বিয়ে বিলম্ব হওয়ার কারণে জিনায় জড়িয়ে গেছে কিভাবে জিনা থেকে ফিরবে
বিবাহ বিলম্ব হওয়ার কারণে জিনায় জড়িয়ে গেছে এমন বোন কিভাবে জিনা থেকে ফিরে আসবে? এক বোনের প্রশ্ন- কোন এক মেয়ের পরিবার তার বিবাহের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ফলে মেয়েটি ইতোমধ্যে জিনায় জড়িয়ে গেছে। কিন্তু মনে মনে সে খুব অনুতপ্ত। সে এ হারাম কাজ থেকে ফিরে আসতে চাচ্ছে কিন্তু পারছে না। ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে তার কী করণীয় রয়েছে দয়া করে জানাবেন। উল্লেখ্য যে, সে ৫ ওয়াক্ত নামাজ নিয়মিত আদায় ও ইসলামের অন্যান্য বিধান পালন করে থাকে।
নি:সন্দেহে জিনা-ব্যভিচার অত্যন্ত জঘন্য কবিরা গুনাহ (মহাপাপ)। কুরআন ও হাদিসে এর ভয়াবহতা সম্পর্কে অনেক বক্তব্য এসেছে। ইসলামে ফৌজদারি আইন অনুযায়ী জিনাকারির শাস্তি – বিবাহিত হলে মৃত্যুদণ্ড আর অবিবাহিত হলে বেত্রাঘাত। তাই ইসলামে জিনার কাছে যেতেও কঠিন ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
যাহোক তারপরও কেউ যদি শয়তানের প্ররোচনা এবং দুর্বল চিত্তের কামনার বশবর্তী হয়ে এহেন জঘন্য অপকর্মে লিপ্ত হয়ে যায় তাহলে তার করণীয় হল, তৎক্ষণাৎ মহান রবের দরবারে ভুল স্বীকার করে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আর কখনো তাতে লিপ্ত হবে না বলে অঙ্গীকার করা। সেই সাথে বেশি বেশি নেকির কাজ করা। তাহলে দয়াময় আল্লাহ তার এই গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।
জানা প্রয়োজন যে, মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল; তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করতে চান। তাই তিনি অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। যেমন, ইমাম মুসলিম রহ. আবু মুসা আশয়ারী থেকে বর্ণনা করেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا
“আল্লাহ দিনের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। (তিনি এরূপ করতেই থাকেন) যে পর্যন্ত না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় (তথা কিয়ামত পর্যন্ত)।”
[সহীহ মুসলিম। অনুচ্ছেদ: গুনাহ থেকে তওবা করলে তা কবুল হওয়া যদিও বারবার গুনাহ সংঘটিত হয়, হা/৪৯৫৪, শামেলা]
তওবার মাধ্যমে গুনাহ সমূহ কেবল মোচন করা হয় না বরং সেগুলো নেকীতে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِلَّا مَنْ تَابَ وَآمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَٰئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ
“কিন্তু যারা তওবা করে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহ গুলোকে নেকী দ্বারা পরিবর্তিত করে দিবেন।”
(সূরা আল ফুরকান: ৭০)
উক্ত বোনটির জন্য কতিপয় করণীয় (পরামর্শ):
১. আল্লাহ তাআলাকে ভয় করে খাঁটি অন্তরে দৃঢ়ভাবে তওবা করা।
২. আখিরাতের ভয়াবহ শাস্তির কথা চিন্তা করা।
৩. শয়তানী চিন্তা মাথায় আসলে আল্লাহর নিকট শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা (তথা আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়ত্বানির রাজীম পাঠ করা।)
৪. যেখানে গেলে বা যে কাজ করলে জিনায় জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছেে সেখান থেকে দূরে অবস্থান করা।
৫. নফল রোযা রাখা
৬. রোযার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদতে ইবাদতে অধিক মনোযোগী হওয়া। যেমন, অধিক পরিমানে নফল সালাত, দুআ, যিকির, ইস্তিগফার, তাসবীহ, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি।
৭. ইসলাম সম্পর্কে প্রচুর পড়াশুনা করা এবং কুরআন মুখস্থ করা।
৮. দুনিয়াবি উপকারী কাজে ব্যস্ত থাকা।
৯. বাড়ির গৃহস্থালীর কাজে যথাসাধ্য সাহায্য করা।
১০. যথাসম্ভব একাকী না থাকা।
১১. একাকী বাইরে না যাওয়া।
১২. একান্ত জরুরি কাজে বাইরে যেতে হলে পূর্ণ পর্দা সহকারে যাওয়া এবং সুগন্ধি ব্যবহার ও সাজসজ্জা পরিত্যাগ করা।
১৩. পরপুরুষদের নিকট উঠবস, নিষ্প্রয়োজনীয় কথাবার্তা, হাসিতামাশা ইত্যাদি থেকে দূরে থাকা।
১৪. যথাসম্ভব পরপুরুষ থেকে চোখ নিচু রাখা।
১৫. প্রয়োজনে ফোন বা নেট ব্যবহার থেকে দূরে থাকা (সাময়িকভাবে) বা এগুলোর ব্যবহার খুব সীমিত করা ইত্যাদি।
১৬. গানবাদ্য থেকে দূরে থাকা।
১৭. পর্ণ ও রোমান্টিক ফিল্ম না দেখা বা এ জাতীয় গল্প-উপন্যাস না পড়া ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, পিতামাতা যদি কন্যার বিবাহের ক্ষেত্রে অবহেলা প্রদর্শন করে আর এতে করে সে যদি অন্যায় কর্ম করে বসে তাহলে ঐ পিতামাতাও গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে না বরং তারাও এর জন্য গুনাহগার হবে। আর তারা যদি তার অপকর্ম সম্পর্কে জেনেও তাকে বাঁধা না দেয় এবং এ পথ থেকে ফিরানোর উদ্যোগ না নেয় তাহলে তারা দাইয়ূস হিসেবে পরিগণিত হবে। আর হাদিসের ভাষায় দাইয়ূস জান্নাতে প্রবেশ করবে না।
আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করুন।
আমীন।