মানুষের বায়ু নির্গমনে কাউকে হাসতে নিষেধ করেছেন
চার-পাঁচজন বন্ধু এক জায়গায় বসে আড্ডা দিচ্ছে। আড্ডাটা জমে উঠেছে। এক কাপ চা শেষ করে আরেক কাপ চা অর্ডার করবে সবাই। ঠিক তখন ঘটলো এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।
এক বন্ধু ঠুস করে ‘শব্দ দূষণ’ করলো!
সবাই তার দিকে তাকিয়ে সে কী হাসাহাসি! একজন আরেকজনের গায়ে গিয়ে পড়ছে! তাকে নিয়ে ঠাট্টা-মশকরা করতে করতে একজন আরেকজনকে হাই-ফাইভ দিচ্ছে। যে শব্দ দূষণ করেছে, তার খুব খারাপ লাগছে। মুহুর্তের মধ্যে সে হাসিরপাত্রে পরিণত হলো।
শব্দ দূষণকারী বন্ধুটির মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করুন। চিন্তা করুন সে কতোটা অস্বস্তিবোধ করছে। তার জায়গায় আমি-আপনি হলে আমাদের কেমন লাগতো?
জৈবিক একটা কাজ, স্বাভাবিক একটা কাজের জন্য যখন জনসম্মুখে হাসির খোরাক হবো, সেটা নিশ্চয়ই ভালো লাগবে না।
ইসলাম এই ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়টার দিকেও নজর রেখেছে। ইসলাম আমাদেরকে জনসম্মুখে লজ্জিত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে চায়। ইসলাম চায় না আমরা সবার সামনে হাসিরপাত্রে পরিণত হই।
কেউ বায়ু নির্গমন করলে তাকে নিয়ে হাসতে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন।
[সহীহ বুখারী:৬০৪২]
যে কাজটি আমরা সচরাচর করি, সেই কাজ কেউ করলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করতে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। একজন মুসলিমের কাছে আরেকজন মুসলিমের ইজ্জত অনেক মূল্যবান।
কেনো হাসা যাবে না?
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সুন্দর একটা কারণ দেখান। তিনি একটি খুতবায় বলেন:
“তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই কাজটির জন্যই হাসে, যে কাজটি সে নিজেও করে!”
[সহীহ বুখারী: ৪৯৪২, ৩৩৭৭; মুসলিম ৫১/১৩, হাঃ ২৮৫৫, আহমাদ ১৬২২২]
খুব সাধারণ একটা কথা, কিন্তু যুক্তি হিশেবে অসাধারণ। অর্থাৎ, এইসব কাজ তো সবাই করে। এমন না যে হাতেগোনা কয়েকজন করে। তাহলে যে কাজটা সবাই করে, সেই কাজটা আরেকজন করলে তাকে নিয়ে হাসতে হবে কেনো?
ইসলাম এই মানবিক আবেগকে কতো গুরুত্ব দিচ্ছে দেখুন। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়েও আমরা যেটাকে তুচ্ছজ্ঞান করছি, সেই শব্দ দূষণ নিয়ে কথা বলছেন। শব্দ দূষণকারীকে নিয়ে হাসি-তামশা করতে নিষেধ দিচ্ছেন।
প্রাসঙ্গিক একটি ঘটনা।
হাতেম (রাহিমাহুল্লাহ) নামে এক তাবে-তাবেঈ ছিলেন। ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের (রাহিমাহুল্লাহ) সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। ইমাম আহমদ তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয় শিখেছিলেন।
একবার ইমাম হাতেমের কাছে এক মহিলা এসেছিলেন একটি মাসআলা জানতে। মাসআলা জানতে এসে মহিলা সশব্দে ‘শব্দ দূষণ’ করেন!
একজন সম্ভ্রান্ত মুফতির কাছে এসে কী এক অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়লেন তিনি! লজ্জায় যেনো লাল হয়ে যাচ্ছেন।
ইমাম হাতেম প্রশ্নকারী মহিলার প্রশ্ন শুনেও নিজের কানের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “জোরে বলুন।” তিনি এমন ভাব দেখালেন যে তিনি কানে কম শুনেন। প্রশ্নকারী মহিলা যখন বুঝলেন ইমাম সাহেব বধির, তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। যাক, তারমানে ইমাম সাহেব তার ‘শব্দ’ শুনতে পাননি।
মহিলা চলে গেলেন। কিন্তু ইমাম সাহেব যে বধির হবার ভান করেছিলেন, সেটা অব্যাহত রাখেন। যখনই কেউ তার কাছে কিছু জানতে আসতো, তিনি বলতেন “জোরে বলো”। কেনো?
কারণ, ঐ মহিলা যদি কখনো জানতে পারেন যে ইমাম সাহেব বধির ছিলেন না, তাহলে তো তিনি লজ্জা পাবেন।
একজন মুসলিম মহিলার ইজ্জত রক্ষার জন্য ইমাম হাতেম মৃত্যু অবধি বধির থাকার ভান করে যান। যার কারণে তিনি পরিচিত হয়ে যান ‘আসম’ অর্থাৎ বধির নামে। তাঁকে মানুষ চিনতো ‘হাতেমে আসম’ বা বধির হাতেম নামে।
ইসলামের সৌন্দর্য (প্রথম পর্ব)
সংগ্রহীত, লিখেছেন
আরিফুল ইসলাম