তাকওয়ার বাংলা অর্থ হচ্ছে পরহেজগারী। এই যে মানুষ জীবন ভর আল্লাহর বিধি নিষেধ অমান্য করে নফসের গোলামি করছে, অন্যায়-অবিচার, পাপাচারে বিষিয়ে তুলেছে পৃথিবী নামক গ্রহটাকে, সেসব বর্বরতা, দীনহীনতার অবসান ঘটিয়ে সভ্যতার ফুল ফোটাতে তাকওয়া হলো পরশ-
পাথর। তাই আসুন তাকওয়া অর্জনে রমজানকে কাজে লাগাই।
হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে ইমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে রোজা রাখবে, তার অতীত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’
বুখারি শরিফ, হাদিস নম্বর ২০১৪।
রোজা মানেই কেবল উপবাস থাকা নয় বরং আল্লাহর সান্মিধ্য অর্জনের লক্ষ্যে অন্তরের কলুষতাকে পুড়িয়ে ফেলার নামই রমজান। তাহলেই সওয়াবের ফুলে ভরে উঠবে আমাদের বাগান। যদিও মসজিদের জন্য আামদের হৃদয় ব্যকুল হয়ে উঠে, তবুও এই মহামারির কারণে ঘরেই নামাজ আদায় করতে হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় ঘরের নামাজেই মসজিদে নামাজ আদায়ের সওয়াব পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ।
নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো বান্দা যদি কোনো নেককাজ নিয়মিত পালন করে। আর কোনো রোগ বা ভ্রমণের কারণে সে আমল করতে না পারে তাহলেও ওই আমলের সওয়াব তার আমলনামায় যোগ হতে থাকবে।’
আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ২৭৩৬।
রোজা-তারাবির পাশাপাশি পবিত্র কোরআন চর্চায়র প্রতিও গুরুত্ব দিতে হবে। পরিবারের যারা কোরআন পড়তে জানে না, তাদেরকে শেখাতে হবে। কোরআন আলোকিত জীবনের পথ দেখায়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে এসেছে এক নূর এবং কিতাব।’
সূরা মায়িদা, আয়াত ১৫।
পবিত্র কোরআন শুধু পড়ার জন্যই আল্লাহ নাজিল করেননি। কোরআনকে বোঝা এবং গবেষণার জন্যও তাগিদ দেয়া হয়েছে। কোরআন এমনই এক সংবিধান, যা আল্লাহ ও বান্দার মাঝে প্রেমময় বন্ধনকে সুদৃঢ় করার পাশাপাশি মানবজীবনের ছোট-বড় সব সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে। আধুনিক বিশ্বে অমুসলিমরা যেখানে কোরআন নিয়ে গবেষণা করে নানান কিছু আবিষ্কার করে চলেছে, সেখানে আমরা মুসলমানরা শুধুমাত্র কোরআনের উপর চোখ বুলিয়েই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করছি।
এ জন্যই আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তবে কি তারা কোরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? না কি তাদের অন্তরে তালা মেরে দেয়া হয়েছে?’
সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত ২৪।
করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ এখন ঘরবন্দি। বন্ধ হয়ে গেছে উপার্জনে চাকা। বিপাকে পড়েছেন হতদরিদ্ররা। একমুঠো খাবারের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ছুটছেন বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে। কেউ সাহায্য পাচ্ছেন, আবার কেউ সাহায্যের বদলে পুলিশের লাঠি পেটা খেয়ে ঘরে ফিরছেন। অনেকেই আছেন, যারা পেটে খাবার না থাকলেও লজ্জায় কারো কাছে হাত পাততে পারেন না। আমাদের উচিত এই মানুষগুলোকে খুঁজে খুঁজে বের করা। তাদের প্রতি সহানুভূতি ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া। তাদের সাহারি ও ইফতারের ব্যবস্থা করা।
নবীজি সা. বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ তারা, যারা মানুষকে খাওয়ায়।’
মুসনাদে আহমদ, হাদিস নম্বর ২৩৯৭১।
সমাজের বিত্তবানরা ইতালি, আমেরিকার দিকে তাকান। দেখুন তাদের সম্পদ আছে, কিন্তু সম্পদ ভোগ করার মতো সময় পাচ্ছে না আজ। সবকিছু ছেড়ে আচমকাই চলে যেতে হচ্ছে তাদের। এমনটা যে আপনারও হবে না, তার নিশ্চয়তা কি? তাই সময় থাকতে সম্পদকে কাজে লাগান। অসহায়দের পাশে দাঁড়ান। যাদের যাকাত ফরজ হয়েছে, এখনই যাকাত আদায় করে ফেলুন।
রোজা, দান-সদকার পাশাপাশি বেশি বেশি নফল নামাজ পড়তে হবে। নফল নামাজ আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে গভীর সম্পর্ক গড়ে দেয়। এর মাধ্যমে বান্দার পাপ মুছে যায়। গোনাহ মাফের আরেকটি সহজ উপায় হচ্ছে তওবা। বান্দা যখন তার গোনাহর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত হয়, কায়মনোবাক্যে তাঁকে ডাকে, তখন আল্লাহ বান্দার প্রতি খুশি হন। সদয় হয়ে তাকে ক্ষমা করে দেন।
তবে তওবা কবুলের শর্ত হচ্ছে দৃঢ় অঙ্গীকার করা। বান্দা আর পাপে জড়াবে না, এমন দৃঢ় অঙ্গীকার করলেই আল্লাহ তওবা কবুল করেন।
আমাদের সীমালঙ্গনের কারণেই এমন বিপর্যয় নেমে এসেছে পৃথিবীতে। আল্লাহতায়ালা বারবার সাবধান করে দিয়েছিলেন, হে মানুষ! তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না।
প্রকৃতির সঙ্গে সদয় ব্যবহার করো। কিন্তু মানুষ সে নির্দেশ মানেনি। আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি অনুগ্রহ না করে, প্রকৃতির প্রতি উদার না হয়ে, মানুষ পরিণত হয়েছিল দানবে। সে জন্যই আজ আমাদের প্রতি আল্লাহ অসন্তুষ্ট হয়েছেন। যার ফলে মানবজাতিকে এই বিভীষিকায় পড়তে হয়েছে।
তাই আসুন আমরা ওয়াদাবদ্ধ হই, একে অন্যের প্রতি সদয় হবো। সৃষ্টির সেবক হবো। যেন আল্লাহ তায়ালা মুক্তির এ রমজান মাসে আমাদের করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করেন।
ভয়কেজয় করতেই রমজান
সৈয়দ মুকসিত