একবার এক সাহাবী নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে ভিক্ষা চাইতে এলেন। কেউ কিছু চাইলে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাধারণত ‘না’ করেন না। তাঁর কাছে দেবার মতো কিছু থাকলে তিনি দিয়ে দেন।
কিন্তু, এবার নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীকে একটি লাইফ-লেসন শেখাতে চাইলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার বাড়িতে কী আছে?”
সাহাবী জবাব দিলেন যে, তাঁর বাড়িতে একটি কম্বল আর একটি পানপাত্র আছে। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে সেগুলো নিয়ে আসতে বললেন৷
সাহাবী বাড়ি থেকে সেগুলো নিয়ে আসলে নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেগুলো নিলামে তুললেন।
একজনের ব্যবহৃত কম্বল আর পানপাত্র, এগুলোর কী এমন চাহিদা আছে?
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজে যেহেতু নিলাম ডাকছেন, একজন সাহাবী বললেন তিনি এক দিরহাম দিবেন।
না, এক দিরহামে তো হবে না, এর চেয়ে বেশি কে দিবে?
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশ কয়েকবার নিলামে দাম বাড়ানোর জন্য বললেন। তখন একজন সাহাবী বললেন যে, তিনি দুই দিরহাম দিবেন। দুই দিরহামে জিনিস দুটো তাঁর কাছে বিক্রি করা হলো।
যিনি ভিক্ষা করতে এসেছিলেন, তিনি তো এখন পুরনো জিনিসপত্র বিক্রি করে দুই দিরহামের মালিক হয়ে গেলেন। এবার নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্টারেস্টিং একটি কাজ করলেন। তিনি ঐ সাহাবীকে এক দিরহাম দিয়ে বললেন পরিবারের জন্য খাবার কিনতে, আরেক দিরহাম দিয়ে বললেন একটি কুঠার কিনতে।
সাহাবী কুঠার কিনে নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাছে নিয়ে এলেন। নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ হাতে কুঠারে কাঠের হাতল লাগিয়ে দিলেন। সাহাবীকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেনো জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কাঠেন। আর আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে যেনো এখানে না দেখেন!
সাহাবী ১৫ দিন জঙ্গলে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করেন, সেগুলো বিক্রি করে ১০ দিরহাম উপার্জন করে নবিজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে দেখা করেন। ১৫ দিন আগে যিনি ছিলেন কপর্দকহীন, ১৫ দিন পর তিনি ১০ দিরহামের মালিক!
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে পরামর্শ দিলেন, কিছু টাকা দিয়ে খাবার কিনে নাও, কিছু টাকা দিয়ে পোশাক কিনে নাও।
এবার নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পুরো এপ্রোচটার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করলেন। সাহাবী এসেছিলেন কী করতে? ভিক্ষা করতে। এখন তিনি কী হলেন? স্বাবলম্বী।
নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “ভিক্ষার কারণে কিয়ামতের দিন তোমার মুখমণ্ডলে অপমানের চিহ্ন থাকার চেয়ে এটি (উপার্জন করা) তোমার নিকট অধিক উত্তম। চরম দরিদ্রতা, কঠিন ঋণের বোঝা অথবা রক্তপণ আদায়ের মতো প্রয়োজন ব্যতীত ভিক্ষা করা সঙ্গত নয়।”
[সুনানে ইবনে মাজাহ: ২১৯৮]
সাহাবী এসেছিলেন সাময়িক সল্যুশনের জন্য, কিন্তু নবিজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পার্মানেন্ট সল্যুশনের ব্যবস্থা করলেন।
২.
ভিক্ষা করতে করতে একসময় মানুষ ভিক্ষা করাকে পার্মানেন্ট পেশা হিশেবে নিয়ে নেয়। তার মধ্যে তখন আর আত্মসম্মানবোধ থাকে না। মানুষের কাছে হাত পাতার স্বভাব একবার যার মধ্যে পেয়ে বসে, এটার মজা সে আর ছাড়তে চায় না। ভিক্ষা মানুষের আত্মসম্মানবোধ কেড়ে নেয়। সে সমাজে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারে না, অন্যায়কে ‘অন্যায়’ বলার সাহস পায় না। তার মধ্যে জন্ম নেয় ইনফিরিওরিটি ক্রাইসিস।
মহৎ উদ্দেশ্যে কালেকশনের জন্য আমি মনে করি কোমলমতি বাচ্চাদেরকে ‘ব্যবহার’ করা ঠিক না। কারণ, ছোটোবেলা তার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টা তার চরিত্র গঠনের কাদামাটি। তার মধ্যে আত্মসম্মানবোধ জাগ্রত হবার সময় এই ছোটোবেলা।
এই বয়সে কোনো মহৎ কিছুর নামেও যদি সে হাত পাতা শুরু করে, স্বভাবত তার মধ্যে আত্মসম্মানবোধ আস্তে আস্তে লোপ পাবে। তার গলার স্বর নিচু হবে। ভবিষ্যতে যখন তাকে সমাজের কোনো বড়ো একটা পর্যায়ে ভূমিকা রাখার কথা, যখন অন্যায়কে মাথা উঁচু করে ‘অন্যায়’ বলার কথা, তখন তার মধ্যে সেই শক্তি-সামর্থ্য থাকবে না।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাচ্চাদেরকে যখন কালেকশনের জন্য সমাজের মানুষের কাছে পাঠায়, সেই বাচ্চারা বড়ো হয়ে কিভাবে সমাজপতির বিরুদ্ধে কথা বলবে? বরং সমাজপতির সামনে দাঁড়াতে তার পা কাঁপাটাই স্বাভাবিক।
মোর্যাল:
১. কাউকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে চাইলে তার জন্য সাময়িক সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা না করে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান দেয়াটা উত্তম। এটা সুন্নাত।
২. বাচ্চাদেরকে যতোটা পারা যায় স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলার চেষ্টা করা। তাদের আত্মসম্মানে আঘাত লাগতে পারে, এমন কোনো কিছুতে তাদেরকে না জড়ানোর চেষ্টা করা উচিত।