারী: ১১]

আল্লাহ পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে নির্দেশ দিলেন তাঁকে ছাড়া আর কারো ইবাদাত না করতে। একই আয়াতে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন মা-বাবার প্রতি সদাচরণ করতে। মা-বাবার সাথে সদাচরণ করার গুরুত্ব আল্লাহ পবিত্র কুরআনে এমনভাবে উল্লেখ করেছেন যে, সেটার সিক্যুয়েল ঠিক আল্লাহর ইবাদাত করার গুরুত্বের পরেই স্থান পেয়েছে।
আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেন:

“আর তোমাদের রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করবে না এবং মা-বাবার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়ই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বলো।”
[সূরা বনী ইসরাঈল:২৩]

যে মা-বাবা আমাদেরকে জন্ম দিয়েছেন, ছোটোবেলায় আমরা যখন সহায় ছিলাম, তারা আমাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন, আমরা শীতে যখন কাপতাম, তারা তখন আমাদেরকে কাপড় পরাতেন, আমরা কাপড় নষ্ট করলে তারা সেই কাপড় ধুয়ে দিতেন, ঠাণ্ডা লাগতে পারে বলে সাথে সাথে আমাদের কাপড় বদলাতেন, নিজেদের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আমাদের জন্য ত্যাগ করতেন, বড়ো হবার পর সেই মা-বাবাকে আমরা ভুলে যাই?
টাকা উপার্জন করার পর তাদের আবদার শুনে বিরক্ত হই?

‘এটা কেনো কিনতে হবে, এটা দিয়ে কী করবে?’
বলে নিজের টাকার বড়াই দেখাই?
অথচ সেই মা-বাবাই তো ছোটোবেলায় আমাদেরকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ খেলনা দেবার সময় যুক্তি খুঁজেননি, তারা আমাদের মুখের হাসিটা দেখতে চেয়েছিলেন।

নিজেরা ভালো না খেয়ে আমাদেরকে ভালোটা দিয়েছেন, নিজেরা ঈদ-উৎসবে কাপড় না কিনে আমাদের জন্য কিনে দিয়েছেন, যা দেয়া সম্ভব এমন কোনো আবদার তারা ফেলে দেননি। যারা আমাদেরকে এতো কিছু দিলেন, তাদের প্রতি কি আমরা কৃতজ্ঞ হবো না?
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হবার সাথে সাথে মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
আল্লাহ বলেন:

“(আমি মানুষকে) নির্দেশ দিয়েছি যে, আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।”
[সূরা লোকমান:১৪]

মা-বাবার প্রতি অনুগত হবার জন্য প্রয়োজনে কিছু ত্যাগ করতে হলেও আমাদেরকে সেটা ত্যাগ করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
“মা-বাবার অবাধ্য হয়ো না। এমনকি তারা যদি বলে সবকিছু ছেড়ে দাও, তবুও তাদের কথা মানবে।”
[মাজমু আল-জাওয়া’ঈদ: ৪/২১৯]

লিখেছেন

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Exit mobile version