Writing

ভুঁড়ি বিড়ম্বনা

একবার এক বন্ধু জিজ্ঞেস করেছিলো, “সরকারি চাকরিজীবী আর হুজুরদের মধ্যে মিল কোথায়?”
অমিলের কথা বললে হয়তো অনেককিছু বলা যেতো, কিন্তু চোখে পড়ার মতো মিল খুঁজে পাচ্ছিলাম না। সে বললো, “এমন কোনো সরকারি চাকরিজীবী দেখেছিস, যিনি প্রায় এক যুগ চাকরি করা সত্ত্বেও তার ভুঁড়ি দেখা যায় না? চল্লিশ বছরের বেশি এমন কয়জন হুজুর দেখেছিস, যাদের ভুঁড়ি নেই?”

তার কথায় হয়তো Simplification আছে, তবে ওভার-সিম্পলিফাইড না সেটা বুঝতে কষ্ট হবে না। শতকরা হিশেবে দেখা যাবে এটা মোটাদাগে সত্য। আমার চোখের সামনে পরিচিত যতো সরকারি চাকরিজীবীর মুখ ভাসছে, প্রায় সবারই একই অবস্থা। শহরাঞ্চলের কয়েকজন হুজুরকে ভুঁড়িহীন দেখেছিলাম, গ্রামাঞ্চলে ভুঁড়িহীন খুঁজে পাওয়া কঠিন।

লকডাউন এসে সবকিছু উল্টে দিলো। এখন আর নির্দিষ্ট কোনো পেশার মানুষকে ভুঁড়ির জন্য দোষারোপ করা যাচ্ছে না। প্রায় দেড় বছর বিশ্রামে থাকার ফলে, কম হাঁটাচলার কারণে যুবকদেরও ভুঁড়ি বেড়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন না হলেও সমাজে একসময় ভুঁড়িওয়ালা যুবক দেখা যেতো না। থাকলেও কম ছিলো। এদিক-সেদিক দৌড়াদৌড়ি, খেলাধুলার ফলে যৌবনকালে মেদ জমার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু, করোনা এসে সব ছক পাল্টে দেয়।

অনেকদিন পর কারো সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হলে আলোচনার একাংশ জুড়ে থাকে ভুঁড়ি। ফজরের নামাজ পড়ে ফুটবল খেলে কিভাবে মেদ কমানো যায়, এই নিয়ে থাকে দুশ্চিন্তা।
যে ব্যর্থ হয়, সে যেমন তার ব্যর্থতা ঢাকতে বুলি আওড়ায়- ‘Failure is the pillar of success’, তেমনি ভুঁড়ি কমাতে ব্যর্থরাও দেখি ফেসবুকে ঢাকঢোল পিটিয়ে ভুঁড়ির পক্ষে সাফাই গায়!
“আমার ভুঁড়ি, আমার অহংকার।”
“ভুঁড়ি ছাড়া কেমন পুরুষ?”

অনলাইন নিউজ চ্যানেলগুলোও ভুঁড়িওয়ালাদের আবেগকে কাজে লাগায়। তারা নিউজ করে- ‘ভুঁড়িওয়ালা ছেলেদেরকেই পছন্দ করে মেয়েরা’। সেসব নিউজ (!) ধুমাই শেয়ার হয়।

একবার খলিফা উমর ইবনুল খাত্তাব (রাদিআল্লাহু আনহু) একজন ভুঁড়িওয়ালা লোককে দেখলেন। তিনি তার ভুঁড়ির দিকে দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী এটা?”
লোকটি যে উত্তর দিয়েছিলো, এমন উত্তর আমরা অনেকেই দিই। যেকোনো ভুঁড়িওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলে সে ঐ লোকের মতো বলে, “এটা আল্লাহর রহমত।”
উমর (রা:) বললেন, “না, এটা বরং আল্লাহর দেয়া শাস্তি।”

খলিফা উমরকে (রা:) আমরা ন্যায়পরায়ণ শাসক হিশেবে দেখি, তাঁর প্রশংসা করি। আমাদের ভুঁড়ির এমন অবস্থা দেখলে উমরের (রা:) লাঠির কথা মনে পড়ে। সমাজে এতো এতো ভুঁড়িওয়ালাদের দেখলে উমর (রা:) কী যে করতেন একটু কল্পনা করি!

সুস্বাস্থ্যের ব্যাপারে উমর (রা:) ছিলেন বেশ সচেতন। তিনি প্রায়ই বলতেন, “হে লোকসকল! বেশি খাওয়া থেকে সাবধান। বেশি খাবার খেলে অলসতা তোমাদের গ্রাস করবে, ঠিকমতো নামাজ পড়তে পারবে না, শরীর ঠিক রাখতে পারবে না, অসুস্থ হয়ে পড়বে। আল্লাহ মোটা মানুষকে অপছন্দ করেন। তারচেয়ে বরং তোমরা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করো।”

গতো সপ্তাহে নিজের ভুঁড়ির জন্য সমালোচনার শিকার হোন ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমার। কয়েকদিনের বিরতি পেয়ে তিনি ভুঁড়ি বানিয়ে ফেলেন! ঠিকমতো পারফর্ম করতে পারছেন না বলে সব দোষ গিয়ে পড়ে ভুঁড়ির ওপর। সমালোচকদের অপমান সহ্য করতে না পেরে রেগে যান নেইমার। টুইটারে দেন কড়া জবাব।

ভুঁড়ির পক্ষে সাফাই গাওয়ার যে ফেসবুক ট্রেন্ড আছে, উমরের (রা:) উক্তি শুনে সেই সুযোগ আর রইলো না।
“তোমার ভুঁড়ি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত না, এটা তো আযাব।”

লিখেছেন

Picture of আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

আরিফুল ইসলাম (আরিফ)

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

লেখকের অন্যান্য সকল পোষ্ট পেতে ঘুরে আসুন

পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তার কলম তাকে উজ্জীবিত করেছে স্বীয় বিশ্বাসের প্রাণশক্তি থেকে।
অনলাইন এক্টিভিস্ট, ভালোবাসেন সত্য উন্মোচন করতে এবং উন্মোচিত সত্যকে মানুষের কাছে তুলে ধরতে।

Show More

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button
Islami Lecture