বাধ্য হয়েই এক নব প্রান্তরে আমার উত্থান। ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মানুষের সমাগম। কারো চেহারা বিবর্ণ, কেউ উজ্জ্বল আকৃতি, কেউ বা কালো আবার কেউ অন্ধ। সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। অনেকেই ছোটাছুটি করছে এদিকওদিক। মনে হচ্ছে তাদের জন্য বিপজ্জনক কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
উফফ, সূর্যের তিব্রতা যেন জ্যামেতিক হারে বেড়েই চলছে। একটুকু ছায়ার জন্য সবাই উদভ্রান্ত। যেখানে কোন বটবৃক্ষের দেখা নেই সেখানে গাছের ছায়া আসবে কোথা থেকে! এ এক বৃক্ষ বিলিন লাল শ্বেত মিশ্রিত উদ্যান! সবাই গলা ফাটা তৃষ্ণায় ঘামে একাকার। এ যেন সবাই নিজের ঘামেই ডুবে যাচ্ছে দিশাহারা জাতি।
“আর আমি জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব”
[সুরা কাহাফ, আয়াত: ৮]
বলছিলাম চুড়ান্ত বিচার দিনের কিছু ভয়াবহতার দিক। যাকে আমরা জানি হাশরের ময়দান হিসেবে। এই ভয়াবহ দিনে যখন সবাই দিশাহারা তখন আমিও ভাগ্যের হিসাব কষতে গিয়ে অজান্তেই বলে উঠবো ইয়া নফসি, ইয়া নফসি। নিঃসন্দেহে প্রত্যেকে কেয়ামত উপলব্ধি করতে পারবে।
এই সংকটাপন্ন মুহুর্তে দু’টো জিনিস আমার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিবে। রাসুল (সা.) বলেন,
“সিয়াম ও কোরআন মানুষের জন্য কেয়ামতের দিন সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে, ‘হে আমার রব, আমি তাকে খাবার ও প্রবৃত্তি পূরণে বাধা দিয়েছি। তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। আর কোরআন বলবে, আমি তাঁকে রাতের বেলা ঘুমাতে বাধা দিয়েছি। অতএব, তাঁর ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে”
[মুসনাদে আহমদ: ৬৫৮৯]
আমাদের সারাজীবনের অনেক বন্ধুর পরিচয় মিলে। কিন্তু সবাই কি আমার বিপদের বন্ধু হয়.? কখনোই না। বিপদের সময় খুবই কম বন্ধুই পাশে পাওয়া যায়। বিপদের সময় ২/১ জন বন্ধুগুলোকে কাছে পাওয়ার প্রধান কারণ হলো, আমার জীবনের সাথে তাদের ঘনিষ্ঠ করে নেওয়ার জন্য যা যা করার দরকার সবই করেছি। এখন প্রশ্ন হলো কিয়ামতের ময়দানে আমাকে কেন কুরআন সুপারিশ করবে, আমরা কি হক আদায় করে ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেছি?
আবার সিয়াম কেনই বা আমার পক্ষ নিবে?
আমি তো রোজা রেখেও নিজেকে পরিপূর্ণ সংযত রাখতে পারি নি! এ নিয়ে আমরা কতটুকু ভেবেছি, হিসাব কতটুকু কষেছি?
এই মাসটি শেষ হওয়ার পথে, হিসাবগুলো করে নেওয়া উচিত লাল শ্বেত মিশ্রিত ভয়াবহ সমতল ভূমির পথে যাত্রার আগেই। হতে তো পারে এটাই আপনার শেষ রামাদান!
সিরিজ-
রামাদান নিয়ে খুটিনাটি [পর্ব-১৪]
পর্ব- ভয়াবহ প্রান্তর